বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ১২০ ন্যানোমিটার। অর্থাৎ কোভিড ১৯। সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশ এই করোনা দুর্যোগে মহামারির একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের জীবন-জীবিকা, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা সবকিছুই যেন এক ধরনের হুমকির মুখোমুখিতে দাঁড়িয়েছে। সমস্যা কেবল শুধু বাংলাদেশেরই নয়, পুরো পৃথিবী জুড়েই সমস্যা তৈরি হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দী হচ্ছে এমন একটি বৈপ্লবিক সময় যেখানে যে দেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও দক্ষতায় এগিয়ে থাকে সেই দেশ তত বেশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হয়। আর এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার ও বিকাশের উপর গুরুত্ব দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এনে দিচ্ছে নতুন নতুন সাফল্য। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি একটি ভার্চুয়াল প্রোগ্রামে বলেছিলেন, আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে আমাদের অনলাইন এডুকেশন সিস্টেমে যেতে হতো, সেখানে আমরা অনেক আগেই এই সংকটকালীন সময়েই অনলাইন এডুকেশন চালু করতে পেরেছি।
আরও পড়ুন… করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে চাঁদপুর ড্যাফোডিল
করোনার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে যে বড় ধরনের ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে, তা চাইলেই পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে অনেকাংশেই লাঘব করা সম্ভবও বটে। যেখানে করোনার মতো মহামারি সমস্যায় যখন স্কুল-কলেজে উপস্থিত হওয়া নিরাপদ ছিলো না, সেখানে শিক্ষা ব্যবস্থা ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ই-লার্নিং ধারাকে অব্যাহত রাখাই বড় সমাধান।
উন্নত বিশ্বে দূরশিক্ষণ (ডিসটেন্স লার্নিং) ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে আরো কয়েক বছর আগ থেকে।
বাংলাদেশেও দূরশিক্ষণের স্বপ্ন দেখেছেন আইটি খাতে স্বনামধন্য ব্যক্তি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা এবং ড্যাফোডিল ফ্যামিলির চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান। ড্যাফোডিলের সকল প্রতিষ্ঠানকে স্মার্ট এডুকেশনের আওতায় এনে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং মনিটরিংয়ের জন্য ২০১৯ সালেই সম্পূর্ণ স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেমের যাত্রা শুরু করেছিলেন। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠানের পড়াশুনাসহ সকল কার্যক্রম অনলাইনে স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেমের পরিচালনা করাই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। অর্থাৎ পুরো শিক্ষা কার্যক্রমটিই একটি ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে পরিচালিত করা। শুরুতে চাঁদপুর ড্যাফোডিলের সকল প্রতিষ্ঠান এতে অভ্যস্ত না হলেও ধীরে ধীরে এর আওতায় চলে আসে।
বাংলাদেশে ই-লার্নিংয়ের গুরুত্বটি ফুটে উঠে ১৭ মার্চ ২০২০ সালে। যখন করোনা মহামারীর ফলে সারা দেশের সকল স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন স্থবির হয়ে যায় শিক্ষা কার্যক্রম। স্থবিরতা কিছুটা হ্রাস করতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, চাঁদপুর শুরু করে অনলাইন পাঠদান। প্রথমে নিজ উদ্যোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়টি ১৯ মার্চ থেকে ফেইসবুক লাইভের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস শুরু করে। একে একে কলেজের অন্যান্য সহকর্মীরাও এগিয়ে আসেন অনলাইন ক্লাসে। কিন্তু এই পদ্ধতিটি ছিলো শুধুমাত্র একমুখী। অপর প্রান্তে শিক্ষার্থীরা পুরো ক্লাসটি উপভোগ করছে কি-না তা বোঝার উপায় ছিলো না। যদিও কমেন্টের মাধ্যমে কিছু কিছু শিক্ষার্থী তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেও তা যথেষ্ট ছিলো না। ফেইসবুক লাইভের পাশাপাশি স্মার্ট এডুকেশনের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস পরিচালনার লক্ষ্যে শিক্ষকগণ গুগল মিট, গুগল ক্লাসরুমের উপর ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
ভার্চুয়াল ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাইড শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে ভার্চুয়াল ক্লাসের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গুগল মিটের মাধ্যমে গত ১৫ এপ্রিল ২০২০খ্রি. থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করে।
শুরুর দিকে অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জটিলতায় পরতে হয়েছে। যেমন: স্মার্টফোন বা ডিভাইসগত সমস্যা ও পারদর্শীতা, ধীরগতি ইন্টারনেট সেবা, করোনার কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতা ছিলো অন্যতম। কিন্তু এ কথা সত্য যে শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কিত এবং তারা নিজেরাও বুঝতে পেরেছে যে, যেভাবে ছুটি বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করে তাদেরকে পড়াশোনায় যুক্ত রাখতে অনলাইন ক্লাসের বিকল্প নেই। তাই শিক্ষক এবং অভিভাবকদের আন্তরিক সহযোগিতায় ড্যাফোডিল ফ্যামিলির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনায় এবং অধ্যক্ষ মো: জামশেদুর রহমানের নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে ড্যাফোডিল কলেজের অনলাইন ক্লাস খুব অল্প সময়েই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
রুটিন মাফিক অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করে ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একাদশ ও ২০২০ সালের পরীক্ষার্থী ব্যাচ। শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে যাতে ভেঙ্গে না পরে তাই গাইড শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ এবং করোনা সচেতনতার বার্তা দিয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করতে ফেইসবুক গ্রæপ এবং ম্যাসেঞ্জারের ব্যবহার শুরু করে। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে পারায় একাদশ শ্রেণির মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা ও প্রথম বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা এবং ২০২০ সালের পরীক্ষার্থী ব্যাচের মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়েছিলো। এ অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিলো শতকরা ৯৪ ভাগ।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বাড়তে থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভার্চুয়াল মিথস্ক্রিয়া থাকায় নির্দিষ্ট রুটিন ও নিয়ম মাফিক ক্লাস পরীক্ষা অনলাইনে নেয়া এবং ফলাফল প্রদান সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে সৃজনশীল অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, ভার্চুয়াল অভিভাবক সমাবেশ, বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার প্রদান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২০-২১ সেশনের নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে সক্ষম হয়েছি। ভর্তির পর থেকে এখন অবদি তাদেরকেও অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন ব্যাচ ভার্চুয়াল মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।
করোনার প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক বিষয়টি বিবেচনা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ সকল শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের উপর ২০% ছাড় এবং আর্থিক অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যেসকল শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অনলাইন ক্লাস থেকে বি ত হচ্ছে, সে সকল শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসের রেকর্ডিং মেইলে এবং গ্রুপে পাঠানো হয়ে থাকে। ফলে তারা ক্লাসগুলো পুনরায় দেখার সুযোগ পেতো এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সহায়ক হতো।
অনলাইন ক্লাসগুলো আরো প্রাণবন্ত এবং গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে ডেস্কটপ, ওয়েবক্যাম, হেডসেট এবং উচ্চগতি সম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসহ অনলাইন ক্লাসের সকল সরঞ্জামাদি নিয়ে ৬টি স্টুডিও (ক্লাসরুম) স্থাপন করা হয়। শিক্ষকদের অনলাইন দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা মাসিক মিটিংয়ে স্মার্ট এডুকেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ড্যাফোডিল ফ্যামিলির চেয়ারম্যান ড. মো: সবুর খান তদারকি ও পরামর্শ প্রদান করে থাকেন।
করোনাকালীন সময়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অনলাইন ক্লাস এবং পরীক্ষার ফলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সুধীজনের প্রশংসা কুঁড়িয়েছে।
শুধুমাত্র ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ নয়, চাঁদপুরের ড্যাফোডিল ফ্যামিলির সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে চাঁদপুর ড্যাফোডিল ফ্যামিলির পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনায় অনলাইন কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে এখন পর্যন্ত। উন্নত বিশে^র সাথে তাল মিলাতে এবং প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ চাঁদপুর স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
চাঁদপুর প্রতিনিধি,১৫ মার্চ ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur