‘তখন ছোট, খু-উ-ব ছোট বয়স চার ছুঁই ছুঁই’

তখন ছোট। খু-উ-ব ছোট। বয়স চার ছুঁই ছুঁই। থাকতাম বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে, নেদারল্যান্ডের এক ঝকমকে বাড়িতে। বাংলাভাষার সঙ্গে আমার পরিচয়টা সেখানে বসেই। বাবার হাতে ধরেই হয়েছিল বাংলা বর্ণমালায় হাতেখড়ি। ঢুলে ঢুলে পড়তাম ‘অ, আ, ই’। বিজয় দিবসে শিশু মেয়ে সায়রাকে বধ্যভূমিতে ঘুরতে এসে আলোচিত্রীর কাছে এমনটাই জানিয়েছেন অভিনয় শিল্পী বাঁধন।

বাঁধন জানিয়েছেন, বাবার মুখে শুনেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প। যে গল্পের ভাঁজে ভাঁজে লুকানো ছিল মুদ্ধতা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছোটবেলা থেকেই ছিল প্রচন্ড আগ্রহ। বাবাকে বার বার জিজ্ঞাসা করতেন যুদ্ধ কেন হলো? বাবা বুঝাতেন। মুক্তিযুদ্ধ-দেশ নিয়ে ছিল তার অপরিমেয় কৌতুহল। জানতে জানতেই দেশটার প্রতি ভালোলাগা জন্মে যায়। জাদুর বাণের মতো টানতো।’

প্রাণের টানেই কয়েকবছর পর বাংলাদেশে ফিরে এলাম আমরা। ফেরার পথে অনেকেই বলেছিল, বাংলাদেশে গিয়ে কি করবে? বিদেশেই তো শান্তি। বাংলাদেশে নানা সংকট, অভাব। রাস্তাঘাটের নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু বাবার সাফ জবাব, ডালভাত খেয়ে হলেও নিজের দেশে থাকবো। সেই থেকে বাংলাদেশে।

অভিনয় সম্পর্কে জানান, ‘পড়াশোনো শেষ করে নাম লেখালাম অভিনয়ে। মাঝে বিয়েও হলো। কোলজুড়ে এলে একমাত্র কন্যা সায়রা। সায়রার বয়সও পাঁচের মতো। কন্যাকে শোনািই মুক্তিযুদ্ধের গল্প। মা হিসেবে সন্তানের মধ্যে দেশাত্ববোধ জাগিয়ে তোলার খামতি রাখেনি। সময় পেলেই মেয়েকে নিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজরিত স্থানগুলোতে চলে আসি।’

বিজয় দিবস সম্পর্কে বলেন, ‘এবার বিজয় দিবসের দিন তিনেক আগে ভেবেছি, মেয়েকে নিয়ে বধ্যভূমিতে যাবো। সঙ্গে কিছু ছবিও তুলে রাখবো।’

বধ্যভূমিতে আসা মা-মেয়ে দুজনের গায়েই লাল-সবুজ রঙের শাড়ি। হাতে লাল-সবুজ চুড়ি। হাতে বাংলাদেশের পতাকা। টানা দুই ঘন্টার মতো ফটোশুট চলল। ছবি তুললেন আলোকচিত্রী, পুরোটা সময় খুব আনন্দে ছিল সায়রা। চোখে মুখে ছিল কিছু জিজ্ঞাসা। ছিল মুগ্ধতা।

ফটোশুটের ফাঁকেই কথা হলো বাঁধনের সঙ্গে। জানালেন, ‘মেয়ের মধ্যে দেশাত্ববোধর বীজটা বপণ করার দায়িত্ব কিন্তু আমারই। হয়তো স্কুলে বাচ্চাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনানো হয় কিন্তু বাবা-মা নার্সিং না করলে কিন্তু সেই বোধটা বেশিদিন থাকেনা।’

ব্যক্তিগত জীবেন বাঁধন সায়রার মা। তার বাইরে তিনি একজন অভিনয় শিল্পী। শিল্পী হিসেবেও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের অনেক নাটকে দেখা গেছে তাকে। কিন্তু এবার বিজয় দিবসের নাটকে কাজ করা হয়ে উঠেনি। কিন্তু টিভিতে বসে ঠিকই দেখেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের নাটক নিয়েও তিনি প্রচন্ড আশাবাদি, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। কিন্তু ভালোর চেয়ে খারাপ নিয়েই বেশি আলোচনা করি আমরা। তাই আলোচনার ভিড়ে ভালোটা হারিয়ে যায়।’

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ১০:৪০ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

Share