মেয়েদের ক্ষেত্রে আইনত: বিয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর। এর কম বয়সী কারো বিয়ে হলে তা বাল্যবিয়ে বলে বিবেচিত হবে।
মেয়ে এবং ছেলে উভয়ের উপরই বাল্যবিয়ের প্রভাব পড়ে। তবে মেয়েরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মেয়েদেরই বেশি বাল্যবিয়ের শিকার হতে হয়। বেশিরভাগ বাল্যবিয়েতেই দু’জনের মধ্যে শুধু এ একজনই অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে।
বাল্যবিয়ের কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দরিদ্রতা, কুসংস্কার ও অজ্ঞতা। অনেক পরিবার ভাবে মেয়েরা উপার্জনে অক্ষম,দ্রুত বিদায় করলেই ভালো। অনেকে অবশ্য নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করে না।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের একটি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৩ % করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তাদের এলাকায় বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ১১ টি জেলার ৫৫৭ জন সাক্ষাৎকারদাতার ৭২ জন এ সময়ে ৭৩টি বাল্যবিয়ের ঘটনা দেখেছেন।
এসব বাল্যবিয়ের ৮৫ % হয়েছে সঙ্কটকালে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণে। ৭১ % বিয়ে হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়।
করোনাভাইরাস সঙ্কটে বিদেশ থেকে ফেরত আসা পাত্র পাওয়ায় ৬২ % শিশুর পরিবার বিয়ে দিতে আগ্রহী হয়েছে। ৬১ % বিয়ে হয়েছে অভিভাবকের সীমিত উপার্জনের কারণে।
সুতরাং যতটুকু অর্জন ছিল বাল্যবিয়ে বন্ধে,তার অনেকটাই ভেঙে পড়ে মহামারির থাবায়। তাই এটিকেও আরেক মহামারি বলা হচ্ছে। যার প্রভাব দীর্ঘসময় ধরে বইতে হবে আমাদের।
আমার মতে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মেয়েদের নানাভাবে এগিয়ে রাখতে হবে। তাকে সাবলম্বী ও শক্তিশালী করে তুললে সে লড়াই করতে পারবে। এছাড়া শিক্ষা পদ্ধতি এমন হওয়া প্রয়োজন যেন শিক্ষা শেষে চাকরির নিশ্চয়তা থাকে।
উন্নয়ন সংস্থাগুলো পৃথকভাবে কাজ করে। সরকারের উচিত তাদেরকে সাথে নিয়ে একত্রে কাজ করা। এতে ব্যাপক গুরুত্ব পাবে উদ্যোগগুলো।
সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবারই বাল্যবিয়ে রুখতে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ তো নিশ্চিত করতে হবেই। বাল্যবিয়ের সাথে যারাই জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে আর কেউ সাহস না পায় এ ধরনের অন্যায়ে লিপ্ত হতে।
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজী, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি, প্রতিবেশি এবং জনপ্রতিনিধিদেরও সজাগ থাকতে হবে। ভবিষ্যতে যারা বাল্যবিয়ের দাওয়াতে অংশ নিবে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে বলে আমি মনে করি।
লেখক : সৈয়দ আমিনুল ইসলাম , ২৪ এপ্রিল ২০২২
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur