তনুকে ছাড়া পরিবারের আমেজবিহীন প্রথম ঈদ

আজ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ঘরে ঘরে আনন্দ। কিন্তু ঈদের আমেজ নেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী নিহত সোহাগী জাহান তনুর পরিবারে।

গত ঈদেও যে তনু হাসি আনন্দে মাতিয়ে রাখতো সবাইকে। অথচ এই প্রথম সেই তনুকে ছাড়াই ঈদ করছে পরিবার। গত ঈদে তনুই পরিবারের সবার জন্য কেনা-কাটা করেছিলো। তনুর নিজের, দুই ভাই, বাবা এবং মায়ের কাপড় তনুই পছন্দ করতো। তাই তনুর মা-বাবা এবং দুই ভাইয়েরও মনও খারাপ। এই ঈদে পরিবারের কেউ কিছু কিনেনি।

শুধু যে কেনা কাটা তা ই নয়, তনু নানা ধরণের খাবারও তৈরি করতো ঈদের দিন। এগুলো দিয়ে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের আপ্যায়ন করতো। তনুর নিজের পছন্দের খাবারের মধ্যে ছিলো কেক, সমুচা, হালিম, নুডুলস, মাংসের কাবাব, ডিম পিঠা। তনুর বাবার পছন্দ কাচ্চি বিরিয়ানি। তনু সেটিও রান্না করতো।

প্রতি ঈদে তনুর পরিবার সেনানিবাসের বাসায় ঈদ পালন করলেও এবার চলে যাবেন গ্রামের বাড়িতে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে করবে তনুর পরিবার। তনুর মা আনোয়ার বেগম বলেন, এবার আমার শ্বশুরের জন্য শুধু একটি পাঞ্জাবি কিনেছি।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম আরো বলেন, এই রমজানে রোজা কিভাবে থেকেছি, কী রান্না করছি, কী খেয়েছি নিজেও না। উঠতে বসতে শুধু তনুর কথা মনে হয়। এখন নামাজের বিছানায় বসে তনুর বাবায় কান্দে, আমিও কান্দি।

তনুর মা বলেন, সেনানিবাসে আমাদের পাহারা দিয়ে রাখা হচ্ছে। তাই এখানে কোনো প্রতিবেশী এখন ভয়ে আমাদের সাথে মিশতে চায় না। বাইরে গেলে আমাদের সাথে কথা বলে। তিনি বলেন, সিআইডি বলেছে ঈদের পরে তনুর মামলার বিষয়ে আরো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে। মেয়েতো হারিয়েছি, দেখি বিচারটা পাই কিনা।

তনুর মা প্রশ্ন রেখে বলেন- সেনানিবাসের ভিতরে কি গ্রামের মানুষ এসে আমাদের মারবে? তারা তনুকে মেরেছে। আমাদেরকে মারলে তারাই মারবে।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য সিআইডি কুমিল্লার পরিদর্শক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্ত্ াগাজী মো. ইব্রাহিমকে একাধিকবার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার পাশের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পর দিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে তার প্রথম ময়নাতদন্ত করেন ডা. শারমিন সুলতানা। গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তের জন্য তনুর লাশ জেলার মুরাদনগরের মির্জাপুর গ্রামের কবর থেকে উত্তোলন ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

গত ৪ এপ্রিল দেয়া হয় প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে তনুকে হত্যা ও ধর্ষণের আলামত না থাকায় সমালোচনার মুখে পড়ে ফরেনসিক বিভাগ। গত ১৬ মে তনুর কাপড়ে ৩ পুরুষের শুক্রানু পাওয়া যাওয়ার খবর সিআইডি থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আবারো আলোচনায় উঠে আসে প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন।

প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং ডিএনএ প্রতিবেদনের এমন গরমিল তথ্যে ঝুলে যায় ২য় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতের নির্দেশে ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তরের পর ১২ জুন ২য় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেটি নিয়েও বিতর্ক ওঠে।

কুমিল্লা করেসপন্ডেন্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯ :০০ পিএম, ৭ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share