বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) মুদ্রাপাচার মামলার রায় ঘোষণা করবে উচ্চ আদালত।
এ মামালায় তারেক রহমানের আইনজীবীর প্রত্যশা, আপিলের রায়ে তিনি মক্কেল খালাস পাবেন। তবে এ মামলার রায় নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে নারাজ দুদকের কৌঁসুলি।
একইভাবে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করবেন না বলে জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খানও।
এ মামলার দুইজন আসামির মধ্যে তারেক রহমান পলাতক থাকায় তার পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। অপর আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘দুদক এ মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগে দায়ের করেছে তার উপাদান এখানে নেই। কারণ অর্থ পাচার মামলা করার অন্যতম উপদান হলো দেশের টাকা বিদেশে পাঠানো। কিন্তু এ মামলার অভিযোগে সেটি অনুপস্থিত।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এখানে সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে টাকা লেনদেনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এদেশ থেকে বিদেশে কোনো টাকা পাচারের অভিযোগ নেই। আমরা এ বিষয়গুলো আদালতের কাছে তুলে ধরেছি।’
কায়সার কামাল বলেন, ‘আমরা আশা করছি এ মামলায় আমাদের আসামিরা খালাস পাবেন এবং ন্যায় বিচার পাবো আমরা।’
অর্থ পাচার হওয়ার সময় এ মামলার অন্যতম আসামি তারেক রহমান দেশের বাইরে ছিলেন বলেও দাবি করেন এই আইনজীবী।
বিচারিক আদালতে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ ডিসম্বর আপিলে আবেদন করে দুদক। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাদের আপিল গ্রহণ করে আসামি তারেক রহমানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলার আপিলের শুনানি করা হয়। এ বেঞ্চই এ মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করবেন।
আজ বুধবার হাইকোর্টের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় প্রকাশিত বৃহস্পতিবারের তারিখে ৪ নম্বর ক্রমিকে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছে।
ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় এই মামলা করে দুদক।
বিচার শেষে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন।
অপর আসামি গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে দেয়া হয় সাত বছরের কারাদণ্ড; সঙ্গে ৪০ কোটি টাকা জরিমানা।
মামলাটি দায়ের থেকে শুরু করে পুরো বিচার প্রক্রিয়াই অনুপস্থিত ছিলেন তারেক। গত আট বছর ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। আর মামুন জরুরি অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই কারাগারে।
তারেক রহমানের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুদক ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর আপিলের আবেদন করে। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট দুদকের আপিল গ্রহণ করে আসামি তারেককে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়।
লন্ডনপ্রবাসী তারেক না ফেরায় তার বিরুদ্ধে সমন জারি করে তা তার লন্ডনের ঠিকানায় পাঠানো হয়। কিন্তু তাতেও আদালতে সাড়া দেননি তারেক রহমান।
দুদকের করা ওই আপিলের সঙ্গে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে মামুনের করা আপিলও শুনানির জন্য তালিকায় আসে। এরপর হাই কোর্টে ৪ মে আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ১৬ জুন।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দায়ের করা এ মামলায় তারেক-মামুনের বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ৬ জুলাই।
এ মামলায় অভিযোগ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশনস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন।
২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ‘বিভিন্ন পন্থায়’ ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের অ্যাকাউন্টে পাচার করা হয়, যার মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তারেক খরচ করেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।
জজ আদালতের রায়ে বলা হয়, ওই টাকা খরচ করার কথা তারেক রহমান অস্বীকার করেননি। ২০০৭ সালে দুদকে দাখিল করা তারেকের হিসাব বিবরণীতে তার উল্লেখ রয়ছে। কিন্তু তিনি যে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন তা প্রমাণ হয়নি। (বাংলামেইল)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮:০০ পিএম, ২০ জুলাই ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ