দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য খুব বিপজ্জনক: সিইসি

বড় দুই দলের অনড় অবস্থান, দেশের জন্য খুব বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) আয়োজিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।

দুই দলে অনড় অবস্থান, গণতন্ত্রের লিমিটশনের জায়গা কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ অবস্থানটুকু খুব বিপজ্জনক দেশের জন্য। যদি নির্বাচনে এ অনড় অবস্থার কারণে কোনো বড় দল পার্টিসিপেন্ট না করে, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বলবো তাহলে নির্বাচনের মুল ফলাফলের ওপর একটা ঝুঁকি থাকতে পারে। যেমন বলে থাকে, এটা মানা হলো না। এটা নিয়ে একটা ল’ অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন ক্রিয়েট করা হলো। মানুষ বিপদগ্রস্ত হলো। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। আমি সেটাই বলছি।

তিনি বলেন, আমরা চাই না ওই ধরণের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। সরকারে অধিষ্ঠিত দলের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে আপনারাও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যান বিরোধীদলগুলোকে সঙ্গে নিতে। তারাও যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনটাকে আমরা যেন অবিতর্কিতভাবে তুলে আনতে পারি। পুরো জাতির কাছে নির্বাচনটি যেন গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে ও বিদেশে সেই স্বীকৃতি যেন লাভ করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের লিমিটেশনটা বলতে চাই, আমরা নির্বাচন করবো একোর্ডিং টু প্রবিশন্স অব দি কন্সটিটিউশন। বর্তমানে যেটা বহাল আছে। আমাদেরকে সেভাবে নির্বাচন করতে হবে।

সিইসি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সব রাজনৈতিক দল, প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলো যেন অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে। কারণ, নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে যদি ইফেক্টিভ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হয়, তাহলে প্রত্যাশিত ভারসাম্য সৃষ্টি হবে না।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সেই ক্ষেত্রে সেখানে যে অবাধ নিরপেক্ষ দিকগুলো আমাদের দেশের জন্য এখন প্রয়োজন। আমরা আশা করি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হয়ে দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আমাদের বিভিন্ন দল থেকে বলা হয়েছে তারাও বিশ্বাস করেন একটা সমঝোতা হবে। আমরাও আশাবাদী অবাধ-নিরপেক্ষ উৎসবমুখর পরিবেশে ফলপ্রসূভাবে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন নিয়ে কিন্তু গবেষণা লাগবে। এটাকে আরও বেশি সহজ-সরল গণমুখী কিভাবে করা যায় তা দেখতে হবে।

বৈঠকের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আসলে এটা ছিল অনেকটা একাডেমিক ডিসকাশন। এখানে তারা আমাদের পরামর্শ দেন নাই। আমরাও পরামর্শ দেই নাই। গণতন্ত্রের যে চ্যালেঞ্জ ও লিমিটেশনস, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনে অর্থ ব্যয় গরীব মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ অর্থ ব্যয়টাকে যদি লিমিট করে আরও গণতান্ত্রিক করা যেত, তাহলে ভালো হত। যেটা খুব কঠিন।

সিইসি বলেন, জানতে চাওয়া হয়েছে, আমরা পর্যবেক্ষকদের ওয়েলকাম করি কি-না। পর্যবেক্ষকদের সম্পর্কে উই আর ভেরি ওয়েলকাম। আমরা চাই, ইলেকশনটা যাতে আগামীতে সুন্দর হয়। বিষয় হচ্ছে আমরা ট্রান্সপারেন্সি (স্বচ্ছতা) চাচ্ছি।

সিইসি আরও বলেন, আমরা যদি ট্রান্সপারেন্সি চাই তাহলে অবজারভার লাগবে। মিডিয়া লাগবে। মিডিয়া যদি সেখানে অবজেক্টিভলি রিপোর্টিং করে থাকে, তাহলে সেখানে স্বচ্ছতা অনেক বেশি নিশ্চিত হতে পারে। স্বচ্ছতার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষকদের জন্য একেবারে উন্মুক্ত। আমাদের আগামী নির্বাচন শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে সেটা আমরা দেখাতে চাই।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হবে কি-না সেটার নিরসন এখনও হয়নি। এ প্রশ্নে দুটো দল এখনও অনড় অবস্থানে আছে।

ইএমএফ-এর সঙ্গে বিকেল ৫টা থেকে সোয়া ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সিইসি ছাড়াও অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইএমএফ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী, নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালা নাথ খানাল, জার্মানির জিবিপি ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভলকার ইউ ফ্রেডরিচ উপস্থিত ছিলেন।

বার্তা কক্ষ, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Share