চাঁদপুর

দু’কমিটির দ্বন্দ্বে চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে ভক্তদের ওপর হামলা

দু’কমিটির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র্র করে চাঁদপুরে অযাচক আশ্রমে সাধক স্বামী স্বরূপানন্দের জন্মোৎসবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নারীসহ সাধারণ ভক্তদের উপর হামলার খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়াও তাদের স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় একজন সাংবাদকর্মী সহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়। আহতরা হলেন, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জয়ন্ত সেন, বাংলাদেশ অখন্ড সংগঠনের উপদেষ্টা ও চাঁদপুর জেলা শাখার সহ- সভাপতি অজয় দাস, সাধারণ ভক্ত সুভাষ চন্দ্র পাল, গৌরী সংঙ্কর দেবনাথ, রতœা চৌধুরী, রবিন্দ্র পোদ্দার, দুলাল ভৌমিক, দিপক পাল, নমিতা রাণী, স্বপ্না রাণি, উত্তমা রায়, আলপনা, কমলা রাণি, অটল দাস।

আহতরা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, বি-বাড়িয়া, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতি বছলের ন্যায় এবারও উৎসবের এসেছিলো বলে জানান।

এ ঘটনার পরে অসহায় ক্ষুব্ধ প্রায় দু’শাতাধিক সাধারণ ভক্তবৃন্দ চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় এবং চাঁদপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও প্রেসক্লাব বরাবর অভিযোগ পত্র দেন।

অভিযোগ পত্রে তারা উল্লেখ করেন, সাধক স্বামী সরূপানন্দের বার্ষিক জন্ম উৎসবের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্তরা ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সমবেত উপাসনা সম্পন্ন করে। পরে কবিরাজ সুখরঞ্জন বম্মচারী ও তাপস সরকার মাইকে ঘোষনা করেন ‘বাংলাদেশ অখন্ড সংগঠনের সকল সদস্যকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে আশ্রম থেকে বের করে দাও’।

সঙ্গে সঙ্গে সুধাংশু সূত্রধর, অঞ্জণ দাস, বিপুল সাহা, মৃণাল কান্তি দাস, দুলাল দাসসহ তাদের শতাধিক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী বাংলাদেশ অখন্ড সংগঠনের পুরুষ ও মহিলাদের মারধর এবং শারীরীক ভাবে লাঞ্জিত করে।

এসময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, মহিলাদের স্বর্ণালংকারসহ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় এই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে সুনামগঞ্জ থেকে আসা এক সংবাদকর্মীকে সুধাংসু সূত্রধর, কবিরাজ সুখরঞ্জণ ব্রম্মচারী বহিরাগতদের দিয়ে রেললাইনে ফেলে মারধর করে। পরে সাধারণ ভক্তরা এসে তাকে উদ্ধার করে।

অভিযোগ পত্রে আরো উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শত শত ভক্তদের ভারাটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলার জঘন্নতম কর্মকান্ডের বিষয়ে প্রশাসনের কাছে বিচার দাবী করছি। ‘আযাচক আশ্রম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ অখন্ড সংগঠন যৌথভাবে চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের সূচনা লগ্ন থেকে স্বামী সরূপানন্দের জন্মউৎসব পালন করে আসছি’।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ অখন্ড সংগঠনের দেশব্যাপি ১৪৫টি শাখার মধ্যে চাঁদপুর অযাচক আশ্রম একটি অন্যতম শাখা, যা জন্মস্থান কার্যালয় নামে পরিচিত।

বাংলাদেশ অখন্ড সংগঠন নামের একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে এ আশ্রমে জন্ম উৎসব করে আসছে। এবছর তাদের নিয়োগ সেবায়েত কবিরাজ সুখরঞ্জণ ব্রাহ্মচারীর নেতৃত্বে ‘চাঁদপুর অযাচক আশ্রম ও বাংলাদেশ সম্মিলিত অখ- সংগঠন’র সেবক সেবিকাবৃন্দ নামের অন্য আরেকটি সংগঠন একই দিনে এবং একই সময়ে ভিন্নভাবে দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

এই আয়োজনকে ঘিরে উভয় পক্ষই ভিন্ন ভিন্নভাবে দাওয়াত পত্র ও অনুষ্ঠানসূচি বিলি করেছে। এতে করে দেশীব্যাপি স্বামী স্বরূপান্দ ভক্তদের মাঝে চাপা ক্ষোভ দেখা দেয়। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে বলে, গত ক’দিন ধরে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে কয়েকদিন আগে দু’ই কমিটির নেতৃবৃন্দকে ডেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট একসাথে উৎসব করার নির্দেশ দেন। এছাড়াও ওই অনুষ্ঠানটি যাতে কোনো ব্যানার বা কোনো সংগঠনের নামে না করা হয় সে নির্দেশনা দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ক’জন ভক্ত জানান, ‘অযাচক আশ্রমের সেবায়েত সুখরঞ্জন বাহ্মচারীর এক চেটিয়া স্বেচ্ছাচারিতায় পূর্বের কমিটিকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করায় বর্তমানে আশ্রমের ভক্তদের মাঝে বিভক্তি দেখা দেয়।’

এ ব্যাপারে আশ্রমের সেবায়েত সুখরঞ্জন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আশ্রমের বদনাম করার জন্য একটি চক্র দীর্ঘদিন থেকে ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারা আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে।’

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সম ৯: ৩০ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share