ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাউকে গ্রেফতার না করে আগে অভিযোগটি ওই আইনে দায়ের করা যায় কি না- তা যাচাই করে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
২১ মে শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে (বিআইসিসি) গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) ও পাবলিক প্রসিকিউটরদের (পিপি) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আপনারা যারা পিপি ও জিপি আছেন তাদের কাছে অনুরোধ যে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে যদি কোনো মামলা হয়, তাহলে দয়া করে আপনারা আগে খুঁজে বের করুন যে, এটা আদৌ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয় কি না। যদি না হয় তাহলে আপনারা সেইভাবে পদক্ষেপ নেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বসেছি এবং বলেছি আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হলে আগে সঙ্গে সঙ্গে অ্যারেস্ট করা হতো। এখন এই আইনে মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে যাতে কাউকে অ্যারেস্ট না করা হয়। তবে মামলা এস্টাবলিশ হলে বা কোর্ট যদি মনে করে যে এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে, তাহলে সেই রকম পদক্ষেপ নেবে। আর যদি মনে করে যে, না সমন জারি করলেই যথেষ্ট তাহলে সমন জারি করবে। কিন্তু তাই বলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এই আইন বাতিল প্রজেক্ট হবে- এটাও কোনোভাবে আমি সমর্থন করব না।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয়নি। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছে। এই সমস্যা হচ্ছে সাইবার ক্রাইম। আমাদেরকে এই সাইবার ক্রাইমও মোকাবিলা করতে হবে। এখন পেনাল কোডের অনেক অপরাধ আছে যেগুলো আর ফিজিক্যালি করা হয় না, কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট হওয়ার পর কিছু মিস ইউজ এবং এবিউজ যে হয়নি তা তো না। এ সময় তিনি ১৯৭৪ সালে বিশেষ নিরাপত্তা আইন করার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘তখন খাদ্যের যখন ইয়ে.. হতো মানুষ স্মাগলিং করত। তখন প্রচলতি কাস্টমস আইন ১৫৬ ধারা দিয়ে কিন্তু এই অপরাধ বন্ধ করা যাচ্ছিল না।’
তারই প্রেক্ষিতে স্পেশাল অ্যাক্ট ২৫ বি, সেকশন ১৫, সেকশন ২, সেকশন, সেকশন ১০ ডিটেনশন আইনগুলো করা হয় বলে জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখনো কিন্তু সেই স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট বেঁচে আছে। এই আইনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু আজকে একটা কেইসও ডিটেনশনের নাই। কিন্তু স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট তো আছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্দে প্রতিবাদের প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আমি জাতিসংঘের হাইকমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসলাম। তাদের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমাদের বিশেষজ্ঞদের বৈঠকের ব্যবস্থা করে এই আইনের সুন্দর চর্চা কীভাবে করা যায়- তা খুঁজে বের করতে।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে ৫৭ ধারার জন্য একটি বিশেষ সেল ছিল। ওই ধারায় কোনো মামলা হলে তা আগে সেই সেল দেখবে। এরপর সেল যদি মনে করে যে অপরাধের ধরন মামলা হওয়ার মতো, তাহলে মামলাটা হবে, না হলে হবে না।’
সরকারি কৌঁসুলিদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে জিপি এবং পিপি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ত করার কারণ ব্যাখ্যা করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা যদি ওপিনিয়ন না দিতে পারেন কাকে জিপি, পিপি করা হবে? তাহলে এমপি সাহেবকে তো কেউ পাত্তা দেবে না। তাদের সম্পৃক্ত করাতে কাজ ভালোই হচ্ছে।’
এ সময় তিনি ধর্ষণ মামলায় কোনো নারীকে চরিত্র নিয়ে জেরা করার উপধারা বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। মামলা জট নিরসন নিয়ে এ মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন জেলার পিপি ও জিপিরা সাক্ষীর অনুপস্থিতির কারণেই দেশে মামলা জট বেশি হচ্ছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের আট বিভাগের আটজন জিপি ও আটজন পিপি মামলাজট নিরসনের বিষয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।
সভায় জিপি-পিপিরা মামলাজট নিরসনে আদালতে সময়মতো সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা, আরও বিচারক নিয়োগ, আদালত সংখ্যা বাড়ানো, সময়মতো সমন জারি ও তার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, দেওয়ানি কার্যবিধির কিছু ধারা সংশোধন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও ডাক্তারের আদালতে সময়মতো উপস্থিতি, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেন।
বার্তা কক্ষ, ২১ মে ২০২২