Home / জাতীয় / অর্থনীতি / তেলের পর দাম বেড়েছে চাল ডাল পেঁয়াজ ছোলা চিনিরও
তেলের

তেলের পর দাম বেড়েছে চাল ডাল পেঁয়াজ ছোলা চিনিরও

তেলের পর চাল-ডাল, চিনি, আদা-রসুন ও মাছ-মাংসের দামও বেড়েছে। এসব পণ্য কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে আসছে রমজান। এ মাসে অতিব্যবহৃত পণ্য-ছোলা ও খেজুরের দামও বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজার গুটিকয়েক মহাজনি প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি। সুযোগ পেলে প্রায়ই এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিক মুনাফা হাতিয়ে নেন। মোকাম ও মিল থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সরবরাহ চেইনে ভাটা পড়ে। ফলে মোকামে বা মিলগেটেই বেড়ে যায় সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, কোন পণ্যে কারা দাম বাড়ায় সরকারের উচিত হবে তা চিহ্নিত করা। একই সঙ্গে কোন স্তর থেকে কতটা বাড়ানো হয় তার যৌক্তিক পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সরকার এখানে কতটা মনিটরিং করছে সেটি বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, ভোক্তাসাধারণকে মূল্যের নিরাপত্তা দিতে নিত্যপণ্যের মূল্য কারসাজির সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অবৈধ মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। নতুবা অকারণে অথবা রমজানের হুজুগে দাম বৃদ্ধির এ প্রতিযোগিতা কখনোই রোধ করা যাবে না।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত দুই মাসের ব্যবধানে রমজাননির্ভর পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি ছোলায় ৫-৭ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি চিনি ৫-৬ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে সর্বাচ্চ ৩০ টাকা বেড়েছে। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল ১০ টাকা ও ছোট দানার মসুর ডালে ৫-৮ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি কোনো কারণ ছাড়াই কেজিপ্রতি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুরে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি বড় দানার মসুর ডাল ১০০-১০৫ ও ছোট দানা ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। এছাড়া চিনি ৮০-৮৫, প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৮০-২০০ এবং সাধারণ মানের প্রতি কেজি খেজুর ৩৫০-৩৭০ টাকা।

মঙ্গলবার প্রতি কেজি সরু চাল ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা দুই মাস আগে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ছিল ৪৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৬৫ টাকা। যা আগে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ৬০০ ছিল টাকা। প্রতি কেজি দেশি আদা ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ছিল ১২০ টাকা। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। যা আগে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি একাধিক সবজি দুই মাসের ব্যবধানে বাড়তি টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে রাজিব নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের বাড়তি দাম। আয়ের তুলনায় ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে রোজায় বাজার কোনোভাবেই স্বস্তিদায়ক থাকবে না।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-দেশে রোজার পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি ও মজুত রয়েছে। দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। তারপরও দফায় দফায় দাম বাড়ছে। এ নিয়ে ভোক্তার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যবসায়ীদের ডেকে বৈঠক করে রমজানে পণ্যের দাম না বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাজার মনিটরিংও জোরদার করা হয়েছে।

প্রতিবছরই রমজানের আগে এভাবেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিদের দফায় দফায় বৈঠক হয়। দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়। দেওয়া হয় প্রশাসনিক হুশিয়ারিও। কিন্তু তারপরও দাম বাড়ানো আটকানো যায় না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। তবে পেঁয়াজের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কতটা বেড়েছে সেটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ভোজ্যতেল নিয়েও কারসাজি চলছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে কেউ বিক্রি করছে না। অভিযান পরিচালনা করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ব্যবসায়ীদের তলব করে কথা বলেছি। সব ধরনের মনিটরিং কার্যক্রমও জোরদার করা হয়েছে। অসাধুতা করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।