Home / চাঁদপুর / দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে চাঁদপুরের মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে কেনাকাটা
দুর্গাপূজাকে

দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে চাঁদপুরের মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে কেনাকাটা

আসন্ন দুর্গাপূজা কে সামনে রেখে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের দোকানগুলোতে শুরু হয়েছে পুজা উপলক্ষে পোশাকের বেচা-বিক্রি। তবে ক্রেতাদের জন্য খারাপ খবর হলো এবছর বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে পুজার পোশাকে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ অধিক মূল্য খরচ করতে হবে।

চাঁদপুর শহরের প্রধান প্রধান মার্কেট হাকিম,চাঁদপুর টাওয়ার, সাউত প্লাজা, হকার্স মার্কেট, পুরবি মার্কেট, ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্সে, কালিবাড়ি, মীর শপিং কমপ্লেক্স চাঁদপুর পৌর মার্কেট সহ সকল মার্কেট গুলোতে ঘুরে একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়। অন্য সময়ের চাইতে চওড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পুজার পোশাক।

শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার পাইকারি মার্কেটগুলো থেকে পন্য পাইকারী ক্রয় করতে গেল সেখানে তাদের প্রতিটি পণ্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এক থেকে দেড়শ টাকা বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। বিভিন্ন, ব্যান্ড ও পোশাকের মান বিবেচনায় কোন কোন পোশাকে পাইকারি মূল্যই বেড়ে হাজার বারোশ টাকা। দোকানীরা জানান, কোন মাল আমরা ৫০ টাকা কমে কিনতে পারলে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু মূল জায়গাতেই তো দাম বেড়েছে। আমরা বেশি টাকায় পন্য কিনে কম দামে বিক্রি করা তো সম্ভব না। পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় অনেক দোকানে আসা ক্রেতার পোশাক দেখে দরদামে মিল না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের দাবি কোন পন্য পঞ্চাশ একশ টাকা বেশি হলে তবুও আমাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে কিন্তু পাঁচশ টাকার পোশাক যদি সাতশত টাকা চাওয়া হয় তখন আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যায়।

চাঁদপুর শহরের মার্কেট ও আশেপাশে বাজার গুলোতে ঘুরে ক্রেতাদের সাথে বলে জানা যায়, পূর্বে যেসকল থ্রি-পিস বিক্রি হতো ৫০০ টাকা একই থ্রি-পিস এখন আমাদের কিনতে হচ্ছে সাতশ আটশ টাকায়। মান বেধে সাতশ টাকার থ্রি-পিস নয়শ টাকা এক হাজার টাকার থ্রি-পিস বারোশ টাকা এবং বারোশ টাকার থ্রি-পিস কিনতে হচ্ছে পনেরোশ টাকা থেকে ষোলোশ টাকায়। পুর“ষদের পোশাকেও একই দৃশ্য গত বছর যে শার্টগুলো বিক্রি হতো তিনশ পঞ্চাশ টাকা থেকে চারশ টাকা এবছর সেগুলো কিনতে হচ্ছে ছয়শ টাকায়। কিছুটা ভালো মানের শার্ট কিনতে যেখানে খরচ করতে হতো আটশ থেকে ১ হাজার টাকা সেখানেই শার্ট কিনতে খরচ করতে হচ্ছে বারোশো থেকে ষোলশো টাকা। পাঁচশত টাকার পাঞ্জাবী ছয়শ থেকে সাতশ টাকা এবং সাতশ পঞ্চাশ টাকার পাঞ্জাবী বিক্রি হচ্ছে নয়শত টাকায়। চারশ পঞ্চাশ টাকার লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ছয়শ টাকায়। বাচ্চাদের পোশাকেও একই দৃশ্য তিনশত পঞ্চাশ টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে পাঁচশত পঞ্চাশ টাকারও বেশি, বয়স ও মান বেধে ছয়শ টাকার পোশাক ৮ পঞ্চাশ এবং বারোশ টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে পনেরোশ টাকায়। বিভিন্ন বয়সের মানুষের জুতাতেও তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে দাম। পূর্বের দামের চেয়ে প্রতি জোরা জুতায় দুই থেকে তিনশ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
মনেরেখো স্টোরের মালিক দেবুসাহা বলেন, ‘যা ভিড় দেখতেছেন, এইডা হুদাই। এমনি ঘুরতে আসছে। আমাগো বিক্রি অহনো শুর“ হয় নাই। আর দুই একদিন পর কেনাবেচা পুরাদমে শুরু হইবো।’ তবে পুজার জন্য পোশাকের বিশেষ সংগ্রহ তারা দোকানে তুলে ফেলেছেন জানিয়ে বলেন, এবারের পুজার পোশাক আমার দোকানে পর্যাপ্ত রয়েছে কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী সবধরনের পোশাক আমার কালেকশনে আছে।

বিউটি স্টোরের পরিচালক অমর দাস জানান, আমরা যেখান থেকে মাল পাইকারি ক্রয় করি সেখানেই প্রতিটি পন্যের দাম বেড়েছে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা এ কারনেই অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রতিটি পন্য কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের। মোকামে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদেরকে পন্যের ক্রয়মূল্য অনুপাতে বিক্রি করতে হচ্ছে।

শহরের কালিবাড়ির বিজয়ীনি বস্রালয়ের মালিক শমির সাহা বলেন, এবারের পুজার বেচা বিক্রি শুর“ হয়েছে, তবে এখনও পুরাপুরি মানুষ নামেনাই আগামী দু একদিনের মধ্যে আশারাখি বিক্রি জমে উঠবে, গেছে বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম একটু বেশি বলেও তিনি জানান।

দুই মেয়ের জন্য থ্রি-পিস কিনতে আসা রত্না সরকার জানান, সেলাই করার জন্য মেয়েদের পোশাক কিনতে হয়। এবছর থ্রি-পিস কিনতে এসে দোকানদাররা অনেক বেশি দাম চাচ্ছে, কয়েক দোকানে ঘুরে দেখেছি দোকানদাররা অধিক মূল্য চাওয়ার কারনে এখনো কিনিনি। পোশাকের দাম এক-দেড়শ দুইশ টাকা বেশি হলেও আমাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে আঠারোশ-দুই হাজার টাকার থ্রি-পিস দোকানদার চাচ্ছে পঁচিশ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা। পোশাকের দাম এমন দুরমূল্য হলে তো আমাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে না।

এদিকে বাজারের নিত্য পন্যের দাম স্মৃতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল শহরের বাজারে তদারকি ও অভিযান পরিচালনা করছেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দলটি এসময় বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে ঘুরে ত্রিশ শতাংশের বেশি লাভে পন্য বিক্রি না করার জন্য বলেন এবং অতিরিক্ত লাভে পন্য বিক্রির সুনির্দষ্ট অভিযোগ পেলে নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হবে এই মর্মে ব্যবসায়ীদের সর্তক করেন।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ১৭ অক্টোবর ২০২৩