স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
ডুবোচরসহ নানাবিধ কারণে বিচরণক্ষেত্রের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় ইলিশ হয়তো এবারের আষাঢ়ে মেঘনায় আসছে না। জরুরি ভিত্তিতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গভীরতা ও প্রবাহ বাড়ানো না গেলে ভবিষ্যতে সংবেদনশীল ইলিশ তাদের বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করতে পারে। আর এতে মেঘনা নদীতে আর ইলিশ পাওয়া নাও যেতে পারে।– এমন কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইলিশ বিশেষজ্ঞরা জানান, এখনই হতাশার কিছু নেই। এখনো পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে এবারের ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বরে অন্যবারের চেয়ে বেশি ইলিশ আসবে। আগস্টের শেষে মেঘনায় ইলিশ দেখা যেতে পারে।
প্রায় দেড়মাস আগে মৌসুম শুরু হলেও লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। তন্নতন্ন করে খুঁজেও একনাগাড়ে ৬-৭ দিন জাল ফেলে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে শুধু জেলেরাই নয়, সারাদেশের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘এবারের আষাঢ়ে মেঘনা নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক কি কারণে এখন মেঘনা নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না তা নিয়ে তেমন চিন্তা-ভাবনা হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে সাধারণত আষাঢ়ে মেঘনা নদীতে ইলিশ আসছে না। এ নিয়ে এখন গবেষণার সময় এসেছে।’
পরিস্থিতি পর্যালোচনার আলোকে প্রধান ইলিশ গবেষক বলেন, ‘পরিস্থিতি যাই হোক, এখনই আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এবার ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর অক্টোবরে মেঘনা নদীতে অন্যবারের তুলনায় বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সংবেদনশীল ইলিশ চলে দলবদ্ধভাবে। গভীর সাগরের এই ইলিশ খাবার ও ডিম পাড়ার জন্য তারা নদীতে আসে। কিন্তু বিচরণক্ষেত্রে প্রতিকূল অবস্থা দেখলে তারা আসতে চায় না। গভীরতা, লবণাক্ততা স্বাভাবিক থাকলে এবং তাদের বিচরণ সুখকর হলেই কেবল তারা নদীর উদ্দেশে পাড়ি দেয়। তারা আসে মেঘনায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দিনে দিনে মেঘনা ইলিশের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে মেঘনার ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে বহু ডুবোচর। এতে পরিভ্রমণশীল ইলিশের বিচরণে মারাত্মক ধরনের বাধা পড়ছে। এ ছাড়া নদীর গভীরতা ও প্রবাহ হ্রাস এবং দরকারী বৃষ্টিপাতের অভাবেও ইলিশের চারণভূমি সংকুচিত হচ্ছে। উজানে বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণের ফলেও পানি প্রবাহে বাধা পেয়ে নদীতে পলি জমছে।’
ডুবোচরের সংখ্যা প্রসঙ্গে এই ইলিশ গবেষক বলেন, ঠিক কতটা ডুবোচর দেখা দিয়েছে তার কোনো হিসাব এখনো করা হয়নি। তবে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে ডুবোচরগুলো অপসারণ এবং নদীর গভীরতা ও প্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘শিল্প বর্জ্য ও কীটনাশক লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে এখনো কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলেনি। তবে ভবিষ্যতে এটিকেও ইলিশের আরামদায়ক বিচরণক্ষেত্রের জন্য বিবেচনায় নিতে হবে। বুড়িগঙ্গার শিল্প দূষণ গজারিয়া অঞ্চলে মেঘনা নদীর ইলিশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। গজারিয়ার মেঘনা নদীর ইলিশে তাই স্বাদ পাওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘কলকারখানায় ইটিপি কার্যকর করার মাধ্যমে শিল্পবর্জ্য মুক্ত রাখার মাধ্যমেই মেঘনায় ইলিশের বিচরণ আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব।’
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক হিসাব মতে প্রতি বছর কৃষি জমিতে ব্যবহৃত অন্যূন ২৫০০ থেকে ৩০০০ মেট্রিকটন ক্ষতিকর কীটনাশক মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে গিয়ে জমে। উজানের দেশগুলো থেকে আসা বর্জ্যসহ এ দেশের ভেতরের কয়েক হাজার কারখানা ও জাহাজের বর্জ্যও এ সব নদী এবং উপকূলীয় মোহনায় মিশছে। এতেও ইলিশের জলজ পরিবেশ মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়ছে।
মৎস্য অধিদফতরের জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্পের উপ-সহকারী পরিচালক মাহবুব-উল-হক চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘আষাঢ়ের শুরুতে আসার কথা থাকলেও কোনো কারণে এবার মেঘনা নদীতে ইলিশ আসতে মাসখানেক দেরি হতে পারে। তাদের আসার বিষয়তো তাদের ওপরই নির্ভর করে। ঠিক কখন তারা আসবে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।’
তবে তারা আসছে এবং আসবে। এখনই ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলেও জানান তিনি।
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ১১:৫৫ অপরাহ্ন, ২৬ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, শনিবার ১১ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি