শর্ট ভিডিও শেয়ারিংয়ের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম টিকটকের জন্য ভিডিও বানিয়ে বেশ ফ্যান-ফলোয়ার কামিয়েছেন চার বন্ধু। প্রতিটি ভিডিওতে নতুন নতুন পোশাক আর বাহারি সাজে তাদের দেখা যায়। প্রথম দেখায় মনে হবে ধনীর বখে যাওয়া সন্তান। কিন্তু বাস্তবে তারা দুর্ধর্ষ চোর। গোয়েন্দা পুলিশের জালে ধরা পাওয়ার আগে কেউ কখনো ঘুণাক্ষরেও জানতেন না তাদের এই অপকর্ম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—হযরত আলী (২৫), মো. শিমুল ইসলাম লিটন (২৪), মো. শরিফ (১৪), মো. হৃদয় (১৪)। তাঁদের সবার বাড়ি বনানীর কড়াইল বস্তিতে।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি রাজধানীর বনানীর এইচ ব্লকের সাত নম্বর রোডের ‘শিখবে সবাই সলিউশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে দুর্ধর্ষ চুরি করে এই চক্র। রাত সোয়া ৩টার দিকে জানালার গ্রিল কেটে অফিসে প্রবেশ করে চক্রের তিন সদস্য। আর একজন পাহারায় থাকে বাইরের রাস্তায়।
চক্রের তিন সদস্য অফিসের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে ল্যাপটপ এবং নগদ অর্থ চুরি করে। ৩টা ৩৬ মিনিটে মালামাল নিয়ে বের হয়ে যায় তারা। এর মধ্যে একজনকে খুশিতে নাচতে নাচতে বের হতে দেখা যায়। এই ঘটনার মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে টিকটকে নিত্যনতুন সাজে হাজির হওয়া এই চক্রের চার সদস্যের চাঞ্চল্যকর চুরির তথ্য।
গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে চক্রের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা মূলত রাতে চুরি করেন, আর দিনে টিকটক ভিডিও তৈরি করেন। গ্রেপ্তার শহীদের দোকানে বসে ওই চুরির পরিকল্পনা করেন তাঁরা।
গ্রেপ্তার চক্রের সদস্য শহীদ পুলিশকে জানান, তাঁর দোকানে বসে চুরির পরিকল্পনা করা হয়। পরে অফিসের গ্রিল কেটে প্রবেশ করে অফিসে থাকা ২৪টি ল্যাপটপের মধ্যে চারটি ও নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বেরিয়ে যান তাঁরা। ল্যাপটপ বিক্রি ও নগদ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন।
এই চার তরুণের বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘চক্রটি অনেক দিন ধরেই চুরি, ছিনতাই এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই কাজগুলো করে তারা লাইকি ও টিকটক ভিডিও বানায়। এখানে যে টাকা প্রয়োজন তা মেটানোর জন্যই বিভিন্ন অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রিল ভেঙে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায় এবং সেগুলো খুবই অল্প দামে বিক্রি করে দেয়।’
বাসা বাড়ির নিরাপত্তার বিষয় মশিউর রহমান বলেন, ‘যেসব বাসা-বাড়ি কিংবা অফিসে মূল্যবান জিনিসপত্র থাকে কিন্তু রাতে কোনো গার্ড থাকে না; সেসব জায়গায় সিসিটিভির পাশাপাশি নিজেদের নজরদারি থাকা উচিত। কারণ এসব বাসাবাড়ি ও অফিস চোর ও ডাকাতেরা টার্গেট করে।’