কচুয়া

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন চাঁদপুরের বিপ্লব

বিপ্লব কুমার দেব। ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ত্রিপুরা রাজ্যের সভাপতি। বিপ্লবের আসল পরিচয় তিনি বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান। তার দাদার বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার মেঘদাইর গ্রামে।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন বিজেপি নেতা বিপ্লব কুমার দেব (৪৮)। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে রাজ্যটির রাজধানী আগরতলার অসম রাইফেলস ময়দানে রাজ্যটির কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। তাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যটির রাজ্যপাল তথাগত রায়। এসময় উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিজেপি নেতা ও ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সদস্য যিষ্ণু দেববর্মণ।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় আসে বিজেপি ও ইন্ডিজিনাস পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি) জোট। ৬০ আসন বিশিষ্ট রাজ্যটির ৫৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি জোট পায় ৪৩টি আসন। এর মধ্যে বিজেপি একাই ম্যাজিক ফিগার (৩১) ছাড়িয়ে ৩৫ আসন পায়। বামেরা জয় পায় ১৬টি আসন। বাম শাসিত কোনো রাজ্যে এটাই ছিল বিজেপির প্রথম একক লড়াই।

অথচ ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ১.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। সেবার রাজ্যের ৪৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে প্রতিটি আসনেই তাদের জামানত জব্দ হয়েছিল। আর এবারের নির্বাচনে প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোট পায় তারা। ফলে দল এই ত্রিপুরা জয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঐতিহাসিক রূপ দিতে চেষ্টারও কোনো ত্রুটি রাখেনি গেরুয়া শিবির।

গণতান্ত্রিক পথে বাম সরকারের বিদায়ের সাক্ষী হতে এদিন নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপির প্রবীন নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী ও মুরলী মনোহর যোশী, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ও উত্তরপূর্ব ভারতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাম মধাবসহ বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা। নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও উপস্থিত ছিলেন।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আগরতলা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিজেপি পার্টি অফিস পর্যন্ত পুরো রাস্তাকে এলইডি আলোকমালায় সাজানো হয়েছে। বিশাল সংখ্যক ভিভিআইপিদের কথা মাথায় রেখেই অসম রাইফেলস ময়দানে খোলা আকাশের নীচে সুবিশাল মঞ্চ গড়া হয়েছিল। ১২০ ফুট/২৪ ফুটের অস্থায়ী মঞ্চ থেকে জনতাকে সম্বোধন করেন মোদি থেকে শুরু করে সদ্য মুখমন্ত্রীর গদিতে বসা বিপ্লব দেব। একসঙ্গে এত ভিভিআইপি এবং ভিআইপি’দের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আগেই মাঠের দখল নিয়েছিল স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)। পুরো ময়দান জুড়েই বিজেপি ও আইপিএফটি দলের ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন অন্যান্য প্রচার সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে ওই ময়দানে জড়ো হয়েছিলেন লক্ষাধিক জনগণ। যারা মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি তাদের কথা মাথায় রেখে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হয় বড় বড় এলইডি স্ক্রীন।

শপথের পরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নতুন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আমাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভাববেন না। আপনারা আপনাদের পুত্র, ভাই বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করুন। আমি আপনাদের সেবায় এবং রাজ্যের কাজে নিজেকে উজার করে দেবো’।

এদিকে, নতুন বিজেপি মন্ত্রিসভাকে স্বাগত জানাতে তৈরি হয়ে আছে রাজ্যটির সচিবালয় ‘মহাকরণ’। নিউ ক্যাপিটেল কমপ্লেক্সের নতুন মহাকরণে এই প্রথমবার অবাম মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে। নতুন মন্ত্রীদের অফিস ঘরগুলো নতুন রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। রাজ্যটিতে ৬০ জন বিধায়কের আনুপাতিক হারে মুখ্যমন্ত্রীসহ সর্বাধিক ১২ জন মন্ত্রী হবেন। তাই নতুন মন্ত্রীদের ১২টি অফিস রুম থাকছে।

-বিডি প্রতিদিন

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩: ২৫ পি.এম ৯মার্চ,২০১৮ শুক্রবার
এএস.

Share