১০ জুলাই সোমবার প্রধান বিচারপতির আদালতে দেশের বহুল আলোচিত ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দেয়া শর্ত সাপেক্ষে জামিনের আদেশের উপর দেয়া উচ্চ আদালতের দেয়া রায় পূণ:বিবেচনার জন্য দাখিলকৃত আবেদনের উপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুনানীতে বিবাদী পক্ষ আদালতে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেন। এ সময় ডেসটিনি’র আইনজীবী প্যানেলের প্রধান, জৈষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিষ্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ আদালতকে বলেন, ডেসটিনি কর্তৃপক্ষকে কারাগারে আটকে রেখে ইতোপূর্বের দেয়া রায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব না।
আসামীদের জামিনে মুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে প্রত্যেক দিন থানায় হাজিরা ও প্রতি সপ্তাহে কোর্টে হাজিরা দেয়াসহ সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহাড়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ, ডেসটিনি’র এমডিকে কারাগারে আটকে রেখে নির্ধারিত সময়ে এর আগে যেমন ৬ সপ্তাহের মধ্যে গাছ বিক্রি করে দুই হাজার আটশত কোটি টাকা দুর্নীতি দমন ব্যুরো বরাবর জমা দেয়ার মত শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয়নি, আগামীতেও সম্ভব না।
তিনি আরো বলেন, যারা বাইরে আছেন তারা নিজের জিনিষ নিজে বিক্রি করতে পারছে না, সেখানে মোহাম্মদ রফিকুল আমীনকে কারাগারে আটকে রেখে গাছ কেন, অন্য যেকোন সম্পত্তি বিক্রি করেও আদালতের শর্ত পূরণ করা সম্ভব না। আসামীদের জামিনে মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে আদালতের যেকোন শর্ত পূরণ করা সম্ভব। এখন পর্যন্ত গাছ গাছের জায়গায়ই আছে। সেটা বিক্রি করে জামিনের আদেশের শর্ত পূরণ করতে হলে ডেসটিনি’র এমডি মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের জামিন দেয়া আবশ্যক।
রোকন উদ্দিন মাহমুদ আদালতকে আরো জানান যে, বর্তমানে ডেসটিনি’র সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে, সকল ব্যাংক হিসাব বন্ধ করা হয়েছে, অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ডেসটিনি’র যে কয়েকজন কর্মকর্তা এখনো কোম্পানীর সাথে সম্পৃক্ত আছেন তারা চেষ্টার কোন ত্রুটি করেন নাই। কিন্তু কোনভাবেই তাদের পক্ষে গাছ বিক্রি করা সম্ভব হয় নাই। এ অবস্থায় তিনি আদালতের কাছে ডেসটিনি’র এমডি মোহাম্মদ রফিকুল আমীন এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের জামিনে মুক্তির আবেদন করেন।
এ সময় আদালত আইনজীবীর কাছে জানতে চান, বর্তমানে ডেসটিনি’র ব্যাংক হিসাবে কত টাকা জমা আছে? উত্তরে রোকন উদ্দিন মাহমুদ আদালতকে জানান, বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে সর্বসাকুল্যে ১৪৭ কোটি টাকার মত জমা আছে। এ সময় আদালত পরবর্তী শুনানীর দিন ব্যাংকে জমা টাকার বর্তমান অবস্থা আদালতে দাখিল করার আদেশ দেন।
আগামী সপ্তাহে এ বিষয়টির উপর পূণ:রায় শুনানী অনুষ্ঠিত হওয়ার আদেশ দিয়ে আজকের মত আদালত মূলতবী ঘোষণা করেন।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ জুলাই ডেসটিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুদকের মানি লন্ডারিং মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি-২০০০ লি: এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন হাইকোর্ট থেকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন আদেশ পেয়েছিলেন। কিন্তু জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপীল করলে তাঁদের মুক্তির বিষয়টি আটকে যায়। পরবর্তীতে একই বছরের নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টের আপীলেড ডিভিশন শর্ত সাপেক্ষে ডেসটিনির শীর্ষব্যক্তিদের জামিনে মুক্তির আদেশ বহাল রাখেন। কিন্তু শর্ত দেয়া হয় যে, ছয় সপ্তাহের মধ্যে গাছ বিক্রি করে দুই হাজার আটশত কোটি টাকা দুদকের কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু শর্ত পূরণ করতে না পারা ও আইনী জটিলতার কারণে বিগত প্রায় এক বছরেও তাঁদের কারামুক্তি ঘটেনি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানী ঢাকার কলাবাগান থানায় দায়েরকৃত মানি লন্ডারিং মামলায় জামিন চেয়ে জেলে যান ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি ২০০০ লি: এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। সেই থেকে কারাগারে আছেন ডেসটিনির এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা।
ডেস্ক রিপোর্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২: ০৫ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার
এএম