হোসে মুখিকার জীবন ছিল যেন এক রূপকথার গল্প। তারুণ্যে তিনি ছিলেন একটি সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন ‘টুপামারোস’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সংগঠনটি ১৯৬০-এর দশকে উরুগুয়ের সরকারের বিরুদ্ধে গোপনে প্রতিরোধ চালাত। এ সময়ে মুখিকা চারবার বন্দি হন,একবার গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যান এবং দু’বার জেল থেকে পালিয়ে যান।
১৯৭৩ সালে যখন সেনাবাহিনী উরুগুয়ে দখল করে নেয়, তখন তিনি বন্দি হন এবং কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দীর্ঘ ১৪ বছর কারাবন্দি করে রাখা হয়। মুখিকা বলেন, ‘ প্রেসিডেন্ট হওয়াটা জীবনের বড় প্রাপ্তি নয়,বরং যেদিন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, সেটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।
মুখিকা ছিলেন বিশ্বের ‘সবচেয়ে সাধারণ জীবনযাপনকারী’ নেতা। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র প্রেসিডেন্ট’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
সেই হোসে মুখিকা, যিনি ‘পেপে’ নামেও পরিচিত, ৮৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু অরসি।
তিনি এক্স-এ লিখেছেন,‘আপনি আমাদের যা দিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ আর জনগণের প্রতি আপনার গভীর ভালোবাসার জন্য কৃতজ্ঞতা।’মুখিকার মৃত্যুর কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো না হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে গলার ক্যানসারে ভুগছিলেন।
বিপ্লবী জীবন থেকে রাষ্ট্রনায়ক : তরুণ বয়সে মুখিকা ছিলেন এক বামপন্থী গেরিলা সংগঠন টুপামারোসের সদস্য। ষাট ও সত্তরের দশকে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে অংশ নেন। এই সময় তিনি চারবার গ্রেপ্তার হন, একবার গুলিবিদ্ধ হন এবং ১৪ বছর কারাগারে কাটান, যার অধিকাংশ সময়ই নির্জন কারাবাসে ছিলেন। ১৯৮৫ সালে গণতন্ত্র ফিরে আসার পর তিনি মুক্তি পান। সেই দিনটিকে তিনি জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন বলে উল্লেখ করেছেন— এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। এরপর ২০০৫ সালে তিনি প্রথমবার মন্ত্রী হন এবং ২০১০ সালে ৭৪ বছর বয়সে উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
সাধারণ জীবনযাপন ও ব্যতিক্রমী নেতৃত্ব
সাবেক গেরিলা নেতা তার সাধারণ জীবনযাপনের কারণে ‘বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যদিও তিনি নিজে এ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মুখিকা বলতেন, ‘গরীব তারা নয়, যাদের কম আছে বরং গরীব তারাই, যারা চিরকাল আরো চাই আরো চাই করতে থাকে।’
২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুখিকা। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সরকারি বাসভবনে না থেকে থাকতেন মাটি ও গাছপালায় ঘেরা এক ছোট্ট বাড়িতে। গাড়ি হিসেবে ব্যবহার করতেন পুরনো একটি নীল রঙের ১৯৮৭ সালের ভক্সওয়াগন বিটল। নিজের বেতনও বড় অংশ দান করতেন সমাজসেবায়।
মুখিকার রাজনৈতিক উত্তরসূরি ইয়ামান্দু অরসি ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তার দল ফ্রেন্তে আমপ্লিও সংসদে সর্বোচ্চ আসন পায়।
২০২৩ সালে তিনি জানান, তার ক্যানসার ধরা পড়েছে। শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী— হয়তো মৃত্যু লবণের মতোই স্বাভাবিক কিছু।’ হোসে মুখিকা শুধু উরুগুয়ের নয়। পুরো লাতিন আমেরিকার এক ব্যতিক্রমী রাজনীতিক ছিলেন। তিনি সরলতা,সততা ও মানবিকতা দিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন। তার মতো নেতা বিরল— যিনি জীবনের শেষে বলেছিলেন, ‘এই পৃথিবী পাগল, কারণ সাধারণ কিছু দেখেই সবাই অবাক হয়ে যায়।’ সূত্র : বিবিসি
১৪ মে ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur