একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। লন্ডন সফরে গিয়ে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে এমন সিদ্ধান্তেই নাকি পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া।
দুই পুত্রবধূ দুটি আসন থেকে লড়লেও খালেদা জিয়া একাই লড়বেন তিনটি আসন থেকে। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে কিছুতেই নির্বাচনে যাবে না বিএনপি—এমন সিদ্ধান্ত থেকে এখনো সরেনি। এ বিষয়ে খালেদা ও তারেকের মতামত এক ও অভিন্ন।
তার পরও বর্তমান কাঠামোর অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়ে জোট ও জোটের বাইরে দলগুলোর মতামতের ওপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাই প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে দলের শীর্ষ দুই নেতার মাঝে। এমনটাই জানা গেছে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী সূত্রে।
লন্ডন সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনের আগেই যে কোনো মামলায় খালেদার সাজা হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তার দুই পুত্রবধূ সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। যেহেতু তারেক রহমান শিগগিরই লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে পারছেন না, সেহেতু বাস্তবতার প্রয়োজনেই আগামী নির্বাচনে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার বিষয়ে খালেদা-তারেক দুজনই একমত।
ডা. জোবায়দা রহমান ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে রাজনীতিতে জড়াতে অনাগ্রহী ছিলেন, পাশাপাশি তারেকও তা চাইছিলেন না। দলের প্রধান মা খালেদা জিয়ার আগ্রহ এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত তারেক রহমানও এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হন। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে কে কোন আসন থেকে লড়বেন—এ বিষয় নিয়েও আলোচনা হয় শীর্ষ দুই নেতায়।
জানা যায়, খালেদা জিয়া ২০০৮ সালে যেসব আসনে নির্বাচন করেছিলেন এবারও সে আসনগুলো থেকেই নির্বাচন করবেন বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে দুটি আসন চূড়ান্ত হলেও বাকি একটির বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। ফেনী-১ ও বগুড়া-৭ থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও তৃতীয় আসনটির ব্যাপারে এখনো একমত হতে পারেননি মা-ছেলে।
তবে খালেদার তৃতীয় আসনটি হবে খোদ রাজধানী ঢাকায়, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। রাজধানীর যে দুটি আসনে খালেদার নির্বাচন করার বিষয়ে জোর আলোচনা আছে সে দুটি আসন হচ্ছে ঢাকা-৪ ও ঢাকা-১৮। ১৯৯১ সালে ঢাকা-১৮ ও ২০০১ সালে ঢাকা-৪ আসন থেকে নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন।
নতুন নির্ধারিত সীমানার আলোকে এ আসন দুটির আগের দুই প্রার্থীও এবার নির্বাচন করতে চান। তবে ঢাকা-৪ আসনে সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন বরাবরই বলে আসছেন এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন খালেদা জিয়া।
এ বিষয়ে মহানগর দক্ষিণের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সালাউদ্দিনের ছেলে রবিন বলেন, ‘আমরা আশা করি আগের মতো এবারও দলের চেয়ারপারসন এখানে নির্বাচন করবেন। সেজন্য আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ঢাকা-১৮ আসনের রাজনীতি এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে।’
সূত্র জানায়, ঢাকা-১৮ আসন এলাকায় মনোনয়ন চাইছেন দুইবারের এমপি মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, যুবদল ঢাকা উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর এবং একজন তরুণ ব্যবসায়ী নেতা মো. বাহাউদ্দিন সাদী। সাবেক এমপি মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম রাজনীতিতে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও এবারও মনোনয়ন চান।
অন্যদিকে শতাধিক মামলা নিয়ে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন এস এম জাঙ্গাঙ্গীর। তবে, আরেক প্রার্থী বাহাউদ্দিন সাদী মনোনয়নের ব্যাপারে জানান, ‘আমাদের এখান থেকে ম্যাডাম নিজেই নির্বাচন করবেন—এটি ঘোষণা হওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লন্ডনের একটি সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে সহায়তা করতে দেশে আসবেন খালেদার দুই পুত্রবধূ। তারেক রহমানের শূন্যতা পূরণ করতে তারেক পত্নী ডা. জোবায়দা রহমানকে দিয়ে সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করানোর সম্ভাবনা বেশি। এর বাইরে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সিঁথিকে দিয়ে নির্বাচন করাতে পারেন মাগুরা-১ আসন থেকে।
সিলেট বিএনপির স্থানীয় নেতারাও চান তারেকপত্নী সিলেটি মেয়ে জোবায়দা সেখান থেকে নির্বাচন করুক। জোবায়দা রহমানের পারিবারিক ইমেজ ছাড়াও তার রয়েছে ব্যক্তিগত ‘ক্লিন ইমেজ’।
অনেকে মনে করেন, জোবায়দাকে নামালে সিলেট বিভাগেই নয়; জাতীয় নির্বাচনেই বড় ধরনের সুবিধা পাবে বিএনপি। জোবায়দার রাজনীতিতে আসার প্রতি আগ্রহ না থাকলেও ‘মা ও ছেলে’র বিশেষ নির্দেশনায় তিনিও নামছেন রাজনীতিতে।
এ বিষয়ে সিলেট বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, আমরা চাই জিয়া পরিবারের কেউ সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করুক। আমাদের নেতা তারেক রহমানের স্ত্রী যদি এখান থেকে নির্বাচন করেন তাহলে সোনায় সোহাগা। আমরা অধীর হয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছি।’
অন্যদিকে মাগুরা থেকে প্রয়াত কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি নির্বাচন করবেন এমনটা শোনা যাচ্ছিল বিগত দিনে। সূত্রমতে, সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাগুরা-১ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে লড়তে পারেন তিনি। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সিঁথির নাম এখনো ফলাও করে চাউর না হলেও তাকে ঘিরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে উচ্ছ্বাস।
সিঁথির মাথির প্রার্থিতার বিষয়টি দলীয় ও পারিবারিকভাবে অনেক দূর এগিয়েছে।
সিঁথি প্রার্থী হলে দলের সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা তাকেই সমর্থন দেবেন। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিঁথির পক্ষে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন। ফলে এ আসনে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত হবে।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, আমরাও সিঁথির মনোনয়নের ব্যাপারটি শুনেছি। এমনটা হলে আমরা মাগুরাবাসী আনন্দিতই হব এবং তাকে বিজয়ী করে আনব ইনশাআল্লাহ।’ (পূর্বপশ্চিমবিডি)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১: ৫০ পিএম, ৯ আগস্ট ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ