তিন মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে দু’এমপিসহ কর্মীদের পকেটমার নিয়ে তোলপাড়

ঝিনাইদহে বুধবার (১৫ জুন) তিন মন্ত্রীর অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরকারিদলের দুই এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের মোবাইল ও নগদ টাকা পকেটমারের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ টক অব দা টাউন।

পাশাপাশি ফেসবুকে একটি লেখা ভাইরাল হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাবুল আজাদ নামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক ঠিকাদার তার ফেসবুকে ঝিনাইদহের দুই এমপি আব্দুল হাই ও আনোয়ারুল আজিম আনারসহ নেতাদের পকেটমারের ঘটনাটি উল্লেখ করে দিয়ে চোর ধরে পুলিশের প্রতি টাকা উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।

ফেসবুকে বাবুল আজাদ লিখেছেন “আজ ১৪/০৬/১৬ইং বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ৩ জন মন্ত্রী মোঃ নাসিম, রশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু এসেছিলেন ঝিনাইদহ করতিপাড়া আনান্দ গোপাল গাঙ্গুলীর শোক সভায়। ছবির এই স্থান থেকে আমার প্যান্টের পকেট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পকেট মেরে নিয়েছে এবং আমাদের মাননীয় এম পি সাহেব মোঃ আব্দুল হাই ভায়ের মানিব্যাগ সহ টাকা। কালিগঞ্জের এম পি আনার ভায়ের মোবাইল।
শৈলকুপা দুদসর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোয়েব জর্দ্দারের উনপঞ্চাশ হাজার টাকাসহ আরো অনেকের টাকা, মানিব্যাগ ও মোবাইল পকেট মেরে নিয়েছে। আমি ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ কে অনুরোধ করবো যে আপনারা সাংবাদিক ভাইদের কাছ থেকে ভিডিও ফুটেজ নিয়ে এই সব চোরদের ধরুন। টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করার ব্যবস্থা করুণ।”

বাবুল আজাদের ফেসবুকের স্ট্যাটাসে নিয়ে নানা রকম মন্তব্যও করা হয়েছে।

একে আজাদ নামে একজন লিখেছেন “ পকেট মারা চোরও আছে এখানে ? ”।
ডিস রতন লিখেছেন “এটাতে বিএনপি জামায়াতের হাত থাকতে পারে”।

এমডি মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন “বাবুল ভাই আসলে বিষয়টা নৈহাটির শসানের ভৌতিক কোন ব্যপার কি না খতিয়ে দেখা উচিৎ। বেতার ইসলামিক মহারাজপুর লিখেছেন “নিজের নিরাপত্তা নিজেরা দিতে পারেনা তাহলো জনগনের নিরাপত্তা কিভাবে দিবেন ??”।

জাফর হোসাইন লিখেছেন “অসৎ ভাবে উপার্জিত টাকা এভাবে হারিয়ে যায় ভাইয়া”। এমডি রফিক আজাদ লিখেছেন “ডাকাতের মাল চোরে খাইছে”।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়ার বাসিন্দা ঠিকাদার বাবুল আজাদ নিজের ফেসবুকে পকেটমারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঝিনাইদহ শহর থেকে কোরাতিপাড়া পর্যন্ত নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ছিল। রাস্তার দু ধারে পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী শত শত পুলিশ। আছে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা। এর মাঝেও এমন ঘটনা ঘটবে ধারনও ছিল না।

তিনি জানান, দুই এমপি ছাড়াও, সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন চেয়ারম্যান, দলীয় নেতাকর্মী ও ঠিকাদারসহ অনেক নামিদামী ব্যক্তির পকেটমার হয়েছে। কিন্তু লজ্জায় কেও মুখ খুলছে না। তিন মন্ত্রীর সমাবেশস্থলে পকেটমারের ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুরিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আমি তো বিষয়টি জানি না। তাছাড়া ওই অনুষ্ঠানে আমি যায় নি। খোঁজ নিয়ে পরে বলতে পারবো।

প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কোরতিপাড়া গ্রামে পুরোহিত আনন্দ গোপাল হত্যার প্রতিবাদে স্থানীয় স্কুল মাঠে সরকারের তিন প্রভাবশালী মন্ত্রী মোহাঃ নাসিম, তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন যখন পর্যায়ক্রমে যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন ঘটে বিপত্তি। প্রতিবাদ সভায় পকেটমারদের বেশুমার আচরণের শিকার হন ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই। পকেটমার তার মানি ব্যাগসহ টাকা নেয়। ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের একটি মোবাইল সেট নেয়।

এছাড়া ঠিকাদার বাবুল আজাদের ৫০ হাজার টাকা, গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন, শৈলকুপার দুধসর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোয়েব জোয়ারদার, ঝিনাইদহের সাবেক এক পৌর চেয়ারম্যনসহ অর্ধশত নেতাকর্মীর টাকা ও মোবাইল খোয়া যায়। শত শত পুলিশ ও সাংবাদিকদের চলমান ক্যামেরার মধ্যে পকেটমারদের দৌরাত্ম্যের ঘটনায় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তারা মোবাইল ও টাকা উদ্ধারেরও দাবি জানিয়েছেন।

 

প্রতিবেদক- জাহিদুর রহমান তারেক, ঝিনাইদহ করেসপন্ডেন্ট
 

Share