দিন-রাতে ১২ ঘণ্টাই থাকছে না বিদ্যুৎ

লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। অনেক এলাকায় দিন-রাতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টাই থাকছে না বিদ্যুৎ। তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন থাকায় বাড়ছে ভোগান্তি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল তিন মাস ধরে বন্ধ থাকায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে। এতে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। বকেয়ার কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনও কম হচ্ছে। এসব কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

সূত্রমতে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ১৪ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৪৪৪ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৯ মেগাওয়াট। গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট। এ জন্য গ্যাস প্রয়োজন ২২০ কোটি ঘনফুট। ১৩০ কোটি ঘনফুট হলে পরিস্থিতি মোটামুটি সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু সামিটের এলএনজি টার্মিনাল চালু না হওয়ায় দিনে গ্যাস সরবরাহ কমেছে ৬০ কোটি ঘনফুট। গতকাল বিদ্যুতে গ্যাস দেওয়া হয় ৮৫ কোটি ঘনফুট।

উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং বাড়বে ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটই বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিদ্যুৎ রংপুর অঞ্চলের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখত। পাশাপাশি ভারতের আদানি থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। এতেও উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে। উত্তরের ১৬ জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ ও নেসকো মিলে বিদ্যুতের চাহিদা ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু দু’দিন ধরে দুপুরে সরবরাহ মিলছে মাত্র ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ মেগাওয়াটের কম বিদ্যুৎ।

রাজশাহী বিভাগে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সরবরাহ কম থাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

খুলনায় বন্ধ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র
গ্যাস সরবরাহ না থাকায় জ্বালানি তেল দিয়ে উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় খুলনায় বন্ধ রয়েছে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে উৎপাদন হচ্ছে না প্রায় ৬৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ১৮ আগস্ট থেকে ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ২৮ আগস্ট থেকে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। আর ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে এক বছর ধরে।

আদানির চিঠি
বিদ্যুতের বিলের ৮০০ মিলিয়ন ডলার দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি দিয়েছেন গৌতম আদানি। গতকাল ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করায় ঋণদাতারা আমাদের ওপর কঠোর হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পাওনা ৮০০ মিলিয়ন ডলার দ্রুত ছাড় করতে আপনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি। বিলগুলো নিয়মিত এবং এখনকার পাওনাগুলো প্রতি মাসের বিলের সঙ্গে পরিশোধের অনুরোধ করছি।’

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার ১৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র গত বছরের জুন থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি গ্রুপ।

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Share