২৩ বছরের সুন্দরী শিখ তরুণী হরমন কউর। ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারের বাসিন্দা। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের জন্য সারা শরীরে অতিরিক্ত লোম হরমনের। এই একটা কারণ সমবয়সী তরুণীদের থেকে আলাদা করে দিয়েছিল হরমনকে।
সারা মুখে পুরুষদের মত গোঁফ, দাড়ি থাকার দরুণ এক সময় হরমনকে প্রতিনিয়ত হাসি ঠাট্টার পাত্রী হতে হত সবার কাছে। কিন্তু হরমন আর এই সব কথায় পাত্তা দেবেন না ঠিক করেছেন। তিনি ঠিক করেছেন লোকে কী বলবে সেই ভেবে আর নিজের দাড়ি, গোঁফ, কাটবেন না তিনি।
মুখে লম্বা দাড়ি। প্রথম দেখায় কেউ বুঝতে পারবেন কি না সন্দেহ, তিনি একজন নারী।
নারীর মুখে দাড়ি- এমন ঘটনা বিরল না হলেও প্রত্যাশিত নয় মোটেও। কেউ যদি শোনেন বা দেখেন যে কোনো নারীর মুখে দাড়ি গজিয়েছে, তবে তিনি আরো দুবার শুনতে চান অথবা পেছন ফিরে ফোকাস লাইটের মতো চোখ দুটি ফেলেন তার ওপর।
তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বাস করেন যুক্তরাজ্যের স্লাউহে। বয়স ২৩ বছর। তার বয়স যখন ১১ বছর, তখন থেকে তার মুখে, হাতে ও বুকে লোম গজাতে শুরু করে। ঠিক পুরুষদের মতো তার গায়ে ঘন লোম গজাতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে চেনাজানা মহলে রীতিমতো বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। শুনতে হয়েছে নানা কটাক্ষ। কেউ ডেকেছে ‘সিমেল’ নামে, কেউ ‘সিম্যান’

আবার কেউবা ডেকেছে ‘বিয়ার্ডো’ নামে। তখন খুবই খারাপ সময় পার করেছেন হরনাম কাউর। এরপর তার বয়স যখন ১৬, তখন সুযোগ হয় শিখধর্মে দীক্ষিত হওয়ার। হাতছাড়া করেননি সে সুযোগ। কারণ শিখ ধর্মে চুল-দাড়ি কাটা বা ছাঁটা নিষেধ।
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা হরমনের ভাষায় “ আমার নিজেকে অনেক বেশি নারী মনে হয় এখন। দাড়ি, গোঁফের সঙ্গেই নিজেকে সেক্সি আর সুন্দরী মনে হয় আমার। আমি নিজেকে ভালবাসতে শিখেছি। যারা আমার কাছে কেউই নয় তাদের কথায়, ঠাট্টায় আমার আর কিছুই এসে যায় না।“ এখনও রাস্তায় বেরলে হরমনের দিকে অবাক চোখে তাকায় লোকে। তাঁর দাড়ি, গোঁফ দেখে অনেকেই `স্যার` বলে সম্বোধন করে ফেলে তাঁকে।
কিন্তু তার পরেই হরমোনের পোষাক আর শরীরে পূর্ণাঙ্গ স্তনের উপস্থিতি দেখে চমকে যায় সকলে। এমনকী যে স্কুলে তিনি পড়ান সেই স্কুলের ছোট, ছোট বাচ্চাদের তাঁকে নিয়ে বিবিধ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় তাঁকে। কিন্তু এখন আর এই সব কিছু ছুঁয়ে যায় না হরমনকে।
রাস্তার লোক, দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের কটূক্তির পরোয়া করেন না তিনি। চেষ্টা করেন স্কুলের বাচ্চাদের তাঁকে নিয়ে করা সমস্ত প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে।

বাড়িতে হরমনের ভাই তাঁর এই সিদ্ধান্তের সব থেকে বড় সমর্থক। হরমন চান অন্য মেয়েরাও তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা পাক। নিজেরা যেরকম সেই ভাবেই নিজেদেরকে স্বীকার করতে শিখুক তারা। নারীদের মুখে চুল-দাড়ি গজানোর বিষয়টিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় পলিসিস্টিক বলা হয়।
তবে হরনাম সিংয়ের বেলায় কোনো চিকিৎসায় কাজ হয়নি। তাতে মোটেও ভীত নন তিনি। এখন তার ভাষ্য, মুখে দাড়ি তাতে কী? এই তো বেশ আছি! (সূত্র- জি বাংলা)
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur