ঢাকা নগরীতে উঠতি মাস্তানদের সমাগম : আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

‎Tuesday, ‎May ‎12, ‎2015  09:21:21 PM

হাসান সাইদুল :

রাজধানীর উঠতি মাস্তানরা এখন নতুন ঠিকানায়। নির্বাচনের পরে তারা এবার শক্ত ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আশ্রয়-প্রশ্রয়ের জন্য নতুন ঠিকানা হয়েছেন কিছু ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

গত ক’দিন রাজধানীর এলাকা ঘুরে এ চিত্রই মিলেছে। অথচ পুলিশের খাতায় এসব উঠতি মাস্তানের নাম-ঠিকানা নেই। কোনো কোনো এলাকায় সিটি নির্বাচনকে ঘিরেই এসব মাস্তানের উত্থান। তখনই তাদের হাতে দেখা গেছে আগ্নেয়াস্ত্র। কোনো কোনো এলাকায় এ অস্ত্রের ব্যবহারও হয়েছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করেও তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সূত্র মতে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে একটি মাস্তান গ্র“পের উত্থান হয়েছে। নির্বাচনে তাদের কোনো কোনো প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকেরা ব্যবহার করেছেন। দীর্ঘদিন এসব মাস্তানের কোনো ঠিকানা না থাকলেও এখন তাদের ঠিকানা হয়েছে নবনির্বাচিত অনেক কাউন্সিলরের আস্তানা।

অবস্থান রাজধানীর হাজারীবাগের টালি অফিস চৌরাস্তা হয়ে রায়েরবাজার দিকে যাওয়ার পথের কয়েকটি চায়ের দোকান। গত শনিবার এ দোকানগুলোতে দেখা যায়, বেশ কিছু কিশোর-যুবককে আড্ডা দিতে। স্থানীয় কয়েকজন দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, এ কিশোর-যুবকদের দিনভর আড্ডা এ এলাকায়। এরা এখন ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের আতঙ্কের কারণ।

ঝিগাতলার এক ব্যবসায়ী জানান, কয়েক বছর ধরে রাতের বেলায় মাতালদের উৎপাত ছিল না। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। রাত ১১টা হলেই মাতালদের উৎপাত শুরু হয়ে যায়। ওই ব্যবসায়ী বলেন, রাত ১২টা হলেই এখন দোকান বন্ধ করে দেন। এরপরেও অত্যাচার থেকে রেহাই পান না। গত ১ মে রাত ১২টার কিছু পরে তার দোকান বন্ধ ছিল। এ সময় তিনজন এসে বাইরে থেকে সিগারেট চায়। সিগারেট দিতে দেরি হলে তার দোকানের শাটারে একের পর এক লাথি মারতে থাকে মাতালের দল। ব্যবসায়ী বলেন, ওই ঘটনার পর থেকে তিনি চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন। এ এলাকার আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী এ একই অভিযোগ করেন।

রাজধানীর ফকিরাপুলের এক প্রেস মালিক বলেন, সিটি নির্বাচনের এক দিন পরেই কয়েক যুবক তার দোকানে এসে চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা না দিলে তার প্রেস বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। ওই ব্যবসায়ী জানান, তিনি এখন ভয়ে আছেন।

রাজধানী বাশতলা নতুন বাজার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই অবস্থা প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। উঠতি বয়সী উঠতি মাস্তানরা রাস্তার পাশে টং দোকানে আড্ডা দেয়। স্কুল কলেজ ছাত্রীদেরও উত্তক্ত করতে দেখা গেছে সংশি¬ষ্ট এলকাতে।

সংশি¬ষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাউন্সিলর পদে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়াসহ চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, খুন-জখমেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা অনেক সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দেন নতুন করে। সূত্র জানায়, এসব এলাকায় গোলাগুলিসহ নির্বাচনের দিনেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন অনেক এলাকায় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। এমনকি প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গোলাগুলি করেও এখনো তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ দিকে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় মাস্তানদের নিজেদের মধ্যেই শুরু হয়েছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। এ লড়াইকে কেন্দ্র করে গত বুধকবার রাজধানীর কদমতলী মানিক মিয়া (৩০) নামে একজন গুলিতে নিহত হয়েছেন। রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে প্রতিদিন মহড়া চলে সন্ত্রাসীদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, তারা খুবই ভয়ের মধ্যে আছেন। এ সন্ত্রাসীদের হাতে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে আহত হয়েছেন এক যুব মহিলা লীগ নেত্রী এবং তার পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের পরও ওই সন্ত্রাসীদের পুলিশ গ্রেফতার করছে না।

এসব উঠতি মাস্তান নিয়ে মাথাব্যথা নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। মহানগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, উঠতি মাস্তানদের কোনো তালিকা নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় তারাই পুলিশের তালিকাভুক্ত হয়। এ দিকে হঠাৎ করে উঠতি মাস্তানদের দৌরাত্ম্য নিয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারঘতা প্রকাশ করেন।

এ দিকে উঠতি মাস্তানদের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি রাজধানীজুড়ে শুরু হয়েছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনকেন্দ্রিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে কোনোই তৎপরতা দেখাননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সিটি নির্বাচনের আগে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে যতটা না তৎপর ছিলেন তার চেয়ে বেশি তৎপর ছিলেন ২০ দলীয় জোট প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের আটকে। আর এই ফাঁকে পাড়া-মহল¬ায়ও কিছু অস্ত্রধারী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সূত্র জানায়, ওই আগ্নেয়াস্ত্রই এখন দুর্বৃত্তরা ব্যবহার করছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। সর্বশেষ গত রোববার রাতে রাজধানীর বাড্ডায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন বাড্ডা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোফাজ্জল হোসেন রাইয়ান।

স্থানীয় জাগরণী সংসদ ক্লাবের ভেতরে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় আরো এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সিটি নির্বাচনের বিবাদকে কেন্দ্র করে এই খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। খুনিরা ওই এলাকারই বলে জানা যায়। তারা রাইয়ানের পূর্বপরিচিতি। একাধিক সূত্র বলেছে, আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতার কারণে এখন সন্ত্রাসীদের হাতে হাতে তা চলে যাচ্ছে।

চাঁদপুর টাইমস : ‍এইচএস/এমআরআর/২০১৫

 

নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes

চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Share