চাঁদপুর

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও চাঁদপুর

আজ জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-এর জন্মদিন। ১৮৮৫ সালের আজকের এ দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৩৭ সালে চাঁদপুরে এসেছিলেন। তিনি চাঁদপুর মুসলিম যুবক সমিতির একাদশ সাধারণ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি চাঁদপুরে বক্তব্যকালে নারী শিক্ষার প্রতি জোর দেন।

তিনি বলেন, ‘…এ প্রসঙ্গে পর্দ্দার কথা আসবে—আমি পর্দ্দার বিরোধী নই; কিন্তু প্রত্যেক জিনিসেরই একটা সীমা আছে। মনে করুন কোনও মুসলমান নারীর জীবন রক্ষার জন্য পুরুষ চিকিৎসকের দ্বারা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়েছে, এখানে কি পর্দ্দার দোহাই দিয়ে মেয়েটিকে মেরে ফেলতে হবে? শরী’অত তো তেমন বিধান দেয় না …’।

শহীদুল্লাহ্‌ মনে করতেন, ‘…নারী পুরুষের ভোগের জিনিস নহে, তাহারা আদরের পুতুল নহে, পুরুষকায়ার ছায়া নহে। জীবন যুদ্ধে নারী পুরুষের সহযোগিনী, জীবনের লক্ষ্যপথে নারী-পুরুষের সহযাত্রিণী। নারী যদি পুরুষের দাসী হয়, তবে পুরুষও নারীর দাস, ইসলামে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক—এইরূপ স্বীকার করে। পুরুষের আত্মগ্রাসিনী নীতির ফলে নারীর স্বত্ব খর্বীকৃত হইয়াছে। কিন্তু সেদিন আসিবেই যেদিন মুসলিম মহিলা কুর’আনের দোহাই দিয়া, হাদীসের দৃষ্টান্ত দিয়া তাহার ন্যায্য স্বত্ব অধিকার করিবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘…মানবদেহে যেমন দুই চোখ, দুই হাত, দুই পা, সমাজ দেহে তেমনি নর–নারী। যে দেহে এক চোখ কানা, এক হাত নুলা, এক পা খোঁড়া সে দেহ বিকলাঙ্গ, নারীজাতির সুষ্ঠু উন্নতি ব্যতীত সমাজকে সমুন্নত বলা যায় না…।’

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ যশোর জেলা স্কুলের শিক্ষক (১৯০৮-০৯) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন; তারপর সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে কিছুদিন প্রধান শিক্ষকের (১৯১৪-১৯১৫) দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত চব্বিশ পরগণার বসিরহাটে আইন ব্যবসা করেন। ১৯১০ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে বেদ পঠনের অনুমতি দেননি পন্ডিত সত্যব্রত সামশ্রমী। স্যার আশুতোষের চেষ্টায় ও কলিকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি বেদপাঠের সুযোগ পান কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকর্মী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সালে পর্যন্ত আইন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ফ্রান্সের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে পি.এইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখান থেকে ১৯৪৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর তিনি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৩ – ১৯৫৫ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ফরাসি ভাষার খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও পালি বিভাগে যোগদান করে ১৯৫৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

বিভিন্ন ভাষায় ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-র দখল ছিল অসাধারণ ও অসামান্য। উর্দু ভাষার অভিধান প্রকল্পেও তিনি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। পরে পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্পের সম্পাদক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৬১ – ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকল্পের অস্থায়ী সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক গঠিত বাংলা একাডেমির পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। তার নেতৃত্বে বাংলা পঞ্জিকা একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ পায়।
আংশিক উৎস কবি ও লেখক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের ওয়াল থেকে

Share