জাতীয়

দাউদের জাল টাকা বাংলাদেশ হয়ে ভারতে

পাকিস্তানে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমের সহযোগী একটি চক্র বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতে জাল মুদ্রা পাচার করছে। পাকিস্তান থেকে দাউদের সহযোগী আসলাম সুফিয়ান, আরিফ, জাবেদ ও পারভেজ প্রমুখ মুদ্রাপাচার তত্ত্বাবধান করে থাকে।

শুধু তাই নয়, চক্রটি মানব পাচারের সঙ্গেও সরাসরি সম্পৃক্ত। জাল সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করে তারা মানবপাচার করে আসছে। ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে সমানভাবে সক্রিয় এ চক্রটি।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার এক পাকিস্তানিসহ ৬ মুদ্রা ও মানব পাচারকারীর দেয়া স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং) মুফতি মাহমুদ খান।

শুক্রবার বেলা ১২টায় উত্তরাস্থ র‌্যাবের সদর দপ্তরে গ্রেপ্তাকৃতদের নিয়ে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দফা অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক জাল মুদ্রা ও মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য পাকিস্তানি নাগরিক আব্দুল্লাহ সেলিম (৪২)সহ আরো ৫ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১ এরএকটি টিম। গ্রেপ্তাকৃত অন্যরা হলেন বাংলাদেশের নাগরিক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (৪৪), মামুনুর রশীদ (৪৬), আব্দুল খালেক (৫৫), কামরুল ইসলাম (২৮) ও মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান (৪৮)।

গত বুধবার রাত আনুমানিক ৮টার সময়, রাজধানীর বিমানবন্দর ফুটওভারব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা পাকিস্তানি আব্দুল্লাহ সেলিম এবং বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর ও আব্দুল খালেককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এদের কাছ থেকে ৭০ লাখ ভারতীয় জাল রুপি ৯ হাজার ১২৫ ইউএস ডলার, ২১ টি পাকিস্তানি জাল পাসপোর্ট, ৭টি বাংলাদেশি আসল পাসপোর্ট, ১০০ সৌদি রিয়াল, মানব পাচারে ব্যবহৃত বিভিন্ন সিল ও সরঞ্জাম উদ্ধার হয়।

পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাবের আরেকটি দল বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার সময় বিমানবন্দর থানাধীন বাবুর সালাম মসজিদ মাদরাসা সংলগ্ন আল-আমিন রেস্তোরাঁর সামনে থেকে কামরুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান ও মামুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে।

এসময় তাদের কাছে থেকে ৩০ লাখ ভারতীয় জাল রুপি, ৬ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি টাকা, ৪৩ হাজার ১৯০ পাকিস্তানি রুপি, ১৩ হাজার ৬২৭ ইউএই দিরহাম, ৭টি এয়ারপোর্ট ভিজিটরস কার্ড, ৫টি মোবাইল ফোন, ৪টি বিদেশি সিমকার্ড, ভুয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং ট্রাভেল পারমিট ফরম জব্দ করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জ্ঞিাসাবাদে জানিয়েছে, পাকিস্তানে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমের সহযোগী আসলাম সুফিয়ান, আরিফ, জাবেদ ও পারভেজের তত্ত্বাবধানে পাকিস্তান থেকে অভিনব কায়দায় ভারতীয় জাল রুপি চলে আসে বাংলাদেশে। চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা পরে সীমান্ত দিয়ে ভারতের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বাসিন্দা জামাল, নিম্ফল মণ্ডল, প্রশান্ত মণ্ডল, উত্তম কুমার সিনহাসহ আরো অনেকে এসব জাল মুদ্রা কিনে নেয়। প্রতিলাখ ভারতীয় জাল রুপি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার ভারতীয় মুদ্রায় বিনিময় হয়।

ভারতীয় এই চক্রটি হুন্ডি ও গরু বিক্রির মাধ্যমেও জালমুদ্রা পেমেন্ট করতো বলে জানিয়েছে গ্রেপ্তারকৃতরা। তারা জানায়, হুন্ডির ক্ষেত্রে ভারতীয় চক্রটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় অবস্থিত হাওলা অপারেটরের পরিচালক রাজন কর্মকারকে পেমেন্ট করতো। এছাড়া চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এই চক্রের আরো সদস্য রয়েছে বলে জানায় তারা।

তারা জানিয়েছে, বিমানবন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তা সাহায্যে আইনি ঝামেলা পার করে মূলত জাল নোটগুলো সীমান্ত অবধি পৌঁছায়। এরপর ভারতে পাচার হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ ফেরত বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই চক্রের সদস্যদের নামে নানা পন্থায় জালমুদ্রাগুলো পাঠানো হতো। বিশেষ করে পাকিস্তানে অবস্থানরত পাসপোর্টবিহীন যে সব বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরতে ইচ্ছুক তাদেরকে এ কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাদের অজান্তেই। পাকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশের হাই কমিশন কর্তৃক আউটপাস ইস্যু করে তাদের দিয়ে বিশেষ লাগেজ ও ক্রোকারিজ আইটেমের মাধ্যমে এসব জালমুদ্রা বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

বাংলাদেশে অবতরণের পর বিমানবন্দরের একটি চক্র পাকিস্তান ফেরত যাত্রীদের ভারতীয় জাল মুদ্রাসহ ইমিগ্রেশন এবং গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করানোর দায়িত্ব নেয়। এ চক্রের অন্যতম হলেন বিমানবন্দরে অবিস্থত বেসরকারি ফাস্টফুড দোকানে কর্মরত কামরুল নামের এক ব্যক্তি। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর আব্দুল্লাহ ও আব্দুল খালেক ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে পাকিস্তান থেকে আগত যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জালমুদ্রাগুলো উদ্ধার করে। পরে ঢাকার কাজীপাড়া, মিরপুর, গাবতলী ও গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানের অন্যান্য চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ চক্রের সঙ্গে পাকিস্তান দূতাবাস এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কেউ জড়িত আছে কিনা এখানো জানা যায়নি জানিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’

তিনি জানান, চক্রটি শুধু জাল মুদ্রাই নয় সরাসরি মানব পাচারের সঙ্গেও জড়িত। তারা জাল সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করে মানবপাচার করে আসছে। এ ছাড়া যে সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিক বাংলাদেশে এসে অবৈধ হয়ে পড়ছেন, তাদের জাল অনুমতিপত্র তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করার সুযোগ করে দিচ্ছে তারাই।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসবাদের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ জানান, জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে বহু অবৈধ প্রবাসীকে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করে থাকে তারা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ চক্র সক্রিয়। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত মুদ্রা ও মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান মুফতি মাহমুদ খান। (বাংলামেইল)
নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ০৪:৫৪ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫, শুক্রবার
ডিএইচ

Share