তথ্যমন্ত্রীর প্রতি সাকিবের ক্ষোভ প্রকাশ

এফডিসির অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারি গাফিলতি আর ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন শাকিব খান। ইঙ্গিতে কড়া সমালোচনা করলেন তথ্যমন্ত্রীর।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুক হক ইনুকে ইঙ্গিত করে বুধবার এফডিসিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাকিব বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, সচিব মহোদয় সরকারে যারা বসে আছেন তারা আশ্বস্ত করেই আসছেন এতগুলো বছর ধরে, এই আনছি ওই আনছি আগামী মিটিংয়ে পাস হবে, এই হবে সেই হবে। আবার শুনলাম টাকা ফেরত চলে গেলো, গেলো চলে টাকা ফেরত। কিছুই হলো না। তাহলে কী হলো? টাকা আসবে আর যাবে, মিটিং হবে এই হবে সেই হবে, কবে হবে?’

এর আগে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি বন্ধে মানববন্ধন করে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, নৃত্যপরিচালক সমিতিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) মূল ফটকের বিপরীত পাশের সড়কে বৃষ্টিতে ভিজে মানববন্ধনে অংশ নেন শাকিব খানসহ সংগঠনগুলোর শীর্ষনেতারা।

মানববন্ধন শেষে ‘বসগিরি’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে বিএফডিসির মেকআপ রুমে যান শাকিব। সেখানেই দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন জবাব দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তথ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

এ অবস্থায় আন্দোলনে নামবেন কি না জানতে চাইলে শাকিব খান বলেন, এ আন্দোলনটাতো আমাদের। দাবিটাতো আমাদের। এটা কবে হবে? এতবছর ধরে আন্দোলন করে আসছি, বলে আসছি আমাদের দেন। তারপর দেখেন ভালোকিছু বানাতে পারি কি না। আর ভালো ছবি না বানাতে পারলে এতদিন চললো কেমন করে? যৌথপ্রযোজনাতো এলো দু’দিন ধরে, এই সেদিন নতুন করে। এর আগে কি সিনেমা সুপার ডুপার হিট হয় নাই? ব্লকবাস্টার হিট হয় নাই? ঝাপসা ছবি যখন ছিল তখনও তো সিনেমা হিট হয়েছে। দশ কোটি বারো কোটি টাকা আয় করেছে। দর্শকতো দেশের ছবি দেখতে চায়। দর্শকের মধ্যে মানুষের মধ্যে তো দেশপ্রেম আছে। দেশপ্রেমের অভাব দেখা যাচ্ছে যারা বসে আছে তাদের মধ্যে। দিচ্ছে না কেন? বসছে না কেন? কার সাথে বসছে? টেকনলজির উন্নয়নে কার সাথে বসছে?

কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দামি ক্যামেরা ও যন্ত্রাংশ কেনা হলেও দক্ষ অপারেটরের অভাবে সেগুলো এফডিসির স্টোররুমে পড়ে আছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শাকিব বলেন, প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে ট্রেইনার এনে কেন টেকনিশিয়ান তৈরি করা হচ্ছে না?

এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রীও মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে এসব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জানালে, শাকিব পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘কবে হবে?’

তিনি বলেন, যারা সিনেমা দেখছে তারাও চায় বাংলা সিনেমার উন্নয়ন হোক। আর কি আন্দোলন হতে পারে? আমরাতো আর বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারি না। আমরা তো সরকার পতনের আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলন তো দেশের উন্নয়নের আন্দোলন। আমাদের আন্দোলনে যুক্তি আছে। সরকারকে এটা বুঝতে হবে। দেশকে বিশ্বে সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করা যায় সেই আন্দোলন করছি।

তথ্যমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে শাকিব বলেন, ‘আমরা এমন কোনো আন্দোলন করছি না যে, আপনি নামেন আমরা গিয়ে বসি।’

এতসব কিছুর ভিড়েও দেশি চলচ্চিত্র নিয়ে আশাবাদী শাকিব। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নিয়ে শাকিব বলেন, ‘সবসময় আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বোম্বের সঙ্গে প্যারালালি রান করছে। ওপার বাংলার প্রডিউসার যারা আছে তারা কিন্তু বলে- দেখ, বাংলাদেশ হচ্ছে তামিল ইন্ডাস্ট্রি। এটাকে ইউটিলাইজই করা হচ্ছে না। একটা জিনিস দেখুন, ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ সাড়ে তেরো কোটি টাকা বিজনেস করছে। দেশের মানুষ দেশের সিনেমা দেখতে চায়। তার প্রমাণ পেয়েছি এবারই। প্রথম দিকে সর্বোচ্চ স্থানে এগিয়ে ছিল ‘মেন্টাল’, তারপর ‘সম্রাট’, পরে ‘শিকারি’। ছবিটির সঠিক প্রযোজনা হয়েছে। টিজারেও বাংলাদেশকে প্রোপারলি ইউজ করা হয়েছে। বারবার সংলাপ ছিল, ‘আমি কোত্থেকে এসেছি? বাংলাদেশ থেকে।’ যৌথ প্রযোজনা হলে সেটা ক্রাইটেরিয়া মেনে যৌথ প্রযোজনা করতে হবে। এটা যেন যৌথ প্রতারণা না হয়। টেকনিশিয়ানদের বেতন ফিফটি ফিফটি দিতে হবে।

ভারতীয় চলচ্চিত্র বিনিময়ের তীব্র বিরোধিতা করে সবশেষে শাকিব বলেন, ‘কিন্তু এক্সচেঞ্জ হলে আমাদের মার্কেটটা পড়ে যাবে। (বাংলামেইল)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:০০ এএম, ২১ জুলাই ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share