চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ রাজনীতির নানান বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। আজ রয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আ. লীগের সভাপতি পদ প্রার্থী তোফায়েল আহম্মেদ ভুঁইয়াকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।
৮০-এর দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে আলোচিত যে ক’জন ছাত্রনেতা ছিলেন তার মধ্যে তোফায়েল আহম্মেদ ভুঁইয়া সর্বাধিক আলোচিত। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাহসী এ ছাত্রনেতা ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রার্থীতাসহ রাজনীতির নানান বিষয়ে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।
ফরিদগঞ্জে দলীয় কমকান্ডে মাঝখানের কয়েক বছর অনুপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ১৯৮৭ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজধানীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখানেও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৭-৮৮ সালে হিরু-নির্মল কমিটিতে সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটিতে (হাজী মকবুল-বাহাউদ্দিন নাসিম) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে ছিলাম। শিক্ষাজীবন শেষে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে ঠিকাদারি ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি।
পাশাপাশি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করি। আমি কখনোই আ. লীগের বাইরে ছিলাম না। সব সময় রাজধানী ও ফরিদগঞ্জে আ. লীগের পাশে থেকে সহযোগীতার চেষ্টা করেছি। সহযোগীতার একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান দিচ্ছি। শুধুমাত্র করোনা প্রার্দুভাবের সময় জননেত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফরিদগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে গরীব-অসহায় মানুষের মাঝে ২৭ লাখ টাকার ত্রাণ সহযোগীতা বিতরণ করেছি। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ফান্ডেও ১ লাখ টাকা দিয়েছি। রাজনৈতিক ব্যানারে হোক অরাজনৈতিক ব্যানারে হোক, আওয়ামী লীগের প্রতিটা প্রয়োজনে আমি হাজির ছিলাম। দলের যদি উপকার করতে চান সেটা ব্যানার দিয়েও করতে পারেন, ব্যানার ছাড়াও করতে পারেন।
সম্প্রতি চাঁদপুরে ফরিদগঞ্জের আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বৈঠকের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আসলে ফরিদগঞ্জের আওয়ামী লীগ জগাখিচড়ি হয়ে আছে। এখানে দলে কোনো শৃঙ্খলা-নিয়ন্ত্রন নাই। যোগ্য নেতৃত্বের তীব্র সংকট রয়েছে। নেতাদের উপরও কর্মীদের আস্থা নাই, কর্মীদের উপর নেতাদের আস্থা নাই। জেলা আওয়ামী লীগ চাচ্ছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির চেয়ে সবাইকে একজায়গায় নিয়ে আসা গেলে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত থাকবে। জেলা আওয়ামী লীগ হয়তো চিন্তা করছে সক্রিয় তিন গ্রুপের তিনজন নেতাকে এক জায়গায় নিয়ে আসি। তাহলে আওয়ামী লীগটা সুসংগঠিত থাকবে। তবে ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের সুংসগঠিত হওয়ার মত কোনো লক্ষণ আমি দেখছিনা।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথের কর্মসূচি বিষয়ে তিনি বলেন, আমি রাজপথের কর্মী। একসময় রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম করেছি। কিভাবে রাজপথে বিরোধী দলকে মোকাবেলা করা যায় এটা আমার জানা আছে।
ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি আমার আহ্বান, দলের প্রতি যাদের ত্যাগ, শ্রম, ঘামের পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতা আছে তাকে দল পরিচালনার দায়িত্ব দিন। দেখবেন দলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। দুঃসময়ে রাজপথে বিরোধীদলকে মোকাবিলা করা কঠিন কোনো বিষয় নয়।
জানা যায়, ১৯৮৩ সালে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায় ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন তোফায়েল আহম্মেদ ভুঁইয়া। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৮৬ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৮৫-৮৮ সাল পর্যন্ত চঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের (বিল্লাল-নুরুজ্জামান) কমিটিতে সিনিয়র সদস্য ছিলেন। ১৯৮৩ থেকে ৮৬ সাল পর্যন্ত স্বৈারাচার বিরোধী আন্দোলনে থানা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তোফায়েল।
এছাড়াও বর্তমানে রাজধানী ও নিজ জন্মস্থান ফরিদগঞ্জে বেশ কিছু সামাজিক-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়া গুণিজন স্মৃতি সংসদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, রাজধানীর দক্ষিণ বিশিল সাদা মাজার মসজিদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ফরিদগঞ্জ ১৪নং দক্ষিণ ইউনিয়নে কালির বাজার কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা, গাব্দেরগাঁও মরহুম সালামত উল্যাহ ভূঁইয়া এতিমখানা ও ১৫নং রুপসা উত্তর ইউনিয়নে ফোরকানিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ১৮ নভেম্বর ২০২২