তালের রসে স্বপ্ন দেখছেন ফরিদগঞ্জের শহিদুল

মানুষ স্বপ্ন দেখে। সফল মানুষেরা স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেয়। নানা জনের স্বপ্ন নানার রকম। তেমনি তাল গাছের রস নিয়ে স্বপ্ন দেখেন মো. শহিদুল শেখ নামে এক যুবক।

ইতোমধ্যে প্রাথমিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই যুবক সফলতা পেয়েছেন। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন ৮-১০ ব্যক্তির। পরিকল্পনা অনুযায়ী তালের রস সংগ্রহ করে, তা প্রক্রিয়াজাত করার জন্য আগামী বছর তিনি ২০ জনকে কাজের সুযোগ দিবেন।

তালের রস দিয়ে তৈরি করবেন খাঁটি তাল মিস্ত্রী ও মুচি গুড়। দেশের বিভিন্ন জেলায় আগে থেকে তালের রস সংগ্রহ হয়ে থাকলেও চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় তালের রস সংগ্রহ ও বিক্রি এবারই প্রথম।

শহিদুলের পৈত্রিক বাড়ি খুলনা জেলার বাগেরহাটে। গত কয়েক বছর পূর্বে তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসার তাগিদে চলে আসেন ফরিদগঞ্জে। তিনি বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাইকারি দামে ডাব(কচি নারকেল) ক্রয় করে তা ঢাকায় বিক্রি করেন। নারকেলের ব্যবসার সুবাধে তিনি দেখেন এই অঞ্চলের বিস্তৃন এলাকায় ছড়িয়ে চিটিয়ে আছে হাজারো তাল গাছ।

পরিকল্পনা অনুসারে তিনি তাল গাছের মালিককে এক কালীন কিছু টাকা দিয়ে ২০টি তাল গাছ নিয়ে কাজ শুরু করেন।

তার সরাসরি সাক্ষাত করে জানা যায়, চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের চরকুমিরা রাস্তার মোড় থেকে চরকুমিরা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে তাল গাছের সাথে লম্বা বাঁশ বাঁধা আছে। প্রতিটি তাল গাছের মাথায় মৌচার সাথে ৫ থেকে ৮টি করে মাটির হাঁড়ি পেতে রাখা হয়েছে। যেই হাঁড়িতে জমা হচ্ছে রস। তাল গাছের মাথার ডালে যে ধারালো করাতের মত অংশ রয়েছে তা পরিস্কার করা হয়েছে যাতে গাছি আঘাত না পায়।
বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে কামাল হোসেন নামের এক গাছির সাথে কথা হয় চাঁদপুর টাইমসের সাথে। তিনি জানান, গত ২০ বছর ধরে তিনি তাল গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে আসছেন। তার বাড়ি খুলনা জেলার বাগেরহাটে। তিনি এখানে মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করেন।

রস সংগ্রহ সর্ম্পকে তিনি বলেন, প্রতিদিন ভোরে, দুপুরে ও বিকালে অথাৎ তিন দাপে তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া গাছে হাঁড়ি পাতার সময় তাল গাছের মৌচার সামান্য অংশ কেটে ফেলতে হয়। জটা তাল গাছ ও যে গাছে তাল ধরে অথাৎ উভয় প্রকার তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। রস সংগ্রহের পর তা বিক্রি করা হয়।

তিনি আরো বলেন, সার্বক্ষণিক পৌরসভার চরকুমিরা রাস্তার মাথায় তালের এই রস পাওয়া যায়। ওই গাছির সাথে কথা বলার প্রক্কালে কয়েকজন যুবক মটর সাইকেল থামিয়ে তালের রস পান করেন। তাদের অভিব্যক্তি জানতে চাইলে তারা জানান, তালের রস অত্যান্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। তাদের কাছে বেশ ভালো লেগেছে বলে জানান তারা। আরেক ব্যক্তি মিষ্টান্ন খাবার রান্না করার জন্য কলস ভরে রস নিয়ে যান।

এনিয়ে কথা হয় তালের রস নিয়ে যিনি ভবিষৎ স্বপ্ন দেখেন সেই শহিদুলের সাথে। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমার গ্রামের বাড়িতে তাল গাছ থেকে বহু বছর আগে থেকেই রস সংগ্রহের প্রচলন চলে আসছে। কিন্তু আমি গত কয়েক বছর দেখলাম এখানে অসংখ্য তাল গাছ থাকা স্বত্ত্বেও কেউ তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে না। তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহের মৌসুম হচ্ছে ফাল্গুন থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত।

গরম যত বেশি পড়বে, তালের রস ও তত বেশি হবে। আমি শুরুতে ২০টি তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া শুরু করি। বর্তমানে ১৩টি গাছ থেকে রস সংগ্রহিত হচ্ছে। প্রতিটি গাছ থেকে প্রতিদিন ৪ থেকে সাড়ে ৪ লিটার রস পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি লিটার ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি গ্লাস ১৫/২০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার টাকার রস বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনি আমার এই কাজে ৮/১০ জন শ্রমিক সহযোগীতা করছে। রস বিক্রির জন্য ৫টি ভ্যান গাড়ি রয়েছে। যেগুলোতে করে আমার নিয়োগকৃত লোকজন বাজারে বাজারে তালের রস বিক্রি করছে। শ্রমিকের খাওয়াসহ মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়।

তালের রস সংগ্রহ নিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পনা সর্ম্পকে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, তালের রস দিয়ে তাল মিস্ত্রী, মুচি গুড় তৈরি করা হয়। আগামী বছর ২০ জন তাল গাছি যোগাড় করে এক থেকে দেড়শ গাছের রস সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংগ্রহীত রস দিয়ে খাঁটি তাল মিস্ত্রী ও মুচি গুড় তৈরি করে বাজার জাত করবো।

মো. শহিদুল শেখ ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তার দুই মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তালের রস বিক্রি করে চলছে তার সংসার। এক সময় অভাব অনটনে দিন কাটলেও স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালোই চলছে তার সংসার। শহিদুল ফরিদগঞ্জ পৌরসভার চরকুমিরা গ্রামে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।

প্রতিবেদক-আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭: ০৫ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share