চাঁদপুর জেলার প্রথম মুসলিম ডা. হিসেবে মরহুম ডা. মিনহাজ উদ্দিনের অবদানের কথা স্মরণীয়। তিনি চাঁদপুর পৌরসভার ডা. হিসেবে এ অঞ্চলে ব্যাপক জনসেবা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, যা কমবেশ চাঁদপুরবাসী সকলেরই জানা।
এমন একজন খ্যাতিমান ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত নিজ পিতার ভোগদখলীয় ভূমিতে কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মান করতে পারছেন না। ডা. মিনহাজ পরিবারের সদস্যরা জানায়, সবধরণের বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্বেও, কেনো যেনো অদৃশ্য কোনো শক্তির বল প্রোয়গে আমাদের নিজস্ব ভূমির উপর চাঁদপুর সরকারি বিশ^বিদ্যালয় কলেজ কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ করে আসছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ইং-১৯৫৫ইং সালে করিম পাটোয়ারী সড়কে (সাবেক কুমিল্লা রোডে) একখণ্ড ভূমি ক্রয় করে ভোগদখল মালিকানায় বসতি স্থাপন করে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করেছেন ডা. মিনহাজ উদ্দিন।
যা পরবর্তিতে তার ওয়ারিশগন আজও ভোগ দখল করে আসছে। সিএস মালিকানা থেকে ডাঃ মিনহাজ উদ্দিন মালিকানা লাভের পর পরবর্তিতে আরএস ১৯৫৯ সালে রেকর্ড ভুক্ত হয় তার এ ভূমি। আরএস খতিয়ান নং-৭২৭ ও ৭২৯, যাতে মোট জমির পরিমান ১৮ শতাংশ (আরএস অনুযায়ী) ।
পরবর্তিতে বাংলাদেশ সরকারের আমলে বিএস খতিয়ানে ডাঃ মিনহাজ উদ্দিনের পরিবার বিএস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হন। বিএস খতিয়ান নং-৫২৫৮ ও ৫২৫৯ বিএস দাগ নং-৪১৫৩-৪১৫৫, যাতে মোট জমির পরিমান ১৮ শতাংশ।
খাজনা-খারিজ ডাঃ মিনহজ উদ্দিনের পরিবারের নামে চাঁদপুর সদর ভূমি অফিস অত্র ভূমি খারিজ করেন, খারিজ খতিয়ান নং-১৩৭২৮। ১৯৫৩ইং সাল হতে অদ্য পযর্ন্ত ডাঃ মিনহাজ উদ্দিনের পরিবার উক্ত দাগ খতিয়ানের সরকারী সকল প্রকার কর ও খাজনা পরিশোধ করে আসছে।
ডাঃ মিনহাজ উদ্দিনের পরিবার বেশির ভাগ সদস্য বিদেশে থাকায় বাড়ীর চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মান করার প্রয়োজন অনুভব করে । সে মতে পৌরসভা হতে সীমানা প্রাচীর নির্মানের অনুমোদন লাভ করে, যার স্মারক নং- চাঁপৌস/প্রক্যে/পূর্ত/০১৪। সীমানা প্রাচীর নির্মানের লক্ষে চাঁদপুর পৌরসভা হতে গত ২৭/০৪/২০১৬ইং তারিখে সীমানা নির্ধারনের দিন ধার্য করে অধ্যক্ষ চাঁদপুর সরকারী কলেজ সহ অন্যান্য চৌহুদ্দির মালিকদের সীমানা নির্ধারনের নোটিশ দেওয়া হয় পৌরসভা হতে, যার স্মারক নং- চাঁপৌস/প্রক্যে/পূর্ত/১৬/ ফাঃনং/১০২১। কিন্তু উক্ত তারিখে চৌহুদ্দির সকল পক্ষ উপস্থিত থাকলেও অধ্যক্ষ চাঁদপুর সরকারী কলেজের পক্ষে কেউ উপস্থিত হয়নি।
পরবর্তিতে ডাঃ মিনহাজ উদ্দিনের পরিবারসহ ও এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলর বিল্লাল মাঝি, গন্যমান্য ব্যক্তিবগংসহ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষের সাথে সাক্ষাত করে ১৩/০২/২০১৭ তারিখে সীমানা নির্ধারনের দিন পূণরায় ধার্য করা হয়। সে মতে পৌরসভা হতে গত ০৫/০২/২০১৭ইং তারিখে অধ্যক্ষ চাঁদপুর সরকারী কলেজ ও চৌহদ্দির অন্যান্য মালিকদের চাঁদপুর পৌরসভা হতে নোটিশ প্রদান করা হয়, যার স্মারক নং- চাঁপৌস/প্রকৌ/পূর্ত/১৭/৬৭৩ তারিখ ০৫/০২/২০১৭ইং।
কিন্তু ১৩/০২/২০১৭ তারিখে ডাঃ মিনহাজ উদ্দিনের পরিবারসহ অন্যান্য জমির মালিকগন উপস্থিত থাকলেও বরাবরের মত অধ্যক্ষ চাঁদপুর সরকারী কলেজের পক্ষে কেউ উপস্থিত হননি। এমতাবস্থায় ডাঃ মিনহাজ উদ্দিনের পরিবার উক্ত ভূমিতে সীমানা নির্মান করতে চাইলে তাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধা প্রদান করে এবং সীমানা নির্ধারনের কাজ বন্ধ করে দেয় ।
ফলে নিরীহ ডাঃ মিনহাজ উদ্দিনের পরিবার বার বার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পরবর্তিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে আরডিসি কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ কলেজ অধ্যক্ষ বরাবরে সীমানা প্রাচীর নির্ধারনের জন্যে সার্ভেয়ার নিয়োগ করা হয়। যার স্মারক নং-০৫.৪২১.১৩০০.০১৬.১৮.০০১.১৭-৪১, তারিখ ১৬/০৩/২০১৭। উক্ত পত্রলোকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে সীমানা নির্ধারনের জন্যে সার্ভেয়ার মোস্তফা কামাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভূমি অধিগ্রহন শাখা হতে অধ্যক্ষ চাঁদপুর সরকারী কলেজ, মেয়র চাঁদপুর পৌরসভা ও জনাবা খালেদা ইয়াছমিনগনকে সীমানা নির্ধারনের জন্যে নোটিশ প্রদান করা হয়।
উক্ত নোটিশে ০৯/০৪/২০১৭ তারিখে বেলা ১০ ঘটিকায় সবাইকে উপস্থিত থেকে যৌথ জরিপে অংশগ্রহন করার জন্যে অনুরোধ করা হয় । উক্ত তারিখে বেলা ১০ ঘটিকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নোটিশ মোতাবেক পৌরসভা ও জনাবা খালেদা ইয়াছমিনের পক্ষে সার্ভেয়র উপস্থিত থাকলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতে ও অসহযোগীতায় ০৯/০৪/২০১৭ইং তারিখের যৌথ জরিপের কাজও করা সম্ভব হয়নি।
এমতাবস্থায় মরহুম ডাঃ মিনহাজ উদ্দিনের ওয়ারিশ খালেদা ইয়াছমিন গং বিষয়টি শান্তিপূর্ণ মিমাংসার জন্যে গত নভেম্বর (২০১৭ইং) মাসে মাননীয় জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল এর সাথে সরাসরি স্বাক্ষাত করেন । এ সময় জেলা প্রশাসক কলেজ অধ্যক্ষকে তাৎক্ষনিক ফোন করে বিষয়টি পরবর্তী একমাসের মধ্যে বা ডিসেম্বর ২০১৭ইং এর মধ্যে সীমানা নির্ধারনের কাজ সম্পন্ন করার জন্যে অনুরোধ করেন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ মাসুদ হোসেনকে সীমানা নির্ধারনের বিষয়টি কলেজ অধ্যক্ষের সাথে আলোচনা করে নিস্পত্তির জন্যে মৌখিক ভাবে দায়িত্ব দেন।
যার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভূমি অধিগ্রহন শাখা হতে আর.ডি.সি ফেরদৌসি বেগম স্বাক্ষরিত একটি পত্র কলেজ অধ্যক্ষকে দেওয়া হয়। পত্রের বিষয় ছিলো সীমানা নির্ধারনের জন্যে সার্ভেয়র নিয়োগ । ওই পত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহন শাখার সার্ভেয়র শহিদুল ইসলাম কে নিয়োগ করা হয়, যার স্মারক নং- ০৫.৪২১.১৩০০.০১৬.১৮.০০৫.১৭-০৬/১৭, তারিখ ০৪/০১/২০১৮ ।
এরই প্রেক্ষিতে জনাবা খালেদা ইয়াছমিন এর পক্ষে কলেজ অধ্যক্ষর সাথে যোগাযোগ করা হলেও কলেজ অধ্যক্ষ বিষয়টি নিস্পত্তির জন্যে কোন পদক্ষেপ নেননি। বরং তিনি পৌরসভার ও খালেদা ইয়াছমিনের ব্যাক্তিগত সার্ভেয়ার যখনি পৌরসভার সীমানা নির্ধারণী কাজ করার জন্যে সরজমিনে উপস্থিত হন, তখনি কলেজ অধ্যক্ষ তা বন্ধ করে দেয় এবং সীমানা পিলার তুলে পেলার জন্যে কলেজ হোস্টেল ছাত্রদের নির্দেশ দিয়ে তা তুলে পেলেন।
ওই সময়ে উপস্থিত স্থানীয় ৩ কাউন্সিলরের সামনে কলেজ অধ্যক্ষ্য প্রতিশ্রæতি দেন পরবর্তী দু’দিনের মধ্যে সীমানা নির্ধারন সম্পন্ন করবেন। পরবর্তীতে অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বিষয়টি নিস্পত্তির জনে কতিপয় কিছু অসাধু শিক্ষক জনাবা খালেদা ইয়াছমিনের কাছে নামে বে-নামে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। যা পূর্ব থেকেই মাঝে মাঝে দাবি করে আসছিলো । প্রকৃত ভূমির মালিক হিসেবে তিনি সবসময় কোন ধরনের টাকা দিতে রাজি হননি।
গত ০৪/০৫/২০১৮ইং তারিখে পৌরসভা হতে অনুমোদনকৃত প্লান অনুযায়ী যার (স্মারক নং- চাঁপৌস/প্রক্যে/পূর্ত/০১৪ তারিখ ০৯/০৭/২০১৭ইং) সকাল ১০ ঘটিকা থেকে নিজস্ব সার্ভেয়র দ্বারা সরকারি ম্যাপ অনুযায়ী পরিমাপ করে শুধু মাত্র ডা. মিনহাজ উদ্দিনের সম্পত্তিতে অস্থায়ী টিনের বেড়া দেওয়া হয়। উক্ত সম্পত্তি রক্ষনাবেক্ষন ও উন্নয়ন কাজ করার সার্থে অস্থায়ী টিনের বেড়া দেন ডা. মিনহাজ উদ্দিনের পরিবার।
উক্ত ভূমিতে বিন্দু মাত্র কলেজের সম্পত্তি নেই জানিয়ে ডা. মিনহাজ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা তাদের ভোগদখলীয় পৈত্রিক ভূমি উদ্ধারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট