তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ এর আয়োজন করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন।
১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণটি অনুষ্ঠিত হয়।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) কাজী জেবুন্নেছা বেগম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ৫৫ হাজার বর্গমাইল এর দেশ। তাই দেশকে বাঁচাতে হবে। সরকার কাউকে বাদ দিয়ে কিছু করবে না। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখার দায়িত্ব সরকারের। সরকার ২০০৫ সালে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আইন করেছে। ২০১৩ ও ২০২২ সালে আইন সংশোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তামাকজাত পণ্যের কারণে কারো যেন মৃত্যু না হয় কথাটি বলেছেন। বিশ্বের আর অন্য কোন রাষ্ট্রের প্রধানরা এখন পর্যন্ত তা বলেননি। তিনি সবসময় দেশের মানুষের কথা ভাবেন ও চিন্তা করেন।
তিনি বলেন, করোনার কারণে কার্যক্রম কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তবে আমরা বসে ছিলাম না। তামাকের কারণে আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এটা জীবন মরণের সাথে সম্পর্ক। তা আগে আমাদের বুঝতে হবে। একজন চিকিৎসকের কাছে আমরা আসি জীবনের শেষ প্রান্তে। তখন আর করার কিছুই থাকে না। জীবনের গতিটা আধুনিকতার কারণে আমরা নষ্ট করে ফেলছি। মাদক ও তামাক ছেলেমেয়েরা ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করছে। পরে তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদেরকে এর কুফল সম্পর্কে জানাতে ও বুঝাতে হবে। তবে আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে বিষ তো বিষই। পোঁকা মাকড় এর কাছে যায় না। আর মানুষ বিষ যেনেও তা গ্রহণ করে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমাদের সুষম খাবার গ্রহণ না করার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। আমরা জাঙ্ক ফুড গ্রহণ করছি। আগে খেলার মাঠ ছিল,পার্ক ছিল বসার স্থান ছিল, এখন সেখানে বসে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। আইন কঠিন আছে তবে তা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। সিগারেটের সিঙ্গেল শলাকা বিক্রয় করা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। সিগারেট পরিবেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে থাকে। সবাই হাতে হাত মিলে কাজ করলে সকল কাজই সম্ভব। মোবাইল কোর্ট এর কার্যক্রম বাড়াতে হবে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় স্কুল-কলেজের অনেক ধূমপায়ী তৈরি হচ্ছে। এদেরকে এর কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। রাষ্ট্রের সকল অপশক্তি গুলোকে দমন করতে হবে। বাত না খেলে মানুষ মারা যায় না, তবে সিগারেট বেশি খেলে মৃত্যু অনিবার্য।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব সাজেদুল ইসলাম, জেলা সির্ভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শাহাদাৎ হোসেন, চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ইমতিয়াজ হোসেনের পরিচালনায় উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন রশিদ, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম, চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস উত্তর এর উপ-পরিচালক সাহিদুল ইসলাম, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ইমদাদুল ইসলাম, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ বেলায়েত হোসেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম মোসা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, মতলব দক্ষিণ নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান শোভন, জেলা সমাজসেবা কর্মর্তা রজত সুভ্র সরকার, জেলা ক্রীড়া অফিসার তরিকুল ইসলামসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রশিক্ষনের শুরুতেই চাঁদপুর জেলা সির্ভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডাঃ হুমায়ন ইসলাম সাকিব তামাক নিয়ন্ত্রণে ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রর্দশণ করেন।
বক্তারা বলেন, জর্দা, গুল, সিগারেট সবই তামাকজাত পণ্য। যারা তামাক সেবনের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাকারী তাদেরকেও আইনের আওতায় আনত হবে। একজন ধুমপায়ীর কারনে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়। সকল পণ্যের গুনাগুন আছে, কিন্তু তামাকের ক্ষতি ছাড়া কোন গুন নেই। প্রতিটি অফিস আদালতকে ধুমপান মুক্ত ঘোষনা করতে হবে। তাহলে অন্যরা উৎসাহী হবেন। লাইসেন্স ছাড়া কেউ তামাকজাত পণ্য বিক্রয় করতে পারবে না। আমরা নিজেরা ধুমপান করবোনা, অন্যকে ধুমপান না করতে নিরসাহী করবো। তাহলেই আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।
প্রতিবেদক: মাজহারুল ইসলাম অনিক, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩