সারাদেশ

ডিজে নেহার টোপ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীরা

ধনী ব্যক্তিদের পকেট কাটতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীদের টোপ হিসাবে ব্যবহার করতেন ফারজানা জামান নেহা ওরফে ডিজে নেহা।

এক্ষেত্রে তার হয়ে তরুণ-তরুণীদের একটি চক্রও কাজ করত। তাদের শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ। রিমান্ডে নিজের অন্ধকার জগতের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন নেহা।

তবে তিনি সহযোগীদের নাম কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, বেপরোয়া চক্রটির লাগাম টানতে অন্যদের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে অতিরিক্ত মদপান করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলায় বৃহস্পতিবার ডিজে নেহা গ্রেফতার হন। এরপর শুক্রবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রাতের ঢাকার বার-রেস্টুরেন্টের অজানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। ডিজে নেহার প্রতিটি পার্টিতেই নতুন নতুন মুখ থাকত। তাদের অধিকাংশ ছিল বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণী।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছেন, নিজের কোনো আয় না থাকলেও নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন নেহা। সিসা পার্টি, মদ পার্টি ও অশ্লীল নাচের আয়োজনে ধনী পরিবারের সন্তানরা কোনো তরুণীকে ভালো লাগলেই তারা নেহার দ্বারস্থ হতো। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই তরুণীকে ম্যানেজের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ নেহা হাতিয়ে নিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার এ অবৈধ অর্থকড়ির খোঁজ শুরু করেছে।

চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ থাকলেও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান নেহা। দামি পোশাক ও প্রসাধনীতে নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করাই ছিল তার প্রধান হাতিয়ার। পরিবার ও স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পার্টি আয়োজন করে ধনী পরিবারের সন্তানদের দাওয়াত দিয়ে অবাধে মেলামেশার সুযোগ করে দিতেন নেহা। তরুণ-তরুণীদের একান্তে মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। এসব পার্টিতে মাদক সরবরাহ করত অবৈধ মাদক কারবারিরা।

জানা গেছে, ডিজে নেহার বাবা পুরান ঢাকার একজন মাঝারিমানের ব্যবসায়ী। আজিমপুরে বাবা বসবাস করলেও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তার মা মিরপুরে বসবাস করেন। বাবা-মায়ের দ্বন্দ্বে একরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে নেহা বেড়ে ওঠেন। স্কুলের গণ্ডিতেই তার পড়াশোনা আটকে যায়।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, রিমান্ডে নিয়ে সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ডিজে নেহার মতো আরও অনেক তরুণ-তরুণী রয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক করার সুযোগ দিয়ে তারাও অর্থ কামাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বো সুটে নেহার আয়োজিত মদের পার্টিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। পরে মোহাম্মদপুরের এক বান্ধবীর বাসায় তাকে নিয়ে অবস্থান করেন তার বন্ধু রায়হান। রাতে রায়হানের সঙ্গে ওই ছাত্রীর শারীরিক সম্পর্ক হয়।

পরদিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি তিনি মারা যান। রায়হানসহ পাঁচজনকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা মামলা করেন। এ মামলার আসামি আরাফাত বিষাক্ত মদ খেয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া রায়হান, তাফসির ও শাফায়েত জামিল গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

ঢাকা ব্যুরো চীফ,৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

Share