বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলকে চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিশেষ উপহার বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আপনাদের কাছে একটা ছোট্ট উপহার নিয়ে এসেছি। সেটি হলো `দইজ্জার তল দি গাড়ি চলে’— (চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নদী,দরিয়া বা সাগর কে বুঝায় ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এ টানেল হওয়ায় এখন কক্সবাজারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ হবে। বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ হবে।’
শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে কর্ণফুলীর কেইপিজেড মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন এ দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে। এর মধ্যে ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আর শেখ রেহেনা বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। আমরা এখন জাতির জনকের সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।’
সরকারপ্রধান এ সময় বলেন, ‘এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশে উন্নয়ন হয়। আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে মেট্টো রেল সমীক্ষা চলছে। সম্ভব হলে সেটাও করে দেব।’
তিনি বলেন,‘চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। সেটা নিরসনে কাজ করছে সরকার। দ্রুত তা সম্পন্ন হবে। রাঙামাটিতেও রেললাইন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে টানেলের জন্য আমি চীনের প্রধানমন্ত্রী শি চিন পিংকে ধন্যবাদ জানাই। কেননা আমি বলাতেই তিনি রাজি হয়েছিলেন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন,‘চট্টগ্রাম হলো বাণিজ্যিক রাজধানী। আজকে নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে উন্নয়ন করতে পেরেছি। আমরা যখন উন্নয়ন করি, বিএনপি তখন বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে, পুঁড়িয়ে মানুষ মারে। আমরা বিভিন্ন ভাতা দিচ্ছি। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আজ আমরা দেশকে ডিজিটাল করেছি। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন।
বিএনপির আমলে গরিব মানুষেরা নুন-ভাত খেতে পারত না। আজকে ইনশাআল্লাহ এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। গরিব মানুষেরা এখন ফ্ল্যাট পাচ্ছে। বিনা পয়সায় ঘর পাচ্ছে। আমরা কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। বিনা জামানতে ঋণ নিতে পারবে। বিদেশ যেতে পারবেন। আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কোনো দালালকে টাকা দিয়ে বিদেশে যাবেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক কোটি মানুষকে আমরা কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। পৃথিবীর অনেক ধনী দেশ করোনাকালে টিকা দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার বিনা পয়সায় দেশের মানুষকে টিকা দিয়েছে। রিজার্ভের টাকা থেকে টিকা কেনা হয়েছে। ভ্যাকসিন কিনে ভ্যাকসিন দিয়েছি, আপনাদের সুরক্ষার জন্য। বিএনপির কাজ হলো মানুষ খুন করা।
খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তার ছেলে তারেক রহমান ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেখা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।’
‘আজকে বিএনপি সরকারকে হটানোর নানা আন্দোলন ও হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা এনে দিয়েছে। ওই সমস্ত ভয় ও হুমকি আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে লাভ নেই। বরং ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করায় খালেদা জিয়াকে দেশের জনগণ ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন,‘বিএনপি জামায়াত মানেই খুনি,হত্যাকারী, ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর,জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বিএনপি জামায়াত ধ্বংস করে। আগুন দিয়ে জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারে।’
তিনি আরও বলেন,‘আমি দেশের জন্য কাজ করতে এসেছি, এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে এসেছি। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আমার কেউ নেই। সবাইকে হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন। আপনারা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন।’
অক্টোবর ২৮ , ২০২৩
এজি