তাসকিনের পাশে দাঁড়ালো ভারতীয় মিডিয়া

ইয়ান চ্যাপেল, ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব ‍আখতারদের মতো গ্রেটরা আইসিসিকে অনেকটা ‘তিরস্কার’ জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন আগেই। এবার টাইগার বোলার তাসকিন আহমেদের পাশে দাঁড়ালো ভারতীয় মিডিয়াও। ‘অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের’ দায়ে তাসকিনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় বিক্ষুব্ধ গোটা বাংলাদেশ। দেশের মিডিয়াগুলোও সরব প্রতিবাদী ভাষায়। গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকা নিয়মিত খবর ছেপেছে এ বিষয়ে।

কিন্তু ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত খবরে স্বস্তি পাচ্ছিলেন না টাইগারভক্তরা। বরং রসিয়ে তাসকিনের বিপক্ষে নানান কথা বলা হচ্ছিল তাদের তরফ থেকে। ফটোশপে ছবি বিকৃতি নিয়েও বাড়াবাড়ি করেছিল কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম। তবে সত্য ছাইচাপা আগুনের মতো। সুযোগ পেলেই জ্বলে ওঠে। ঢেকে রাখা কঠিন।

পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে প্রভাবশালী দৈনিক ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ তাসকিন ইস্যু নিয়ে ঠিক সেভাবেই যেন সরব হলো। যে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ তাসকিনের হাতে ধোনির রক্তাক্ত মুণ্ডুর ফটোশপ করা ছবি ছেপে উসকানি ছড়িয়েছিলো, এশিয়া কাপে হারের পর উল্টো ধোনির হাতে তাসকিনের রক্তাক্ত মুণ্ডু ধরানোর ছবিও ছেপেছিল, সেই ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ই এবার চাকিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত তাসকিনের পাশে।

তাসকিন ইস্যুতে টাইগার ভক্ত-সমর্থকসহ অনেকের আঙুল ভারতের দিকে। ফটোশপে কাজ করা ওই ছবিটিকে কেউ কেউ এ ঘটনার জন্য দায়ী করছেন, যেটা ভাইরাল করেছে ভারতীয় মিডিয়াই।

সেই ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা একটি স্টোরিতে ক্যারিয়ারে অনেকবার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া মুরলিধরনকে নিয়ে লিখেছে, অবাক লাগে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে শৃঙ্গে বসে রয়েছেন মুরলি। বৈধ ছাড়পত্র নিয়ে আর উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের সম্ভাব্য পিন আপ বয় সুদর্শন তাসকিন আহমেদ কিনা চাকার!

আইসিসির এই চাকার ধরার পদ্ধতিটা এতটাই অস্পষ্ট যে তার ভিত্তিতে শার্লক হোমসও প্রকৃত অপরাধী বার করতে পারতেন না। তাসকিন যদি চাকার হন মালিঙ্গা তবে কী? ক্রিকেটের দেবদূত? তার পর এই যে অদ্ভুত নিয়মটা পনেরো ডিগ্রি পর্যন্ত কনুই বাঁকানো যাবে, কেন যাবে? দশ ডিগ্রিতেও তো আনায় সুবিধে।’

পত্রিকাটি আরও লিখেছে, চাকিং বহু বছর ধরে চলছে। হঠাৎ হঠাৎ নতুন নতুন নাম বাজারে আসে। পুরনো পাপীদের বেকসুর খালাস দিয়ে। যেমন তাসকিন। কাল রাতে টিভিতে বাংলাদেশের অনবদ্য বেঙ্গালুরুর লড়াই দেখতে দেখতে ভাবছিলাম একটা টিম তামিম ছাড়া, তাসকিন ছাড়া কী অসামান্য লড়াই দিচ্ছে। এই লড়াইটার বীজ অবশ্যই মাশরাফি। তিনি অধুনা বাংলাদেশ ক্রিকেটার মাইক ব্রেয়ারলি। প্লেইং ক্যাপ্টেন যার ভূমিকা নিছক স্কোর দিয়ে বিচার হবে না।

লিডারশিপটাই তো একটা পারফরমেন্স। কোনও সন্দেহ নেই শ্রীলঙ্কা যেমন নব্বইয়ের দশকে বিশ্ব ক্রিকেটে উদিত শক্তি ছিল। আগামী দশ বছর বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেই সময়!

তাসকিন নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রশাসকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আনন্দবাজার।

‘আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে কাজে লাগানো ক্রিকেট কর্তাদের কাজের মধ্যে পরে। সব সময় যে চাপ নিজের দেশ থেকে তৈরি হলে কাজ হবে তার কোনও মানে নেই। যে যত ভাবে নিয়ামক সংস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে সে‌ তত তাড়াতাড়ি বিচার পাবে। এটা পৃথিবীর নিয়ম— আইসিসিরও।

বাংলাদেশের এখনকার বোর্ড, শাসকদের সম্পর্কে যা সব গল্প গাছা শুনি, তার অর্ধেকও যদি সত্যি হয় ঘোর উদ্বেগজনক। মাশরাফিরা এত দিন টানা ভাল খেলছিলেন বলে এরা সেই আলোয় আলোকিত হচ্ছিলেন। এখন তাসকিনের জন্য বিচার চাইতে যাওয়ার সময় এদের প্রকৃত মুরদ ধরা পড়ছে।’

||আপডেট: ০৬:০৩ অপরাহ্ন, ২৩ মার্চ ২০১৬, বুধবার

চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর

Share