সারাদেশ

তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলা এক ‘মস্ত বড় কর্মকর্তা’র কীর্তি!

দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সৌদি আরব চলে গিয়েছিলেন তিনি। তিন বছর পর দেশে ফিরে তিনি হয়ে যান কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্র, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পাস করা প্রকৌশলী, যিনি একটি মোবাইল ফোন অপারেটর কম্পানির মস্ত বড় কর্মকর্তা। লিবিয়ার ত্রিপোলিতে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার কথাও আছে। শুধু তা-ই নয়, নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের পিএইচডি ডিগ্রি এবং অ্যাপেল কম্পানির সাবেক নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারের পরিচয়।

কয়েক বছরের ব্যবধানে ফেসবুকের সুবাদে নিজেকে কথিত এই উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যুবকটির নাম আল-আমীন। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। গত রবিবার র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জানা যায়, তাঁর এসব পরিচয় ভুয়া, যা ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন কৃষক পরিবারের এ যুবক।

জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের প্রফাইলে ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৫০ জন তরুণীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে আল-আমীনের বিরুদ্ধে। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আট লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ধরা পড়েন তিনি। তারপরই এ যুবকের প্রতারণার সব ঘটনা বেরিয়ে আসে।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, আল-আমীন ফেসবুকে মাহবুব সালাম ফাহিম (ইংরেজি) নাম ব্যবহার করছিলেন আইডিতে। তিনি র‌্যাবকে জানিয়েছেন যে তিনি ২০০৯ সালে সৌদি আরবে যান। সেখানে তিনি প্রাইভেট কার চালকের চাকরি করতেন। তিন বছর পর দেশে ফিরে রাজধানীতে একটি ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন। বিয়েও করেন, তাঁর স্ত্রী একটি বেসরকারি টিভির সংবাদ পাঠিকা। এর মধ্যে ফেসবুকে আইডি খুলে তিনি নিজের ওই সব পরিচয় দিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। জাল জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে নিজেকে নান্দাইলের সাবেক এক সংসদ সদস্যের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতেন। তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এবং নিজের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে টাকা আদায় করতেন। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী। বিষয়টি তিনি র‌্যাব-১০-এর কর্মকর্তাদেরও জানান।

ওই তরুণীর বরাত দিয়ে র‌্যাব-১০-এর উপ-অধিনায়ক মেজর আশরাফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, চার মাস আগে ফেসবুকে মেয়েটির সঙ্গে আল-আমীন ওরফে ফাহিমের পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে আল-আমীন তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। সর্ম্পকের একপর্যায়ে তিনি তরুণীকে জানান যে দীর্ঘদিন সুইজারল্যান্ডে থাকায় বাংলাদেশে তাঁর ছয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে আছে। যে কারণে তাঁর কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত, চোখেও আঘাত পেয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর প্রচুর টাকা প্রয়োজন। এসব শুনে মেয়েটি তিন ধাপে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রায় আট লাখ টাকা দেন আল-আমীনকে। অভিযোগ তদন্ত করে র‌্যাব-১০ শেষ পর্যন্ত আল-আমীনকে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।

গতকাল মঙ্গলবার আল-আমীনের গ্রামের বাড়ি নান্দাইলের খারুয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, এলাকার লোকজন সবাই জানেন যে এ যুবক একজন প্রতারক। ঢাকায় থেকে তিনি নানা অপকর্ম করে আসছেন।

আল-আমীনের মা মনোয়ারা বেগম জানান, তাঁর ছেলে খুবই ভালো ছিল। বিদেশ থেকে আসার পর কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। তাঁরা জমি বিক্রি করে আল-আমীনের প্রতারণার শিকার অনেককে টাকাও ফেরত দিয়েছেন। সংবাদ পাঠিকাকে বিয়ে করে সংসার করার এবং সে ঘরে একটি সন্তান থাকার কথাও জানান তিনি।

গ্রামের লোকজন জানায়, আল-আমীন ওরফে ফাহিম গ্রামেও একটি বিয়ে করেছিলেন। সেই ঘরে একটি সন্তান রয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সন্তানকে ঢাকায় নিয়ে গেছেন। (কালের কন্ঠ)

০৬ ফেব্রুয়ারি,২০১৯

Share