সারাদেশ

‘তুষখালীর ইলিশ’ বিশ্বখ্যাত!

পদ্মার ইলিশের সুনাম রয়েছে দুনিয়াব্যাপী। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের ভোজন রসিকদের কাছে পদ্মার চেয়ে বরিশালের ইলিশেরই বেশি কদর। আর এই বরিশালের ইলিশকে হার মানিয়েছে তুষখালীর ইলিশ।

এই ইলিশই এখন স্বাদের দিক দিয়ে সেরা। ঘাড় মোটা, পেটিও মোটা। পেটি ভরা তেল। অন্যান্য ইলিশের পেটি ফাঁপা থাকলেও তুষখালীর ইলিশের পেটি সাধারণত ভরাটই থাকে। কিন্তু এই ইলিশ কোথায় পাবেন? নদী থেকেই ইলিশ বিক্রি হয়ে যায়। জেলেরা খাবারের জন্য কিছু রাখে। ব্যবসায়ীরাও তাঁদের নিজেদের খাবারের পাশাপাশি উপহার দেওয়ার জন্য ঘাট থেকেই এই ইলিশ সংগ্রহ করে রাখেন।

খুলনা, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের অনেকেই এই ইলিশ কেনার জন্য জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের আগাম টাকা দিয়ে রাখে। তবে কোনো কোনো সময় খুলনা ৫ নম্বর মাছঘাটে এই ইলিশের দেখা মেলে। কিন্তু দাম একটু বেশি।

ইলিশ নোনা পানির মাছ। কিন্তু তুষখালী নদীর পানি মিষ্টি। গভীর সমুদ্র থেকে তুষখালী নদীতে মাছ উঠে আসার কারণে মিষ্টি পানির সান্নিধ্যে স্বাদে-গন্ধে ইলিশ অনন্য হয়ে ওঠে। বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে এসে বলেশ্বর নদ তোষখালী মোড় থেকে তুষখালী নাম ধারণ করে একটি শাখা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের দিকে, আরেকটি শাখা পিরোজপুরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

যশোরের মোফা ফিশ প্রসেসিংয়ের চেয়ারম্যান আব্বাস আলী বিশ্বাসের ইলিশ কারবারের ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বলেন, তুষখালীর মিষ্টি পানিতে এলেই ইলিশের স্বাদ বদলে যায়। অন্য ইলিশের পেটি ফাঁপা থাকলেও এই ইলিশের পেটি ভরাট থাকে।

জেলে ও মাছ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তুষখালীর ইলিশ নিজেদের জন্যই সংগ্রহ করে রাখে। খুলনা ৫ নম্বর মাছঘাটের ইমান অ্যান্ড রহমান ফিশের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুর রহমান বলেন, “বলেশ্বর, চান্দেশ্বর, কচা নদ-নদীর মাছ সুস্বাদু। কিন্তু সবচেয়ে সুস্বাদু তুষখালীর মাছ। গভীর থেকে মিষ্টি পানিতে আসার কারণে এই মাছ গায়ে মোটা হয়। পেটে তেল জমে যায়। ঘাড় মোটা এই মাছ আমাদের কাছে ‘লোকাল’ মাছ হিসেবে পরিচিত।

অন্য মাছের চেয়ে এর দাম বেশি।” সুন্দরবনের সাবেক বিভাগীয় কর্মকর্তা বন সংরক্ষক তারিকুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বলেশ্বর নদ প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীর নিচের অংশ তুষখালীর ইলিশ স্বাদে অতুলনীয়। অনেকেই এই মাছ খাওয়ার জন্য সরাসরি জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বাগেরহাটের সাংবাদিক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের তুষখালী নদীর ইলিশই বিশ্ববিখ্যাত। কিন্তু আফসোস হচ্ছে, এই মাছ পাওয়া যায় না। নদী থেকেই তা বিক্রি হয়ে যায়। তবে এখনো বাগেরহাট, পিরোজপুর এলাকার অনেকেই জামাইয়ের পাতে তুষখালীর ইলিশের পেটি তুলে দেওয়ার জন্য আগে থেকে জেলেদের টাকা দিয়ে রাখে।’

বার্তা কক্ষ

Share