জাতীয়

তাহের ও ননীকে ফাঁসিতে অথবা ফায়ারিংয়ের মৃত্যুদণ্ডাদেশ

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেত্রকোনার রাজাকার কমান্ডার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও তার সহযোগী রাজাকার আতাউর রহমান ননীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরিতকরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে চারটি প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ এ সাজা দেওয়া হয়েছে। ওই চার অভিযোগে ফজলুল রহমান তালুকদার, কৃতী ফুটবলার দবির হোসেন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ১৫ জনকে অপহরণ করে নির্যাতন শেষে হত্যার দায় প্রমাণিত হয়েছে তাহের-ননীর বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে প্রমাণিত হয়েছে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগও।

বাকি দু’টির মধ্যে একটি প্রমাণ করতে পারেননি এবং অন্যটিতে সাক্ষী হাজির করেননি প্রসিকিউশন।

মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) এ রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হকের নেতৃত্বে বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, সরকার ইচ্ছা করলে তাহের-ননীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে (ফায়ারিং স্কোয়াড) হত্যার মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ দুই প্রক্রিয়ার যেকোনো একটি অবলম্বন করা সরকারের ইচ্ছাধীনও করা হয়েছে রায়ে।

২৬৮ পৃষ্ঠার রায়ে তাহের-ননীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত চারটি অভিযোগের মধ্যে দু’টিতে মৃত্যুদণ্ড (৩ ও ৫ নম্বর) এবং দু’টিতে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ (১ ও ২ নম্বর) দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তৃতীয় অভিযোগে মশরফ আলী তালুকদারসহ ৭ জনকে এবং পঞ্চম অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে গুলি করে হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছেন তারা। অন্যদিকে প্রথম অভিযোগে ফজলুল রহমান তালুকদারকে এবং দ্বিতীয় অভিযোগে কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করে গুলি করে হত্যার দায়ে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ। একই সঙ্গে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের দায় প্রমাণিত হয় প্রথম অভিযোগে।

তবে দুই পরিবারকে দেশান্তরিতকরণের চতুর্থ অভিযোগটি প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আর শিক্ষক কামিনী চন্দ্র চক্রবর্ত্তীসহ ২৭ জনকে গণহত্যার ষষ্ঠ ও শেষ অভিযোগে সাক্ষী হাজির করেননি প্রসিকিউশন। এ দুই অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তাহের ও ননী।

১৩ জনকে হত্যা-গণহত্যায় মৃত্যুদণ্ড

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর তাহের ও ননীর নেতৃত্বে বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রাম থেকে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে নিয়ে ৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৫ নভেম্বর তাহের ও ননী বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে লক্ষীগঞ্জ খেয়াঘাট ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।

দু’জনকে হত্যায় আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট তাহের ও ননীর নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউসী বাজার থেকে বাউসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মফিজ উদ্দিন তালুকদারের ছেলে ফজলুল রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনি ব্রিজে হত্যা করে। একই সঙ্গে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৪ অক্টোবর জেলার বারহাট্টা রোডের শ্রী শ্রী জিউর অাঁখড়ার সামনে থেকে তাহের ও ননী কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করেন। পরে নির্যাতনের পর মোক্তারপাড়া ব্রিজে গুলি করে হত্যা করা হয় দবিরকে। (বাংলানিউজ)

 নিউজ ডেস্ক : আপডেট ১:১৫ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার

ডিএইচ

Share