ঢাকা মহানগরীকে যানজটমুক্ত করে মানুষের পথচলা সুগম করতে বিগত সাড়ে ৮ বছরে সরকার রাজধানীতে ২৯ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে।
এ সময়ে ৬টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ১৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২০ মিটার দীর্ঘ খিলগাঁও ফ্লাইওভার লুপ নির্মাণ করা হয়। গত বছরের ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের গুরুত্বপূর্ণ অংশের উদ্বোধন করবেন।
সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা বাসসকে জানান,২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একের পর এক যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, কুড়িল বহুমুখী ফ্লাইওভার, বিমানবন্দর-মিরপুর রাষ্ট্রপতি মো.জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার,মিরপুর-বনানী ফ্লাইওভার এবং বনানী ওভারপাস, বিজয় সরণি-তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সংযোগ সড়ক ও রেলওয়ে ওভারপাস এবং তেজগাঁও-মগবাজার-মৌচাক-শান্তিনগর ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে এসব ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বাসসকে জানান, ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন । এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। এটি মহানগরীর সবচেয়ে দীর্ঘ ফ্লাইওভার। এ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ হওয়ায় ঢাকার শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী,সায়েদাবাদ, টিকাটুলি,গুলিস্তান হয়ে নিমতলী এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলীয় এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৩০টি জেলার যাতায়াতে মানুষকে এখন আর যানজটের ঝামেলা পোহাতে হয় না।
২০১৩ সালের ৪ আগস্ট জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় কুড়িল বহুমুখী ফ্লাইওভার প্রকল্পটি। ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পের বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ৩০৬ কোটি টাকা। ঢাকার সঙ্গে পূর্বাচল নতুন শহরের সংযোগ স্থাপন, বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণি সংযোগস্থলের যানজট হ্রাস এবং নগরীর উত্তর-পশ্চিম অংশের পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল রাজউক। এ ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের পর এখন আর বিমানবন্দর সড়কে যাতায়াতকারীদের ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে সময় ব্যয় করতে হয় না।
২০১৩ সালের ২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দর থেকে সেনানিবাস হয়ে মিরপুর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি মো.জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। চার লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি দৈর্ঘ্যে ১ হাজার ৭৯৩ মিটার। ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৯৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন এ প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন করেছে সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশনের অধীনস্থ ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন।
এ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে মিরপুরবাসী এখন ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্ট সড়কে পৌঁছাতে পারেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সামনে দিয়ে ১১ কিলোমিটার সড়কের পরিবর্তে এখন থেকে তাদের অতিক্রম করতে হয় মাত্র ৩ কিলোমিটার।
২০১৩ সালের ২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর-বনানী ফ্লাইওভার এবং বনানী ওভারপাস উদ্বোধন করেন। ৩৬০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ফ্লাইওভার ও ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পে ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ৩৬ মিটার, ওভারপাসের মোট দৈর্ঘ্য ৮১৪ দশমিক ৪৫ মিটার। সরকারের অর্থায়নে সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের ১৬ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।
মিরপুরবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত মিরপুর-বনানী ফ্লাইওভার ঢাকা মহানগরীর যানজট কমাতে ভূমিকা রাখছে। এই ফ্লাইওভারের ফলে মিরপুর থেকে বনানী এবং বিমানবন্দরে যাতায়াত সময় কমিয়ে দিয়েছে।
২০১০ সালের ২০ এপ্রিল বিজয় সরণি-তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সংযোগ সড়ক ও রেলওয়ে ওভারপাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ হাজার ১১৪ মিটার দীর্ঘ এ ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় হয় ১১৪ কোটি টাকা। ঢাকা শহরের এয়ারপোর্ট রোডের পশ্চিমাংশ বিশেষ করে শেরে বাংলা নগর,মিরপুর,কলাবাগান, লালমাটিয়া ও ধানমন্ডি থেকে গুলশান, উত্তরা,বারিধারা ও এয়ারপোর্ট রোডের যাতায়াতকারী জনসাধারণকে প্রতিনিয়ত অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি দিয়েছে এ ওভারপাসটি।
৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) দিয়েছে ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
ফ্লাইওভারটি আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এ ফ্লাইওভারটি পুরোপুরি চালু হলে রাজধানীর সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার রেলক্রসিং এলাকায় নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়,ঢাকা রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত অংশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপির) মাধ্যমে ৩৪ কিলোমিটার এবং শান্তিনগর থেকে মাওয়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল সেতু বিভাগের অধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক প্রকল্পের। এ প্রকল্পের অধীনে বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালি পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে। (বাসস )
নিউজ ডেস্ক
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৪:১০ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৭,বুধবার
এজি