থার্টি ফাস্ট নাইট। খ্রিস্টিয় বছর তথা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেবে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ দিবাগত রাত। এ রাতের ১২টা ১ মিনিটকে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করা হয়। বছরের শেষ রাতের এ মুহূর্তটি উদযাপন একটি খ্রিস্টিয় সংস্কৃতি। বিশ্বব্যাপী ইসলামিক স্কলাররা ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উদযাপনকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
থার্টি ফাস্ট নাইট কোনো ইসলামিক সংস্কৃতি নয়। মুসলিম সভ্যাতা ও সংস্কৃতিতে এটি একটি অপসংস্কৃতি। সে কারণে একজন রুচিশীল ও সচেতন ঈমানদার মুসলমান কখনো থার্টি ফাস্ট নাইট সংস্কৃতি উদযাপন করতে পারে না।
থার্টি ফাস্ট নাইট খ্রিস্টিয় সংস্কৃতি হওয়ার কারণেই ইসলামিক স্কলাররা এটিকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য ধর্মের সংস্কৃতি-উৎসব মুসলমানদের জন্য উদযাপন করা বৈধ নয়। বিজাতীয় সংস্কৃতি উদযাপনে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাও এমনই। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যে ব্যক্তি ইসলাম (ইসলামি রীতিনীতি) ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৫)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সঙ্গে আচার-আচরণে, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।’ (আবু দাউদ)
বিজাতীয় সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণই নয় বরং মুসলিমদের কোনো কাজে মুশরিকদের সাহায্যও গ্রহণ করতেন না বিশ্বনবি। অন্য হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, এক মুশরিক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি (তাকে) বললেন, তুমি ফিরে যাও। আমরা মুশরিকদের সাহায্য চাই না।’ (আবু দাউদ)
কারণ প্রত্যেক জাতির জন্যই রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধান ও করণীয়। সে আলোকে মুসলিমদের জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ (সুরা মায়েদা : আয়াদ ৪৮)
মুমিন মুসলমান কখনো বিজাতীয় সংস্কৃতিতে নিজেকে জড়াতে পারে না। কেননা বিজাতীয় সংস্কৃতি বা উৎসব যদি কারো ভালো লাগে তবে সে মুমিন হতে পারবে না। হাদিসে এসেছে-
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যদি তুমি খারাপ কাজ করলে তোমার খারাপ লাগে, আর ভালো কাজ করলে ভালো লাগে, তবে তুমি মুমিন। কিন্তু যদি খারাপ কাজ করলে ভালো লাগে আর ভালো কাজ করলে খারাপ লাগে তবে মুমিন হতে পার না।’ (মুসলিম)
মনে রাখা জরুরি
যে সময়টিতে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করা হয়, সে সময়টি ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার সময়। এ সময়টিতে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে টগবগে যৌবনের লাগামছাড়া উন্মাদনা ও নেশা মেটানোর সময় হিসাবে বেছে নেয়া মারাত্মক অপরাধ।
গভীর রাতের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে এসে আহ্বানকারীকে(সাহায্য প্রার্থীকে), অসুস্থ ব্যক্তিকে, ক্ষমাপ্রার্থীকে (চাহিদা অনুযায়ী) যা ইচ্ছা তা ডেকে ডেকে দিয়ে যান। (মুসলিম, মিশকাত)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, (যখন) ব্যক্তি ভোর অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়, অথবা সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর অতিবাহিত করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার সামান্য কিছুর বিনিময়ে।’ (মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, থার্টি ফাস্ট নাইট নামক উৎসবে যোগদান কিংবা উদযাপন করা থেকে বিরত থাকা। ইসলাম নির্ধারিত বিধি-বিধান মেনে চলা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে থার্টি ফাস্ট নাইট নামক উৎসব থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন্
বার্তাকক্ষ, ৩১ ডিসেম্বর,২০২০;