স্বামী বিদেশ তাই ডিভোর্স! কথাটি এক কথায় প্রকাশ করা যায় না। বর্তমান সমাজে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর এর অধিকাংশই প্রবাসী বা তাদের স্ত্রী। প্রবাসীর স্ত্রী সালমার বিরুদ্ধে এক অভিনব পদ্ধতিতে ডিভোর্স দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রবাসীর মা মাহামুদা বেগম প্রতিকার চেয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ করে আমাদের দেশের বিবাহিত অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের অপরাদের হার জ্যামেতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দুই দশক ধরে এ অপরাদ কর্মকান্ড চলে আসছে। এর শেষ কোথায় কেউ বলতে পারছে না। হাতের তুড়ি মারার মতো করে এক নিমেষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সম্পর্ক। কচু পাতার মতো ঠুনকো হয়ে পড়ছে সম্পর্কগুলো। অন্ধকার থেকে গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে সংসার নামক অপূর্ব কাঠামোটি। বর্তমানের ঘটনাগুলো এতোই বেপরোয়া যে, দুই তিন সন্তান রেখেও অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে যায় মা। ‘মা’ নাকি মায়ার সাগার। একজন মা কতটুকু পাষাণ হলে সন্তানকে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠিলে দিচ্ছে। জগত সংসারে মায়া বলতে আর কিছুই নেই।
বাংলাদেশের আয়ের অধিকাংশ আসে নাকি প্রবাসী রেমিটেন্সে। যে প্রবাসীরা মা-বাবা, সন্তান, স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন এবং দেশের মায়া ত্যাগ করে দূর প্রবাসে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্ত্রী সন্তানদের উজ্জ্বল ভষ্যিতের কথা চিন্তা করে। নিজের সমস্ত সুখ -আহলাদ বিসর্জন দিয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন প্রবাস জীবনে। তাদের জন্য কী একটুও মায়া হয়না? ভালোবাসার হয়তো হাত ফেরী হয়ে গেছে; করুনাটুকুও কী তারা পেতে পারে না? এই অসহায় প্রবাসীদের জন্য কী রাষ্ট্রের কিছুই করার নেই? তাদের এই নিরব কান্নার শেষ কোথায়? অন্যের স্বপ্ন পূরনে যে নিজের সুখ বিসর্জন দেয় তাদের জন্য করুণা নয়; রাষ্ট্রিয় সালাম প্রয়োজন।
উপরের কথাগুলোর মতো অশ্রুসিক্ত নয়নে, বার বার ভারি হয়ে আসা গলায় বেদনা বিদুর গল্পগুলো বলছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান প্রবাসী সোহেল আহম্মদ। পারিবারিকভাবেই ২০১১ সালের ২ মার্চ তার বিয়ে হয় ফরিদগঞ্জ সদরের রাড়ী বাড়ির রুহুল আমিনের মেয়ে সালমার সাথে। সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিয়ের দুই বছরের মাথায় পাড়ি জমান সুদূর দক্ষিন আফ্রিকায়। কারণ কম টাকায় চলবে না স্ত্রীর। সংসারের সুখের জন্য নাকি অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বিধিবাম, স্ত্রীর স্বপ্নের মঞ্জিলের পথে হাটতে গিয়ে নিজের পথটিই হারিয়ে বসলেন সোহেল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস-যার জন্য এতো ত্যাগ আর পরিশ্রম সেই প্রিয় মানুষটিকেই ধরে রাখতে পারলেন না। প্রবাসে পাড়ি দেয়ার পর পরই স্ত্রী সালমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
স্বামী সোহেল প্রায় সময়ই স্ত্রীকে ওয়েটিং অথবা ব্যস্ত পান। শুরু হয়ে যায় অশান্তি। এর মাঝে সোহেল একবার দেশে আসেন। আবার চলেও যান। কিন্তু অশান্তি যায়না। বিয়ের কয়েক বছর পর ধানুয়ার শাহাবুদ্ধিন নামের এক শিক্ষার্থীর সাথে সালমার প্রেম শুরু হয়। আস্তে আস্তে বিষয়টি অনেকেই যেনে যায়। ২০২০ সালের দিকে সালমার বাবা এবং ভাই ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়ে শাহাবুদ্দিনকে ধরে এনে মুসলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন। ২০১৬ সালে ফরিদগঞ্জ মার্কেন্টাইল ব্যাংকে স্ত্রী সালমাকে নিয়ে আসছিলেন ব্যাংকে হিসাব খোলার জন্য। সেখানে ব্যাংকের তৎকালিন এক স্টাফের সাথে সালমার পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে তাদের প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। এক সময় তাদের লিলা ধরে ফেলেন স্বামী সোহেল। অশান্তির মাত্র বেড়ে যায় কয়েক গুন। অনেক বুঝিয়েও সালমাকে ফিরানো যায়নি সে পথ থেকে। মাঝে একবার পবিত্র কোরআন শপথ করে বলেছিলো আর কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াবে না। কিন্তু কুকুরের লেজ যে সোজা হবার কথা না!
১০ বছরের সংসার জীবনে তাদের দু’টি সন্তানও আসে। আব্দুল্লার বয়স ১১ আর সুমাইয়ার বয়স ১০ বছর। সোহেলের চিন্তা ছিলো সন্তান হলে হয়তো সালমা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টোটি। সোহেল আরো অভিযোগ করে বলেন, সে (সালমা) বাচ্চাদের ফরিদগঞ্জে পড়াবে বলে তাদের বাড়ির পাশেই বাসা ভাড়া নেয়। এখানে স্বাধীনভাবেই সে তার কাজ চালিয়ে যায়। কয়েকদিন আগে আমার মা তাকে আনতে গেলে সে বলে- আমার সংসার করবে না। দকয়েকদিনের মাথায় নাকি আমি ডির্ভোসের কাগজ পেয়ে যাবো। ঠিকই কয়েকদিনের মাথায় কাগজ পাই। কিন্তু সেখানে তারিখ ছিলো প্রায় ছয় মাস আগের। আমার প্রশ্ন হলো, কেন এতো লুকচুরি? সে ডির্ভোসের কথা গোপন রেখে আমার সাথে কথা বলে গেছে। আমি তার একাউন্টে টাকাও পাঠাতাম নিয়মিত। সে প্রায়ই বলতো আমি নাকি শুধু শুধু সন্দেহ করতাম। ঐ ব্যাংকারের সাথে তার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তাহলে বিগত তিন মাস আগে সে কীভাবে ঐ ব্যাংকারকেই বিয়ে করে?
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালমা বলেন, প্রথম কথা হলো উনারা আমার কাছে একটি তথ্য গোপন করেছেন। আমার সাবেক স্বামীর পূর্বে একটা বিয়ে হয়েছে সে ঘরে একটি কন্যা সন্তানও আছে। যদিও তারা আমার ভগ্নিপতি বিল্লালকে বলেছিল কিন্তু সে আমাকে বলেনি। আমাকে বিয়ে করার পরও সে আগের স্ত্রীর সাথে লুকিয়ে যোগাযোগ করত। এটা নিয়ে আমাদের মাঝে ঝগড়া হতো। ডির্ভোসের বিষয়টি গোপন করলেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমার সাবেক স্বামি নিষেধ করেছে তাই।
ডির্ভোসের কথা গোপন করে তার পাঠানো টাকা কেন রিসিভ করেছেন? জানতে চাইলে সে বলে- রূপসা বাজারে পল্লী মঙ্গল সমিতি থেকে এক লাখ সত্তর হাজার টাকা তোলা হয়েছে, সে টাকা দিয়েছে। স্বামী থাকার পরও শাহাবুদ্দিন নামের ছেলেটি আপনার জীবনে আসলো কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে সালমা বলেন- সেটা আমার জীবনে একটা এ্যাকসিডেন্ট। আপনি সোহেলকে বলেছিলেন আবিরের সাথে আপনার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। এখন তাকে কীভাবে বিয়ে করলেন? এর জবাবে সে বলে- আমার বর্তমান সংসার নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না।
সালমার দাবী ৮ম শ্রেণী পড়া অবস্থায় তাকে তার পরিবার বিয়ে দেয়। যা তার পরিবার তার প্রতি জুলুম করেছে। গুরুতর অভিযোগ হলো বিয়ের এগার বছর হলেও মাত্র ২২ মাস স্বামীকে কাছে পেয়েছেন।
আমাদের সমাজের মেয়েরা চিন্তায় দ্রুত বড় হলেও মানসিকতায় বড় হতে হলে তার বয়স ১৮/২০ বছর লাগেই। অন্যথায় এরা সংসার করতে পারেনা। দু’জন এক সাথে থাকা আর সংসার করা এক জিনিস নয়। সংসার বিষয়টি ভিন্ন। যা ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটা মেয়ের বুঝার কথা নয়। বিষয়টি আমাদের অভিভাবকদের বুঝা উচিত। সংসার না টিকার অন্যতম প্রধান কারণ তরুণ বয়সে সঙ্গীকে কাছে না পাওয়া। যৌবন উন্মাদনা একটি স্বাভাকি প্রক্রিয়া। এটা যুবক-যুবতীদের থাকবেই। প্রবাসীদের বছরের পর বছর বাহিরে পড়ে থাকা তাদের স্ত্রীদের বিপথগামী করতে সহযোগিতা করছে। বিষয়গুলো নিয়ে রাষ্ট্র এবং সামাজিকভাবে ভাবার সময় এসেছে।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৪ অক্টোবর ২০২২