লাইফস্টাইল

তেঁতুলের গুণাগুণ

তেঁতুল লেবুজাতীয় ফল। ইংরেজিতে ‘ ট্যামারিন্ড ’ বলে। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তেতৈ আর নোয়াখালীতে বলে তেতই। আদিবাসীরাও বিভিন্ন নামে ডাকে। মারমাদের ভাষায় হাও মং এবং রাখাইনরা বলে তাতু।

এর আদি নিবাস আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল। তবে সুদান থেকে বীজের মাধ্যমে বাংলাদেশে বংশ বিস্তার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের সব জেলাতে তেঁতুল গাছ কম বেশি দেখা যায়। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৯ সালে পাহাড়ি এলাকায় চাষ উপযোগী বারি তেঁতুল-১ নামে একটি মিষ্টি তেঁতুলের জাত উদ্ভাবন করেছে।

গ্রামাঞ্চলের কেউ কেউ মনে করেন, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়; সে সাথে বুদ্ধিও কমে। এজন্য বাচ্চাদের তেঁতুল খেতে বারণ করা হয়। এগুলো নিছক কুসংস্কার। বাস্তবে ঠিক উল্টো।

তেঁতুল রক্ত পরিষ্কার করে। মস্তিষ্কে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কাঁচা তেঁতুল খেতে টক, পাকা ফল টক-মিষ্টির এক ভিন্ন স্বাদ। তেঁতুল খাবারে স্বাদ বাড়ায়। এজন্য মাংসের রোস্টও, খিচুড়িতে ব্যবহার হয়। তেঁতুলের টক,ভর্তা,ডাল অনেকের প্রিয়। এছাড়া তৈরি করা যায় আচার, সস, জ্যাম, চাটনিসহ আরো খাবার। আছে অনেক পুষ্টি। পাকা তেতুল হৃদরোগের জন্য খুবই উপকারী। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তেঁতুলের সাথে রসুন মিশিয়ে খেলে রক্তের কোলস্টেরল কমে। নিয়মিত তেঁতুল খেলে প্যারালাইসিস রোগীর অনুভূতি ফিরে আসে।

টারটারিক অ্যাসিড থাকায় হজমশক্তি বাড়ায়। তাই পেটফাঁপা ও কাশি দূর করতে পুরোনো তেঁতুল গুলে; সে সাথে পরিমাণমতো পানি, লবণ, গুড় অথবা চিনি মিশিয়ে খেতে হবে। বুক ধড়ফড়, মাথা ঘুরানো, হাত-পা জ্বালা, কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয় ও ক্ষুধামন্দা নিরাময়ে বেশ কাজ করে।

তেঁতুল অতিরিক্ত ফ্যাট বের করে প্রজননতন্ত্রের কাজ শক্তিশালী করে। ধুতরা,কচু এবং অ্যালকোহলের বিষাক্ততা নিরাময়ে তেঁতুলের শরবত বেশ কার্যকরি ।নিয়মিত ঘণ্টাখানিক হেঁটে ২৫-৩০ গ্রাম তেঁতুল খেলে হৃদপিন্ডের ব্লক হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। গর্ভাবস্থায় মায়েদের বমিবমিভাব দূর করে। কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সেরে যায়।

মুখে ঘা হলে পানির সাথে তেঁতুল মিশিয়ে কুলকুচা করলে আরাম পাওয়া যায়। নিরাময়েও কাজ হয়। কোনো কোনো এলাকার মানুষ তেঁতুলপাতা বেঁটে, মরিচ ও লবণ মিশিয়ে বড়া বানিয়ে পান্তাভাতের সাথে খান। এতে শরীরে অনেক উপকারে আসে। কচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। পাতার রস সর্দি, কাশি, প্রস্রাবের যন্ত্রণা, পাইলস, কৃমি ও চোখওঠা সারাতে সহায়তা করে।

তেঁতুলের বিচিতে এক ধরনের অ্যানজাইম আছে, যা রক্তের চিনির মাত্রা কমায়। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া এর গুঁড়া নিয়মিত খেলে পেটের আলসার ভালো হয়। তেঁতুলের তৈরি শরবত খেতে অন্যরকম স্বাদ। অনেক রোগের মহৌষধ। শরবত বানানোর জন্য পরিমাণমত পানিতে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে পরিমাণমতো গুড় ও আয়োডিনযুক্ত লবণসহ গুলিয়ে নিয়ে রুচিমতো লেবুর রস দিয়ে নিজে পান করুন এবং অন্যদেরও পরিবেশন করুন।

তেঁতুলগাছ বহু পাতাবিশিষ্ট বৃক্ষ হওয়াতে স্বাভাবিকভাবে রাতের বেলা অধিক পরিমাণে অক্সিজেন গ্রহণ করে, একই সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। এ সময় গাছের নিচের চারপাশে অক্সিজেনের শূন্যতা দেখা দেয়। আর সে মুহূর্তে কোনো লোক যদি গাছের নিচে অবস্থান করে অথবা ঘুমিয়ে থাকে তাহলে অক্সিজেনের অভাবে অজ্ঞান কিংবা ঘাড় বাঁকা হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।

তেঁতুলের ফল, বিচি, পাতা, ফুল, গাছের বাকল প্রতিটি মূল্যবান। এর গুণের কথা উপলব্দি করে প্রধানমন্ত্রী অন্য ফলের পাশাপাশি তেঁতুলগাছ লাগানোর আহ্বান জানান। তাই আসুন প্রতিটি বসতবাড়িতে তেঁতুল গাছ রোপণ করি।

বার্তা কক্ষ, ১২ মে ২০২০
এজি

Share