বর্তমানে এক কেজি চালের দামে এক কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। একদিকে রমজান মাস অপরদিকে অধিক তাপমাত্রার সুযোগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রসালো এ ফলের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
চাঁদপুরে বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। যা প্রতি কেজি চালের দামের থেকেও বেশি।
এদিকে তরমুজের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে চাঁদপুরে। অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় এবছর তরমুজের তেমন আমদানি-রপ্তানি নেই। মাঝে মাঝে কিছু তরমুজ আমদানী হলেও তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
তরমুজের ঘাটতির সুযোগে আকাশচুম্বী কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে পবিত্র রমজান মাস হওয়ায়। রোজাদার ব্যক্তিরা সবসময় ইফতারিতে পানীয় ও রসালো ফল দিয়ে ইফতার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর এই রমজানকে পুঁজি করেই বাজারে কিছু অসাধু খুচরা তরমুজ বিক্রেতারা ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে তরমুজ বিক্রি করে চলেছে। প্রশাসন এবং কর্তৃপক্ষের বাজার মনিটরিং না থাকায় পুরো রমজানের শুরু থেকে এসব ব্যবসায়ীরা চড়া দামে তরমুজ বিক্রি করে আসছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের তেমন আমদানী-রপ্তানী হয়নি। গত বছরগুলোতে চাঁদপুরে পানীয় ফল তরমুজ বাঙ্গি সহ ফলের ব্যাপক আমদানি রপ্তানি হলেও এবছর তার অর্ধেকও আমদানি রপ্তানি হয়নি। তাই পাইকারি ব্যবসায়ীরা অধিক দামে তরমুজ ক্রয় করার কারনে অধিক দামেই তা রপ্তানি করতে হচ্ছে। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা পিস হিসাবে তরমুজ বিক্রি করলেও কিছু অসাধু খুচরা ব্যবসায়ীরা রমজানকে পুঁজি করে অধিক লাভের জন্য বাজারে এবং ফুটপাতে ৭০/৮০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন।
গত কয়েকদিন ধরে চাঁদপুর শহরের ১০ নং চৌধুরী ঘাটস্থ ফলের আরত গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে। যেখানে আগের সৃজনে সবকটি আরতেই তরমুজের ব্যাপক আমদানি এবং রপ্তানি হতো। সেখানে বর্তমানে হাতে গোনা মাত্র দু-তিনটি আড়তে তরমুজের আমদানি-রপ্তানি হতে দেখা যায়।
ফলের আড়ত হাজী ট্রেডার্সের প্রোঃ মাসুদ বেপারী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আগে অনেক কৃষকরাই তরমুজের চাষ করতো। বিশেষ করে খুলনা-মংলা বারজা এলাকা নামে তরমুজের বেশি চাষ হয়ে থাকে। এবার ভোলার তরমুজ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে খুলনা থেকে তরমুজ আমদানী করা হচ্ছে। তিনি জানান এ বছর মেঘ-বৃষ্টি না থাকায় তরমুজ সাইজে অনেকটা ছোট। কিন্তু খেতে অনেক সুস্বাদু ও মিষ্টি।
এবছর তরমুজের দাম নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, যেখানে অন্যান্য সৃজন ১,শ পিস তরমুজ ১২ হাজার টাকায় ক্রয় করা হতো। সেখানে বর্তমানে তা ক্রয় করতে হচ্ছে ২৪/২৫ হাজার টাকা দরে। নদীপথে, ট্রাকে এবং ফেরিতে যাতায়াত খরচ বেশি হওয়ায় এবং চাষ কম হওয়ার কারনে অন্যান্য বছরের তুলানায় এ বছর তরমুজের দাম অনেক বেশি।
এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আড়ত গুলো থেকে পিস হিসেবে তরমুজ ক্রয় করলেও তারা রমজানকে পুঁজি করে তা বাইরে খোলাবাজারে বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
সচেতন মহল মনে করছেন রমজান মাসে নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং তদারকি না থাকায় এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদেরকে জিম্মি করে চড়া দামে ফল বিক্রি করে চলেছেন। এখন থেকে যদি কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বাজার মনিটরিং করেন তাহলে হয়তো এসব অসাধু খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করার সুযোগ পাবেনা।
এ বিষয়ে জেলা মার্কেটিং অফিসার এন এম রেজাউল ইসলামের চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করার বিষয়টি আমরা জানতে পেরে আজ এই মাত্র একটি অভিযান শেষ করেছি। এসময় কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করার দায়ে একজনকে আমরা জরিমানাও করেছি।
তিনি বলেন, আজ আমরা চাঁদপুর শহরের পালবাজার ও কালীবাড়ি শপথ চত্বর এলাকায় বিভিন্ন ফলের দোকান গুলোতে অভিযান চালাই।
ব্যবসায়ীরা জানান তারা ছোট চাইনিজ তরমুজ কেজি দরে বিক্রি করে থাকেন। বড় চাইজের সৃজনী তরমুজ তারা কেজিতে বিক্রি করেন না বলে অস্বীকার করেছেন। তারপরও যদি আমরা এরকম কেজি দরে তরমুজ বিক্রির খবর পাই তাহলে কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি,২৭ এপ্রিল ২০২১