সারাদেশ

ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চসহ ১৮ লাশ উদ্ধার

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় সন্ধ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি টেনে পানির উপরিভাগে তুলেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী জাহাজ ‘নির্ভীক’।

উদ্ধারকারী দল আরো চার শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে। এ নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টায় উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সাড়ে ৮টার দিকে লঞ্চটি টেনে তোলা হয়। এর পর লঞ্চ থেকে লাশগুলো উদ্ধার করেন নৌবাহিনীর ডুবুরিরা।

ডুবে যাওয়া লঞ্চের নয় যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের দাসেরহাট মজিদবাড়ী লঞ্চঘাট এলাকায় এমএল ঐশী লঞ্চটি ডুবে যায়।

বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বানারীপাড়া লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চটি ৪০-৫০ জন যাত্রী নিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা উজিরপুরের হাবিবপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লঞ্চটি সন্ধ্যা নদীর ভাঙনকবলিত দাসেরহাট মজিদবাড়ী ঘাটে ভেড়ে। যাত্রী ওঠানামার একপর্যায়ে নদীতীরের একটি বিরাট অংশ ভেঙে লঞ্চের ওপর পড়লে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একদিকে কাত হয়ে তীব্র স্রোতে তলিয়ে যায়।

ডুবে যাওয়ার আগমুহূর্তে লঞ্চ থেকে তীরে ওঠা যাত্রী উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ নয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, ঘাটে ভেড়ার পর মাত্র সাত-আটজন যাত্রী তীরে উঠতে পারে। এর পরই লঞ্চটি ডুবে যায়।

খবর পাওয়ার পর পরই ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ডুবে যাওয়া লঞ্চের নিখোঁজ যাত্রীদের মধ্যে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

বিআউডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান উদ্ধার হওয়া ১৪ লাশের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁরা হলেন—বানারীপাড়ার মজিবর রহমানের স্ত্রী কোহিনূর বেগম (৪০), মজিদ মাস্টারের স্ত্রী সালেহা বেগম (৬০), উজিরপুরের কেশবকাঠি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক (৭৫), বানারীপাড়ার সাঈদ আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫), প্রয়াত চান্দু মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৪৫), প্রয়াত ইসমাইল মোল্লার ছেলে মুজাম্মেল মোল্লা (৬২), রহিম হাওলাদারের স্ত্রী রেহানা বেগম (৩৫), উজিরপুরের মনীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সুখদেব মল্লিক (৩৫), বানারীপাড়ার আবুল ঘরামীর ছেলে মিলন ঘরামী (৩২), মো. সাগর মীর (১৫), উজিরপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে জয়নাল হাওলাদার (৫৫), বানারীপাড়ার আবদুল মজিদের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৫৫), উজিরপুরের সিদ্দিকুর রহমানের মেয়েশিশু শান্তা (৭) ও স্বরূপকাঠির কামাল হোসেনের স্ত্রী হিরা বেগম।

গতকাল নিখোঁজ থাকা যাত্রীদের মধ্যে ১২ জনের পরিচয় পাওয়া যায়। তারা হলো—মৃত উদ্ধার হওয়া মিলন ঘরামীর স্ত্রী খুকু মনি (২৫) ও তাঁদের সন্তান সাফওয়ান (৩), উজিরপুরের খলিল হাওলাদারের স্ত্রী হামিদা বেগম (৪০) ও তাঁর ছেলে নাফফি (৯), লাশ উদ্ধার হওয়া রেহানা বেগমের ছেলে রিয়াদ হাওলাদার (৫), বানারীপাড়ার আবদুল মজিদ হাওলাদার (৪৫), হামেদ হাওলাদারের ছেলে জাকির হাওলাদার (৪০), উজিরপুরের মনিশংকরের স্ত্রী আল্পনা রানী (২৫), বানারীপাড়ার মালেক সরদারের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), উজিরপুরের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে রাফি (৭) ও বানারীপাড়ার আলমগীর হোসেনের মেয়েশিশু মারিয়া বেগম (৩) ও সাতবাড়িয়ার খলিলুর রহমানের ছেলে জিদান (৮)।

বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. গাজী সাইফুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনকে প্রধান করে নয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:০০ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share