চাঁদপুর

তীব্র শীতে নদীর পাড়ে চাঁদপুর বেদে পল্লীর মানবেতর জীবন

প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহে চাঁদপুরের নদী তীরবর্তী বেঁদে পরিবারদের দিনগুলো অনেকটা মানবেতর হিসেবে কাটছে ।

পুরো বছর জুড়েই বেদে পল্লীল পুরুষদের নদীতে মাছ শিকার আর নারীদের সিঙ্গাা লাগানো, বাসা-বাড়িতে থালা বাসন ফেরি করে জীবিকার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। সামান্য আয় দিয়ে এদের অনেকেরই শীতের পোষাক কেনা সম্ভব হচ্ছে না। শহরের অলী-গলী কিংবা রেল লাইনের পাশে থাকা অসহায় মানুষদের পাশে শীতবস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন মানুষ দাঁড়ালেও নদী তীরবর্তী এদের পাশে এখনো উল্লেখযোগ্য কাউকে শীতবস্ত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়নি।
গত কয়েকদিনে সারাদেশের ন্যয় চাঁদপুরে হাঁড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যয় হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই প্রচন্ড শীতের মধ্যেও দেখা গেছে চাঁদপুরের বেদে পরিবারের লোকজন নদী পাশেই টংয়ের মধ্যে শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছেন।
চাঁদপুর শহরের প্রেসক্লাব ঘাট ও ১০ নং চৌধুরী ঘাটস্থ কোস্টগার্ড পল্টুন সংলগ্ন বেঁদে পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, বেঁদে পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষরা শীতের কাপড়ে কষ্ট পাচ্ছেন। শীতের হিমেল হাওয়া থেকে রক্ষা পেতে কারো কারো গায়ে পুরান শীতের পোষাক থাকলেও অনেকের শরীরে তেমন কোনো ভালো শীতের পোষাক নেই। তবে টানা শৈত্য প্রবাহে বেদে পরিবারের শিশু ও বদ্ধদের অবস্থা খুবই শোচনীয়।

কই নৌকা ও তাঁবুতে তারা স্বামী-স্ত্রী- সন্তানাদি নিয়েই বসবাস করছে। রান্না-বান্না ও খাওয়া দাওয়া সবকিছু নৌকাতেই। ঝড়-বৃষ্টি-প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের মাথার উপর দিয়ে যায়। এই অনিশ্চয়তার জীবন নিয়েই মৃত্যু মুখে অবস্থান করছে তারা। নদীর তীরে হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে খুবই কষ্টে বসবাস করছে এসব বেদে সম্প্রদায়।
বর্তমান তীব্র এই শীতে যেখানে ঘর বাড়িতে বসবাস করা অতি কষ্টকর সেখানে ডাকাতীয়া পাড়ের বেদে সম্প্রদায়ের মানুষজন শিশু, বৃদধ পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে খোলা আকাশের নিচে। সামান্য তাবু টানিয়ে কেউ নদীর পাড়ের তীব্র শীতকে সঙ্গী করে বসবাস করছে নৌকাতে।
১০ নং ঘাটস্থ ও ৫ নং ঘাট এই দুই স্থানের বেঁদে পরিবারদের সরদার আবদুল মালেক সরদারের কাছে জানা যায়, শহরের এ দুই স্থানে মোট ২’শ ৭০ জন বেঁদে পরিবার রয়েছে। এদের মধ্যে শুধুমাত্র বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং একটি দলীয় সংগঠন ছাড়া তেমন কোন বৃত্তবান কিংবা প্রশাসানিক ভাবে তাদের শীতের পোষাক দেয়ার জন্য তেমন কেউ এগিয়ে আসেনি । তবে ওই শীত বস্ত্রে সবার চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়নি।

তিনি জানান, কয়েকদিন আগে দলীয় একটি সংগঠন থেকে সুজিত রায় নন্দীর মাধ্যমে মাত্র ৫০ জন সদস্যেে মাঝে ৫০টি শীতের পোষাক দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা শিশুদের জন্য কিছু শীতের পোষাক বিতরণ করেছেন।

এ সর্দার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, বিগত অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে এ নদীর কুল ঘেঁষে এসব পরিবারের বসবাস। দীর্ঘ বছর গুলোতে ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে বৃত্তবান এবং জেলা প্রশাসন যেমনি ভাবে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তেমনি ভাবে ুএই শীতের মৌসুমেও চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকার তাদের বেঁদে পরিবারদের প্রতি বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন এমনটাই প্রত্যাশা বেঁদে পরিবারের।

শুধু চৌধুরী ঘাটস্থ কোস্টগার্ড পৃন্টুন সংলগ্নই নয় এর বাইরেও চাঁদপুর শহরের ৫ নং খেয়া ঘাট, শেখের হাট, শাহতলী, রঘুনাথপুরসহ শহর ও তার বাইরে বহু বেঁদে পরিবার রয়েছে। তারাও একই ভাবে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন বলে জানা গেছে।

কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯:০৩ পিএম, ৯ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share