চাঁদপুর

চাঁদপুরের একজনসহ বাদ পড়ছেন আওয়ামী লীগের অনেক চেনা মুখ !

৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত
এখন জোট–মিত্রদের আসন চিহ্নিত করার কাজ চলছে
বাদ পড়ার আলোচনায় ডজনখানেক মন্ত্রী-সাংসদ
বাদ পড়ার বড় কারণ জনপ্রিয়তা হারানো
এ ছাড়া আছে দলীয় কোন্দল ও জোটের সমীকরণ

আজ সোমবার (১৯ নভেম্বর) প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো:

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকা থেকে কারা বাদ পড়ছেন, এই আলোচনা এখন দলটির সব পর্যায়ে। গতকাল রোববার কয়েকজন কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম বাদ পড়ার তালিকা আলোচনায় ছিল। এসব খবরে নেতাদের কেউ বলছেন ‘ঠিকই’ আছে। আবার কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করছেন।

অন্যদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সংসদীয় বোর্ডের সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা-অফিসে ভিড় করা অব্যাহত রেখেছেন।

যাঁদের বাদ পড়ার বিষয়ে দলে জল্পনা-কল্পনা আছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, চাঁদপুরের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু প্রমুখ।

কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক অনেকটা ‘ঝুলন্ত’ অবস্থায় আছেন বলে দলে আলোচনা আছে।

বাদ পড়ার পেছনে কারণ হিসেবে যেসব বিষয় এসেছে সেগুলো হচ্ছে জনপ্রিয়তা হারানো ও দলীয় কোন্দল। আবার জোট-মহাজোটের সমীকরণে পড়ে কারও কারও কপাল পুড়ছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের ফোরাম সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। বাদ পড়ার আলোচনায় থাকা নেতাদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। যেসব আসনে বর্তমান সাংসদেরা বাদ পড়তে পারেন বলে আলোচনা আছে, সেসব আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অনেকেই সবুজ সংকেত পাওয়ার দাবি করেছেন। তবে তাঁরাও প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে দুটি। কিন্তু অনানুষ্ঠানিকভাবে গণভবনে প্রায় প্রতিদিনই বসছেন সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। এ থেকে জোট ও মিত্রদের আসন চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

প্রায় ২০০ আসনে প্রার্থী নিশ্চিত হয়ে গেছে। ৪০-৫০ জন বাদের তালিকায় আছেন। কিছু আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম রাখা হয়েছে। জোট ও মিত্রদের জন্য কোন কোন আসন ছেড়ে দেওয়া হবে, সেটা নিয়ে কাজ চলছে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী কারা বাদ পড়ছেন, কারা নতুন আসছেন, তা আজ সোমবার চূড়ান্ত হতে পারে।

নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের, সংঘাতও হয়েছে অনেকবার। মাদারীপুর সদর আসনে বাহাউদ্দিন নাছিম মনোনয়ন পাচ্ছিলেন না শাজাহান খানের কারণে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠার পর সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বাদ পড়েন। এই আসনে সাংসদ হন বাহাউদ্দিন নাছিম। এবার এখানে মনোনয়নপ্রাপ্তির দৌড়ে আছেন বাহাউদ্দিন নাছিম, সৈয়দ আবুল হোসেন ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান (গোলাপ)। বাহাউদ্দিন যাতে মনোনয়ন না পান, সে বিষয়ে শাজাহান খান ও সৈয়দ আবুল হোসেন দুজনই তৎপর বলে দলীয় সূত্র জানায়। এই কোন্দলের জেরে আবদুস সোবহান সুযোগ পেতে পারেন বলে আলোচনা আছে।

চাঁদপুর-১(কচুয়া) আসনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর দলে গুরুত্ব হারিয়েছেন অনেক আগেই। ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য সমালোচিত হয়েছেন। বয়সও একটা বিবেচনায় আছে দলের নীতিনির্ধারকদের। এ জন্য এবার চাঁদপুর-১ আসন থেকে তিনি বাদ পড়তে পারেন বলে আলোচনা আছে।

আরেক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুনেরও বাদ পড়ার আলোচনা আছে। এই আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা আছে।

শরীয়তপুর-১ আসনে বি এম মোজাম্মেল হকও দুবারের সাংসদ। এই আসনে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় দলাদলিতে মোজাম্মেল অনেকটাই কোণঠাসা। এ অবস্থায় তাঁর বাদ পড়া এবং ইকবাল হোসেনের মনোনয়ন পাওয়ার জোরালো আলোচনা আছে।

শরীয়তপুর-২ আসনেও প্রার্থী পরিবর্তনের আলোচনা আছে। এই আসনের দীর্ঘদিনের সাংসদ সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী। এই আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ও শওকত আলীর ছেলে খালেদ শওকত আলী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। শওকত আলীর ছেলের বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আগ্রহ আছে বলে জানা গেছে। এনামুল হক শামীমও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু অসুস্থ। নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিয়াজুল কবিরের (কাওছার) নাম ইতিবাচক আলোচনায় আছে।

বয়সের কারণে পাবনা-৪ আসনে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এবং নওগাঁ-৪ আসনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক বাদ পড়তে পারেন বলেও আলোচনা আছে।

নোয়াখালী-৪ আসনে একরামুল করিম চৌধুরী দুবারের সাংসদ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রার্থী হিসেবেও বেশ শক্তিশালী। কিন্তু তাঁর কপাল পুড়তে পারে মহাজোটের কারণে। এই আসনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন যুক্তফ্রন্টের নেতা ও বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান। যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে একরামুল করিম চৌধুরীর ঝুঁকি আছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে তাঁর নির্বাচন করার আগ্রহ খুব একটা নেই। রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বেশ কয়েকবারই। বরং নিজের ভাই এম এ মোমেন যাতে পান, সেদিকেই তাঁর তৎপরতা বেশি। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর আসনে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদকে ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলেও আলোচনা আছে।

জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার সাংসদ দুই মেয়াদের, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন এর আগে​র মেয়াদে। তাঁর মনোনয়ন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা গতকাল দলের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচিত ​বিষয় ছিল। তবে তাঁর আসনে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন। তিনি গতকাল গণভবনে গিয়ে নিজের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় প্রার্থী প্রায় ঠিক করে ফেলা হয়েছে। এখন জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করছেন। তাঁদের কারা কারা প্রার্থী হতে চান, সেই তালিকা চাওয়া হয়েছে। আজ সোমবারের মধ্যে তা পাওয়া যাবে। এরপর তাঁদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসতে পারেন। তিনি বলেন, চূড়ান্তভাবে জোটের সমীকরণ যেখানে দাঁড়াবে, সেখান থেকেই পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ জন্য চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগতে পারে।

বার্তা কক্ষ

Share