দেশে এক মাস আগে বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও এখনো চলছে ডেঙ্গুর উৎপাত। এডিস মশাবাহী রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬৬০ জন। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৪৭০ জনে। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১০ জনে। রোববার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে,একদিনে ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৪২ জন, ঢাকা বিভাগে ৯৭,ময়মনসিংহে ২০, চট্টগ্রামে ৫৭, খুলনায় ৭১, রাজশাহী বিভাগে ২৩, রংপুর বিভাগে ১৭, বরিশাল বিভাগে ৩২ এবং সিলেট বিভাগে ১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ বছর মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৪ হাজার ১৬৯ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৮ হাজার ৩০১ জন।
রোববার সকাল পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৬৪৬ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৬১০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ৮৫৩ জন, আর ১ হাজার ৭৫৭ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
ডেঙ্গু সংক্রমণবিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৯৭ রোগী ভর্তি হয়েছেন। ওই মাসেই সবচেয়ে বেশি ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর অক্টোবরের প্রথম ১৩ দিনে ১১ হাজার ৫৩২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের।
একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে দুজন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় একজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এডিস মশাবাহিত এ রোগ এক বছরে মৃত্যুর এই সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালে ১ হাজার ৭০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের প্রাণ নিয়েছিল ডেঙ্গু।
দেশে প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে।
এর মধ্যে ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত বছর দেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
যার মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ এবং ঢাকার বাইরে দু লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। গত বছর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন।
গত বছর ডেঙ্গুতে মারা যান এক হাজার ৭০৫ জন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বাধিক মৃত্যু।
২০১৯ সালে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ৩০০ জন মারা যান।
২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল,কিন্তু ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এ বছর মারা যান ১০৫ জন।
এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, যার মধ্যে ২৮১ জন মারা যান।
১৪ অক্টোবর ২০২৪
এজি