বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেই দেখা গেছে, তুলনামূলক দ্রুতগতির বাউন্সি উইকেটে খেলতে বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন মাহমুদুল হাসান জয়। যার প্রমাণ তিনি দিলেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে এসেও। নিউজিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে খেলতে নেমে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ইনিংসেই ফিফটি করে ফেলেছেন তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ধীরগতির উইকেটে জয়ের অভিষেকটা ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে, হতাশাজনক। যেখানে দুই ইনিংস মিলে করতে পেরেছিলেন মাত্র ৬ রান। ঠিক এক ম্যাচ পর নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে সাবলীল ব্যাটিংয়ে অর্ধশতক করেছেন তিনি।
টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, কাইল জেমিসন ও নেইল ওয়াগনারদের বোলিং তোপ সামলে প্রায় চার ঘণ্টা উইকেটে থেকে ১৬৫ বল বলে ৫০ রান করেছেন জয়। যেখানে ছিল পাঁচটি চারের মার। ইনিংসের ৫৩তম ওভারের চতুর্থ বলে এক রান নিয়ে মাইলফলকে পৌঁছান জয়।
একই ইনিংসে জয়ের আগে নতুন বছরে বাংলাদেশের প্রথম ফিফটি তুলে নিয়েছেন তিন নম্বরে নামা বাঁহাতি ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তও। এ দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৯৭ রানের জুটির সুবাদে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৫৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১৪০ রান।
যুব ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরম্যাটে চারটি সেঞ্চুরি করেছিলেন জয়, সবকয়টিই দেশের বাইরে। এর মধ্যে একটি ছিল শুধু শ্রীলঙ্কায়। বাকি তিনটি ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডে। ঘরের মাঠে যুব ওয়ানডেতে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৫৮ রানের।
এতেই বোঝা যায়, দ্রুতগতির উইকেটেই তুলনামূলক ভালো খেলেন এ তরুণ ডানহাতি। এমনকি নিউজিল্যান্ড সফরের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন জয়। যা তাকে দেয় বাড়তি আত্মবিশ্বাস। আর এতে ভর করেই কিউইদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেই খেললেন ঝকঝকে ইনিংস।
মাহমুদুল হাসান জয়
মাহমুদুল হাসান জয়ের গল্পটা তার যুব দলের অনেক সতীর্থের সঙ্গেই মিলে যায়। বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট খেলতে যেতে হতো তাকে। কিন্তু মাঠে গিয়ে ব্যাটিং না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতেন তিনি। জিদটা পুষে রেখেছিলেন যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০০ রানের ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে তোলা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জন্ম নেয়া মাহমুদুলের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দেখে বাবা ব্যাংকার আবুল বারেক তাকে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করান। চাঁদপুরের এই একাডেমিতে দুই বছর প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৪ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন মাহমুদুল। ছেলেকে নিজের মতো ব্যাংকার বানানোর স্বপ্ন ছেড়ে বাবা আবুল বারেকও সব ধরনের সমর্থন দিতে থাকেন। এরপর কেবল এগিয়ে যাওয়ার গল্পই লিখেছেন মাহমুদুল।
টেস্ট দলে ডাক পেয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই জয়ের, ‘আসলে এই অনুভূতিটা প্রকাশ করার মতো না। সবারই স্বপ্ন থাকে টেস্ট স্কোয়াডে চান্স পাওয়ার। আমি প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছি। আমি অনেক খুশি। কিভাবে কী করবো, সেটি নিয়ে আলাদা কোন পরিকল্পনা নেই। সুযোগ পেলে আমি আমার স্বাভাবিক ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করবো।’
জাতীয় ক্রিকেট লিগে দারুণ সময় কেটেছে জয়ের, তিন ম্যাচেই করেছেন ৩৪৫ রান। জাতীয় লিগের দূর্দান্ত পারফরম্যান্সে আত্মবিশ্বাসী তরুণ এই ব্যাটসম্যান, ‘জাতীয় লিগে বেশ কয়েকটি ভালো ইনিংস খেলেছি। আমার আত্মবিশ্বাস এখন ভালো আছে। তার আগে এইচপি ও ‘এ’ দলের প্রস্তুতি ম্যাচেও আমি ভালো একটা ইনিংস খেলেছি। তাই আমি প্রস্তুত আছি, সামনের ম্যাচগুলোতে ভালো খেলার জন্য।’
অনুশীলনে দলের সবার কাছ থেকে সমর্থন পেয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন জয়। তার ভাষায়, ‘সিনিয়র ভাইরা সবাই আছেন, সবাই সাহায্য করলে… আমরা একসাথে শেষ কয়েকটা সিরিজ খেলছি। সবাই অনেক সাহায্য করে আমাকে, ভালো কিছুর আশায় আছি।’
স্টাফ করেসপন্ডেট