মাঘের শীতে এমনিতেই কাহিল মানুষ। এর মধ্যে গত দুই-তিন দিন বৃষ্টির পর দেশজুড়ে আরও জেঁকে বসেছে শীত। গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলা এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শীতের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে, কমতে পারে দিন ও রাতের তাপমাত্রা।
বৃষ্টির পর মৌলভীবাজারে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে বৃহস্পতিবার থেকে এক দিনের ব্যবধানে শুক্রবার তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৭ ডিগ্রি, যে কারণে মানুষের মধ্যে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার চা-শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগে।
এদিকে পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রাও দ্রুত কমেছে। এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে পঞ্চগড়ে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কুয়াশার সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত এই জনপদের মানুষকে কাবু করে ফেলেছে। হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারণে আবহাওয়ার এমন রূপ দেখা মিলেছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি মিলে জেলায় পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব শিগ্গির আরও শীতবস্ত্র বরাদ্দ পাওয়া যাবে।’
তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঠান্ডা বাতাস আর হালকা কুয়াশায় নীলফামারীতে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপানো শীতে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। দিনভর আগুনের উত্তাপ নিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে গ্রামের মানুষ।
শুক্রবার দুপুরে নীলফামারীর পাঁচমাথা মোড়ের অটোচালক ইব্রাহিম মিয়া জানান, ‘সকালে রোদ দেখে শহরে এসেছি। কিন্তু এখন আকাশ মেঘলা ও হালকা কুয়াশা পড়ছে। ঠান্ডায় অটো চালাতে কষ্ট হচ্ছে। দুপুরের পর থেকে ঠান্ডা বাতাসে শীত বাড়ছে। তাই সড়কে মানুষও কমে গেছে। এমন তীব্র ঠান্ডা এ বছরের মধ্যে আজকেই প্রথম।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় শুক্রবার এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এক দিনের ব্যবধানে সাড়ে ৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কম।
তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করে ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দুই দিন বৃষ্টির পর গতকাল থেকে আকাশে মেঘ কেটে গেছে। মেঘ কেটে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা শুরু হয়েছে।’
এদিকে কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের জনজীবন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় মানুষের চলাচল ছিল একবারেই সীমিত। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে। ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ আছেন চরম বিপদে। দুই-তিন দিন ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং বিকেল ৪টার পর থেকে রাতভর ঘন কুয়াশা ঝরছে এই অঞ্চলে। রাত যতই গভীর হয়, কুয়াশার মাত্রাও ততই বাড়তে থাকে। বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরতে থাকায় রাস্তায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে মারাত্মকভাবে।
জেলা সদরের খানপুর এলাকার ইজিবাইকচালক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০০ টাকা ইজিবাইকের মালিককে দিতে হয়। সংসারের খরচ আছে, অথচ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০০ টাকাও কামাই (আয়) হয় নাই। এর থেকে বাড়িতে থাকলেও আরাম করতে পারতাম।’
অন্যান্য বছর ডিসেম্বরের শুরু থেকে এই অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়লেও এ বছর শীত নেমেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে এখন তা অনেকটা মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে গত দুই দিন ধরে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা উত্তরাঞ্চলের মানুষকে কাহিল করে দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদ বলেন, যেসব জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বইছে, তা কিছুটা বিস্তার লাভ করতে পারে। এতে সারা দেশের রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে, ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur