জাতীয়

ডিগ্রি কলেজেও সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না সংসদ সদস্যরা

কোনো ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন বা নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বা মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।

রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের স্বাক্ষরের পর এ রায় প্রকাশ করা হয়।

১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ন কবির রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একজন সংসদ সদস্যকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। অপরদিকে গভর্নিং বডি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পদমর্যাদা সংসদ সদস্যের নিচের পদমর্যাদার। সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য যদি গভর্নিং বডির সভাপতি হন তাহলে কার্যত উক্ত গভর্নিং বডি একটি ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে বাধ্য।

সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হন আইন প্রণয়নের জন্য। আর তারা সার্বক্ষণিক এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম করার কাজে ন্যস্ত থাকার কথা। সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেই পরবর্তীতে মন্ত্রী ও স্পিকার নির্বাচিত করা হয়। সুতরাং একটি গভর্নিংবডির এমন ছোট পদে তার থাকা সমিচীন নয়। কারণ তিনি যদি একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন তাহলে দেশের অন্যান্য উন্নয়নমুখী কার্যক্রম ব্যাহত হবে।

রায়ে আরও বলা হয়, ‘হাইকোর্ট ও মাননীয় আপিল বিভাগের এ সংক্রান্ত আগের রায় পর্যালোচনা করে এটা কাঁচের মতো স্পষ্ট যে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বা মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের সহিত সাংঘর্ষিক’।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে সংসদ সদস্যদের অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দারকে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার আতরজান মহিলা কলেজের সভাপতি পদে মনোয়নন দেয়। উক্ত মনোনয়নের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস এম আফজালুল হক।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি ডিগ্রি কলেজের সভাপতি পদে সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন দেয়া কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারি করা হয়। পরে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল যথাযথ ঘোষণা করেন।

অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ন কবির বলেন, ইতিপূর্বে উচ্চ আদালত বেসরকারি স্কুল ও কলেজে (এইচএসসি পর্যন্ত) গভর্নিং বডির সভাপতি পদে জাতীয় সংসদ সদস্যরা থাকতে পারবে না মর্মে রায় দিয়েছেন। এখন থেকে ডিগ্রি কলেজ ও তার সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদেও সংসদ সদস্যরা থাকতে পারবেন না।

বার্তা কক্ষ, ১৬ জুলাই ২০২০

Share