চাঁদপুর

সাক্ষাতকারে চাঁদপুর-ত্রিপুরার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যা বললেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেছেন, নিজেদের উৎপাদিত উদ্ধৃত্ত খাদ্য ও পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা উভয়ে লাভবান হতে পারে।

বিশেষ করে ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের ব্রাহ্মনবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। চাঁদপুর থেকে আলু ও বিভিন্ন ধরনের মাছ ত্রিপুরায় যেতে পারে।

চাঁদপুরের পদ্মার ইলিশের চাহিদা রয়েছে পুরো ভারতজুড়ে। আর এখান (ত্রিপুরা) থেকে চাঁদপুর যেতে (আসতে) পারে চিনি, চাপাতা ও আনারস। এ জন্য দরকার দুই দেশের সরকারের মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানী-রপ্তানীর ব্যাপারে কিছু নতুন চুক্তি।

চাঁদপুরের সিনিয়র সাংবাদিক রহিম বাদশার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিপ্লব কুমার দেব এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যটি ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে অনেক দূরে।

দিল্লী, বোম্বের চেয়ে ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। বাংলাদেশের সাথে আমাদের যাতায়াত ও যোগাযোগ সহজতর। তাই সেখান থেকে অল্প খরচে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পণ্য আনা-নেয়া করা সম্ভব।

বাংলাদেশ থেকে কি কি পণ্য ত্রিপুরা যেতে পারে- এই প্রশ্নের জবাবে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টেসের বড় বাজার হতে পারে ত্রিপুরা। তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে আমাদের এখানে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে আলু, চাল, শাক-সবজি, মাছ আসতে পারে।

ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে কি কি পণ্য আসতে পারে- এর জবাবে বিপ্লব দেব বলেন, আমাদের এখান থেকে চিনি, আনারস, চাপাতা, রাবার, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ রপ্তানীর সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে দেড়শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এটি আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

এর সাথে যোগ করে তিনি আরো বলেন, বৈধপথে এসব পণ্য আমদানী-রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলে সীমান্তে চোরাকারবার বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি দুই দেশ এই খাতে ব্যাপক রাজস্ব আয় করতে পারবে। আমরা বাণিজ্যের সম্পর্ক ও সুবিধা বিনিময়ের সম্পর্ক করতে পারি।

ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ সাক্ষাৎকার প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। অত্যন্ত সহজ-সরল ও সাবলীলভাবে বাংলা ভাষায় নিজের দেশ ভারত ও পূর্বপুরুষের ভূমি বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নেরও প্রশংসা করেন তিনি। আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম জোরদারের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা উভয়ে আমাদের উদ্ধৃত্ত খাদ্য ও পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে আমজনতাকে সরাসরি লাভবান ও সুবিধা দিতে পারি। তখন আমজনতা উভয় দেশের সরকারকে সমর্থন দেবে, সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। দু’দেশের অমীমাংসিত সমস্যাগুলোও সমাধান সহজতর হবে। এভাবে আমরা দুই দেশ লাভবান হতে পারবো।

উদাহরণ দিতে যেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মৌসুমে বাংলাদেশে প্রচুর আলু উৎপাদিত হয়। কোল্ডস্টোরে রাখার পরও সংরক্ষণের অভাবে অনেক আলু পঁচে নষ্ট হয়। দামও ঠিক মতো পায় না কৃষক।

এই আলু ত্রিপুরায় আনা গেলে বাংলাদেশের কৃষকরা আলুর দাম একটু বেশি পাবে অন্যদিকে ত্রিপুরার মানুষও কম দামে পর্যাপ্ত আলু পাবে।

কারণ, আমাদেরকে বিশাল পথ পাড়ি দিয়ে পাঞ্জাবসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আলু আনতে হয়। এতে জ্বালানী খরচ হয় প্রচুর। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংবা চাঁদপুর থেকে আলু এলে আমাদের এখানকার কোল্ডস্টোরগুলোও আর খালি পড়ে থাকতে হবে না।

বাণিজ্যের এসব সম্ভাবনা নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে জানিয়ে বিজেপির এই গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, অচিরেই বাংলাদেশ সরকারের সাথে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

সে জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় ও ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শীর্ষনেতৃত্ব বাংলাদেশ সফর করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সংক্রান্ত আরেকটি প্রতিবেদন- ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন চাঁদপুরের বিপ্লব

আগরতলা, ত্রিপুরা (ভারত) থেকে ফিরে সিনিয়র সাংবাদিক রহিম বাদশা

Share