প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ধরন একই। ঘটনাগুলো পরিকল্পিত। এসব ঘটনায় তাদের (বিএনপি-জামায়াত) হারয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার তদন্ত করছে। তারা ব্যবস্থা নেবে। অপরাধীরা ধরাও পড়বে। তাদের বিচারও হবে।
রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান, চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ ও আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার প্রাপ্তিসহ পুরো সফর নিয়ে গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুইজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হলো। তাদের হত্যার ধরণ একই। এসব হত্যাকাণ্ড খুবই পরিকল্পিত। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, জাপানি নাগরিককে ৪টি গুলি করা হলো। ৪টিই লাগলো। একটিও মিসফায়ার হলো না।’
তিনি বলেন,‘ ইতালিয়ান নাগরিককে হত্যা করা হলো। আর বিএনপির এক নেতার বক্তব্যও বেরিয়ে এলো। এই হত্যাকাণ্ড এবং ওই নেতার বক্তব্যের মধ্যে একটা মিল রয়েছে। আপনারা ঘটনাগুলো মিলিয়ে দেখবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতালিয়ান নাগরিককে হত্যার পর অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট খেলতে এলো না। ওই ঘটনার পর তাদের দেশে দুইজনকে গুলি করে হত্যা করা হলো। তারা এর কী জবাব দেবে? যুক্তরাষ্ট্রে একটি কলেজে গুলি করে ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ওই সব দেশে কী রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে? তারা কী ঘোষণা দিয়েছে?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ ছোট। আমেরিকার একটি স্টেটের সমান। অথচ এখানে আমেরিকার অর্ধেক লোক বসবাস করে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা করতে হয়। তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হয়। সেখানে এ ধরনের ছোটখাটো ঘটনা ঘটতেই পারে।’
তিনি বলেন, দুই বিদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা দেশের মিডিয়া এতো বড় করে দেখলো। কিন্তু আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় যা ঘটলো তা নিয়ে আমাদের মিডিয়া কী সেভাবে সরব হয়েছে। আমাদের মিডিয়া কিন্তু সেই বিষয়টি হাইলাইট করেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ কিছু ঘটলেই আমাদের অর্জনগুলো খাটো করে দেখার চেষ্টা করি। কিছু ঘটলেই হাহাকার পড়ে যায়। আমাদের এই মানসিক দৈন্যতা কেন? আমাদের আরো একটু সহনশীল হতে হবে। দেশের মানুষকে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। ’
তবে এসব ছোটখাটো ঘটনায় তার সরকারের অর্জনগুলো নষ্ট হয়ে যাবে না বলেও দৃঢ়তার সঙ্গে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুই বিদেশি হত্যা যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর রায় বানচালের কোনো ষড়যন্ত্র কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচার করছি। এসব ঘটনা তার রিঅ্যাকশন হতে পারে। আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচার করবো। আর তারা চুপ করে থাকবে কেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে যেসব রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তারা কেউ আমাদের দেশের রাজনেতিক সঙ্কট নিয়ে কথা বলেননি। তারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার সাধুবাদ জানিয়েছেন। কীভাবে এই উন্নতি হলো তা জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ এখন এলডিসির নেতৃত্বে রয়েছে। বৈধতা না থাকলো নেতৃত্ব পেলো কীভাবে?’
তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চিঠি দিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য। বৈধতা না থাকলে কী তারা চিঠি দিতেন?। ব্রিটিশ এমপিদের একটি দল দেশে রয়েছেন। দেশ ঘুরে তারা বলছেন, কোনো সমস্যা দেখতে পাননি। তবে দেশে একটি গ্রুপ রয়েছে। তাদের সঙ্কট রয়েছে। তারা ষড়যন্ত্র করতে থাকবে। তবে যাই কিছু করুক না কেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমার কাছে অগ্রগণ্য থাকবে। আমরা মানুষের খাদ্য, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। মানুষ তার সুফল পাচ্ছে।’
সরকারের রেটিং বা জনপ্রিয়তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার রেটিং যাই হোক। আমার শেকড় হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আমার যা কিছু অর্জন তা আমার দল থেকে। আর সরকার জনগণের। তাই সরকারের রেটিং নিয়ে জনগণ কথা বলবে।’
গাইবান্ধা (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মো. মুঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে সরকার কি পদক্ষেপ নেবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপরাধী যেই হোক না কেনো তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আওয়ামী লীগের কেউ অপরাধ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এর প্রমাণ ইতোমধ্যে আপনারা পেয়েছেন। লিটনের প্রশ্নে বলতে চাই, তার পিস্তলের লাইসেন্স এরইমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। খুব শিগগির তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
দুই বিদেশি হত্যায় আইএস’র সংশ্লিষ্টতা আছে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিকাগো থেকে স্ট্যাটাস এসেছে। এই দু’টি হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও নেই। তাহলে আমরা কেন বিশ্বাস করবো আইএস এ কাজ করেছে। তবে এই দুই হত্যার যোগসূত্র খুঁজে বের করতে হবে।’
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ নেবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের দেখলেই প্রশাসনের কাছে খবর দিন। তাহলে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবো। বিএনপি ও জামায়াত জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িত। তাই জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আর জঙ্গিবাদ দমন করতে হলে তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা যাবে না। এই জন্য সারা বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এদের কোনো ধর্ম ও সীমানা নেই।’
আপডেট: ২:৩৮ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০১৫, রবিবারচাঁদপুর টাইমস-ডিএইচ/২০১৫।