সারাদেশ

‘ত্যাড়া মহিলার’ প্রেমের কথা ফাঁস করলেন শামীম ওসমান

ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার। সাম্প্রতিক সময়ে এই পরিবারের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি তিনি। প্রতাপশালী রাজনীতিক হিসেবে তাকে জানে সবাই। কিন্তু এই লোকটিও যে তরুণ বয়সে প্রেমে পড়েছিলেন, কম ধকলও যায়নি তার উপর দিয়ে- সে কথা কি কেউ জানতো! ‍বুধবার সেই অনবদ্য প্রেম কাহিনীর আদ্যোপান্ত বর্ণনা করলেন তিনি। জানিয়েছেন কীভাবে সালমা আক্তার লিপির সঙ্গে প্রেম করেছেন। দেখা করেছেন।

অবশ্য এর আগেও অনেকবার বর্তমান স্ত্রী সালমা আক্তার লিপির সঙ্গে প্রেমের কথা বলেছেন। তবে পুরো কাহিনী এবারই প্রকাশ করলেন তিনি।

তখন নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে রাজনীতি করেন শামীম ওসমান। সালমা আক্তার লিপির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এই মেয়েটির মন জয় করতে তাবিজ-কবচ তুকতাট করেছেন কতো! কবিরাজের বাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে জুতার তলা ক্ষয়ে ফেলেছেন। তবে বন্ধুদের সহযোগিতার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আরেকটি মজার তথ্য হলো- বোমা, গুলি, হামলা মামলা এসব কিছু ভয় না পেলেও সালমা আক্তার লিপির সামনে তিনি ছিলেন ভেজা বেড়াল!

বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই প্রেমকাহিনী বলেন শামীম ওসমান। ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বলার কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, তার পরামর্শ কোনো মেয়ের যদি সমস্যা হয় অবশ্যই যেন সে বাবা-মার সঙ্গে শেয়ার করে। অথবা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করে। এতে তাদের সব সমস্যা সমাধান হবে।

কলেজ জীবনের সেই মজার কাহিনীর বর্ণনায় শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি কোন দিন ভয় পাই না। এ কলেজে একদিন ভয় পাইছিলাম; মারাত্মক ভয় পাইছি। ভয় পাইয়া, এমন ভয় পাইলাম, ভয় পাইয়া এক দৌড় দিয়ে এ কলেজের প্রিন্সিপালের রুমে চলে গেছি। আমারে গুলি করছে আমি ভয় পাই না। আমার উপরে বোমা মারছে আমি ভয় পাই না। পুলিশ ধরতে আসছে ভয় পাই না। সেনাবাহিনী ধরতে আসলে ভয় পাই না। কিন্তু সেইদিন ভয় পাইছিলাম। কারণ আমার পেছনে যে মহিলা বইসা আছে আমি ওনার পিছে পিছে একটু ঘুরতাম। বেশি চান্স দিতো না। অনেকে চান্স দিতো যারা বেশি চান্স দিতো তাদেরকে আমার ভালো লাগতো না। যেহেতু চান্স দেয় নাই বহুত ত্যাড়া মহিলা ছিল। এজন্য পিছে একটু বেশিই ঘুরতাম। একটা পর্যায়ে ঘুরতে ঘুরতে ভাবলাম যে, না, চান্স যখন দিল না এটারেই বিয়া কইরাম! কিন্তু আমার বাসায় বাবা ছিল খুব কঠিন মানুষ। ভাইয়েরা আমাকে খুব শাসন করতো। আমি যখন তোলারাম কলেজের ভিপি তখনও মাগরিবের নামাজের পর বাসায় ঢুকতে পারতাম না। মাগরিব পড়ার সাথে সাথে আমাকে বাসায় যেতে হবে এবং হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসতে হবে। আমি যত বড় যত কিছুই হই না কেন। আমার এ দুঃখ আমার বন্ধু বান্ধবের ভাল্লাগে না। এই যে হা-হুতাশ করি- আল্লাহরে কী করে একে পাওয়া যায়। এটা আমার বন্ধুদের সহ্য হইলো না। আমার দুই বন্ধু একটা মারোয়ারি আরেকটা বন্ধু আছে এখন কানাডায়। ওরা বললো, আমার দুঃখে দুঃখিত হয়ে। আমার কষ্টে কষ্টিত হয়েছে।’

বলেই যান তিনি, ‘পঁচাশি ছিয়াশি সালের ঘটনা, দেখলাম এতগুলি গোল মরিচ নিয়ে এসেছে। এরকম পাঁচ কেজি গোল মরিচ। আমি বললাম, কী? বলে, এগুলা গোল মরিচ। আমি বলি, কী করতে হবে? বলে, সকাল বেলা সাতটা গোল মরিচ ফজরের নামাজের আগে উইঠা চুলার মধ্যে ছেড়ে দিবি। তারপর কী হবে? তারা বললো, গোলমরিচ যখন জ্বলবে তখন ওর (সালমা লিপি) মন আমার জন্য জ্বলে জ্বলে উঠবে। সাত দিন লাগবে বেটা, তারপর দেখি তোর জন্য দৌড়াই চলে আসবে। তাই বন্ধুর কথায় ট্রাই করতে অসুবিধা কী। প্রতিদিন সকালবেলা উঠাই রান্নাঘরে চুলার মধ্যে গোল মরিচ পোড়াই। একদিন হঠাৎ করে পোড়ানোর সময় দেখি বাবা পিছনের দাঁড়াইয়া আছে। বাবা জিজ্ঞাসা করে রান্না ঘরে কী করো। এর মধ্যে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। বাবা বলছে, কি করো টস টস করে আওয়াজ হচ্ছে কেনো। বলছি গোল মরিচ পোড়াচ্ছি। বলে, কেন পোড়াচ্ছো? মিথ্যা করে বলি, আব্বা আমারে এক ফকির বলছে ফজরের নামাজের আগে যদি এ গোল মরিচ পোড়ালে নাকি বাসার ভিতরে নাকি কোন খারাপ জিনিস আসতে পারবে না। আমাকে কাউকে জানাইতে মানা করছে। তারপর বলে, তাহলে পোড়াও সমস্যা নাই। এরপর আন্দোলন লাগছে। একদিন মহিলা কলেজে ঢুকছি। ঢোকার পর ওই যে আমার বন্ধু বলছে দৌড় দিয়া আমার বাসায় চলে আসবে। আমার দিন শেষ, বাসায় চলে আসলে আমার বাপ দিবো আমারে মাইর। তখনও আমার বিয়ের বয়স হয় নাই। কি করি! আমি ভাবছি মিথ্যা কথা হবে না। এ কলেজে আসছি বক্তৃতা দিতে। তখন কলেজে গেট ছিল বন্ধ, বাহির হতে দিতো না মেয়েদের। এরা দেখছে আমি ঢুকছি উনি (লিপি ওসমান) ওনার বান্ধবীরা দেখছে আমি ঢুকছি। আমি তখন পপুলার ছাত্র নেতা ছিলাম। আমি ঢুকছি তাই অবশ্যই কলেজের গেট খুলতে হবে। কলেজের গেট যেই না খুলছে ইনারা কলেজের কোণা থেকে দৌড় দিছে, তখন আমি ভয় পেয়ে গেছি। আমি এক দৌড়ে প্রিন্সিপালের রুমে আর ওনারা, যার ভয়ে দৌড় দিলাম ওনারা ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে শামীম ওসমান যখন তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রেমকাহিনী সকল ছাত্রীদের সঙ্গে শেয়ার করছিলেন। ঠিক তখনই তার সহধর্মিনী সালমা ওসমান লিপি ওই অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে শামীম ওসমানের পেছনে চেয়ারে বসে মুচকি হাসছেন। তবে এর আগে সালমা ওসমান লিপি তার বক্তব্যে শামীম ওসামনের প্রশংসা করেন। সব সময় শামীম ওসমানের বক্তব্য শোনার ভাগ্য হয় না বলেও আফসোস করেন তিনি।

সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসার শিরিন বেগম, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আক্তার চৌধুরীসহ অন্য শিক্ষক শিক্ষিকারা।

নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৯:৩৫ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

এমআরআর

 

 

আরএনএম/ঢাকা/২০১৫

Share