উচ্চ আদালতে নির্দেশে বন্ধ হওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সকল সার্টিফিকেট অবৈধ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ওই সময়ের পর যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখা থেকে সার্টিফিকেট পেয়েছেন তাদের সনদের অনুমোদন দিবে না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
একই সঙ্গে ২০০৬ সালের পর সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরিরতদের ব্যাপারে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, উচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের আলোকে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ । দারুল ইহসান কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আপাতত: এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
সনদ নিয়ে চাকরি করছেন যারা তাদের কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘যারা তাদের চাকরি দিয়েছেন তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০০৬ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়কে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তখনই এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো শাখাতেই ভর্তি না হওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল। মঞ্জুরি কমিশনের সকর্তকতা অনেকেই আমলে না নিয়ে সেখানে ভর্তি হয়।
এখন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে বৈধ শিক্ষার্থীরা চাইলে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর হতে পারবে। সে বিষয়ে ইউজিসি’র পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হবে। নানা অনিয়ম, সার্টিফিকেট বিক্রি ও ব্যঙ্গের ছাতারমতো অবৈধ ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ২৫ জুলাই হাইকোর্ট দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধের আদেশ দেন। এ আদেশের প্রেক্ষিতেই ২৬ জুলাই শিক্ষামন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ১শ’৩৫টি ক্যাম্পাসের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান বলেন, যেসব শিক্ষার্থী ২০০৬ এর আগে ভর্তি হয়ে পাস করেছে এবং সার্টিফিকেট পেয়েছে তাদের সার্টিফিকেট বৈধ বলে গণ্য হবে। ২০০৬ এর পরে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের সার্টিফিকেট বাতিল গণ্য হবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা চাইলে ক্ষতিপূরণের জন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন। ২৬ জুলাই হাই কোর্টের রায়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্যদের চার গ্রুপেই গা-ঢাকা দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণার পরের দিনই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের মালিক পক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করতে পারবে। ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকার তাদেরকে সহযোগিতা করবে।
এ ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে বলেও তিনি জানান। আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, আমরা জেনেছি বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪টি গ্রুপ মালিকানা দাবি করে আসছিল। ৪টি মালিক পক্ষের ১শ’৩৫টি ক্যাম্পাস রয়েছে। যে মালিকের আওতায় যে শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে তারা ওই মালিকদের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিন বলেন, কোর্টের রায়ের যেসব পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সব মানা হবে। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে ইউজিসি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যত্রুম বন্ধ করার পরও যারা এখানে ভর্তি হয়েছে তার দায় তাদের নিতে হবে। দারুল ইহসান হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে। সেই কপি এখানো আমাদের কাছে আসেনি। আসলে আমরাও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি নেবো।
এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে যেসব শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য কোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে এসব শিক্ষার্থীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির সারা দেশে ১শ’৩৫টি ক্যাম্পাসে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি ছিল। (উৎস- মানবজমিন)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৯:৫০ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ