শুরুতে কৃপণ বোলিং, ডেথ ওভারে ভীষণ কার্যকর, এ ভাবনাতেই মোস্তাফিজুর রহমানকে দলে ভিড়িয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। যে ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন বাঁহাতি পেসার, প্রায় প্রতিটিতেই ডেথ ওভারে রোহিত শর্মা বল তুলে দিয়েছেন ফিজের হাতে। যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন পাওয়ার প্লেতে তাঁকে আড়াল করে রাখতে। টানা ছয় ম্যাচে খেলিয়ে পূর্ণ আস্থার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। অন্তত ফিজের জাদু দেখা যায়নি সেভাবে। কালকের ম্যাচে তো বাদই পড়লেন।
একেবারে খুব খারাপ করছেন তা নয়। বরং কোনো ম্যাচে ১২, কোনো ম্যাচে ১০টি ডটও দিতে দেখা গেছে তাঁকে। নিজের ৬ ম্যাচে পেছন ফিরে তাকালেই ফিজ বুঝতে পারবেন, কী করা ঠিক হয়নি আর কী করতে হবে।
ম্যাচ-১
নিজেদের প্রথম ম্যাচে চেন্নাইকে ১৬৬ রানের লক্ষ্য দেয় মুম্বাই। ৩ ওভারে ২৯ রান দেওয়া মোস্তাফিজকে শেষ ওভারের বোলিং করার দায়িত্ব দেন রোহিত। চেন্নাইয়ের দরকার তখন ৭ রান। টি-টোয়েন্টিতে এই রান ‘ডিফেন্ড’ করা খুব কঠিন। তবুও মোস্তাফিজ আশা দেখালেন কেদার যাদবের বিপক্ষে পরপর তিনটি ডট বল দিয়ে। তিন বলে ৭—একেবারে সহজ সমীকরণ নিশ্চয়ই নয়। অথচ কাছে এসেই তরি ডুবেছে। মোস্তাফিজের চতুর্থ বলে শর্ট ফাইন লেগের ওপর দিয়ে এক উদ্ভাবনী শটে ছক্কা মেরে মুম্বাইয়ের সব আশা শেষ করে দিয়েছেন যাদব। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে ম্যাচটা জিতে নেয় চেন্নাই।
ম্যাচ-২
১৯৪ করেও দিল্লির বিপক্ষে জিততে পারেনি মুম্বাই। বোলারদের ব্যর্থতা অবশ্যই। ব্যর্থতা মোস্তাফিজেরও। দিল্লির ওপেনার জেসন রয় যখন একাই ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছেন, অনায়াসে জিতে যাচ্ছে দিল্লি, তখন দ্বিতীয় দফায় বল হাতে নেন মোস্তাফিজ। ১৮ ও ২০তম ওভার দুটি তাঁর জন্য রেখে দিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ১৮ বলে দিল্লির প্রয়োজন ২৪! নিজের তৃতীয় ওভারে ৭ রান দিয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন মোস্তাফিজ। ১২ বলে ১৬, তখনো আশা আছে মুম্বাইয়ের। বুমরা দিলেন মাত্র ৫ রান। শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়াল ৬ বলে ১১।
প্রথম ৩ ওভারে ১৪ রান দিয়ে ১ উইকেট পাওয়া মোস্তাফিজই বল পেলেন। প্রথম দুই বলে চার-ছক্কা হজম করে খেলাটা প্রায় শেষ করে তিনিই আবার আশা জাগালেন পরের তিন বলে টানা ডট দিয়ে। ১ বলে ১। আরেকটি ডট হলে ম্যাচ সুপার ওভারে। স্ট্রাইকিং প্রান্তে রয়। মোস্তাফিজের বলটা যে খারাপ হয়েছিল, তা নয়। একস্ট্রা কাভারে রয় উড়িয়েও মারলেন। বল অনেকক্ষণ থাকল বাতাসে। কিন্তু ক্যাচ ধরার মতো কেউ নেই। সবাই যে এক রান বাঁচাতে ভেতরের বৃত্তে!
ম্যাচ-৩
২১৩ করে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে অনায়াসে জিতল মুম্বাই। এবার আইপিএলে তাদের প্রথম জয়। দল জিতলেও মোস্তাফিজের বোলিংটা হলো খুব বাজে। ১২ বলে ৭৭—জেতার আশা বেঙ্গালুরুও ছেড়ে দিয়েছে ততক্ষণে। ১৯তম ওভারে বেঙ্গালুরুর ব্যাটসম্যানরা এমনভাবে মারতে শুরু করলেন, মোস্তাফিজ যেন নেহাত পাড়ার বোলার! বিরাট কোহলি না হয় মানা গেল, মোহাম্মদ সিরাজও তাঁকে ছক্কা মারলেন! ওভারে দিলেন ১৮ রান। মুম্বাই ৪৬ রানের বড় ব্যবধানে জিতল অথচ মোস্তাফিজকে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫০-এর ওপর রান হজম করতে হলো। ৪ ওভারে ১৩.৭৫ ইকোনমিতে ৫৫ রানে উইকেটশূন্য, এত বাজে বোলিং মোস্তাফিজ তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেই আগে কখনো করেননি।
ম্যাচ-৪
রাজস্থান রয়্যালসকে ১৬৮ রান লক্ষ্য দেয় মুম্বাই। মোস্তাফিজকে এ ম্যাচে একেবারে শেষ দিকে বোলিং করতে হয়নি। ৪ ওভারের কোটা শেষ হয়েছে ১৮তম ওভারে এসে। সেদিন কৃষ্ণাপ্পা গৌতম যে হঠাৎ দৈত্য হয়ে উঠলেন, সেটি মোস্তাফিজকে দিয়েই শুরু। নিজের শেষ ওভারে দিলেন ১৫ রান। ১৮ বলে ৪৩ রানের সমীকরণটা এক ঝটকায় নেমে এল ১২ বলে ২৮ রানে। রাজস্থান সেটি পরে পেরিয়েও গেল।
‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ হায়দরাবাদ
ডেথ বোলিংয়ে মোস্তাফিজ সফল শুধু হায়দরাবাদের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই। স্বদেশি সাকিব আল হাসান মাঠে থাকায় বাড়তি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন কি না কে জানে! ডেথ ওভারে যে ৩টি উইকেট পেয়েছেন তিনটিই হায়দরাবাদের বিপক্ষে। কিন্তু দুটি ম্যাচের কোনোটিই জিততে পারেনি তাঁর দল।
ডেথ ওভারে কেন ‘মরণ’
ইনিংসের শেষ দিকে মোস্তাফিজ এখন পর্যন্ত যে ৬ ওভার করেছেন, রান দিয়েছেন ৫৮। প্রায় ১০ ইকোনমিতে উইকেট পেয়েছেন ৩টি। ডেথ ওভারে সফল হতে হলে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনতেই হবে। বেশির ভাগ ম্যাচে মোস্তাফিজ বল অফ স্টাম্পের বাইরে রাখার চেষ্টা করছেন। মূলত একই লেংথে বল করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। গতিতেও খুব বেশি বৈচিত্র্য আনছেন না। ইয়র্কার দেখা যায়নি তেমন।
২০১৬ আইপিএলে দুর্দান্ত ইয়র্কার দিয়ে আন্দ্রে রাসেলকে যেভাবে ভূপাতিত করে বোল্ড করেছিলেন, সেই বলটা এখনো এবার দেখা যায়নি। রানের চাকা আটকে রাখতে যে ওয়াইড ইয়র্কারও কার্যকর হতে পারে, সেটিও তাঁকে দিতে দেখা যাচ্ছে কোথায়? ধারাবাহিক সফল হতে হলে কাটারের বাইরে নতুন অস্ত্র যোগ করতে হবে, বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে, সেটি মোস্তাফিজও জানেন নিশ্চয়।। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আছে বলেই হয়তো বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন না!
এবার আইপিএল এ ৬ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন টাইগার মোস্তাফিজুর রহমান। তার স্ট্রাইক রেট ২০.১ এবং ইকোনমি রেট ৮.৩৪